পিরিয়ড এবং মুড সুইং

বর্তমানে মুড সুইং বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। অনেকে কটূক্তি করেও বলে থাকেন, ‘আরে তোমার তো মেয়েদের মতো মুড সুইং করে’ বা ‘মেয়েরা তো কিছু হলেই মুড সুইংয়ের দোহাই দেয়।’ তবে কেন হয় এই মুড সুইং অথবা মুড সুইং কী, এ ব্যাপারে অনেকেই সঠিক ধারণা রাখেন না।

প্রতীকী ছবিছবি: পেকজেলসডটকম

মুড সুইং কী?

প্রতীকী ছবি
ছবি: পেকজেলসডটকম

নারীদের একটি উচ্চসংখ্যা মুড সুইংয়ে আক্রান্ত। ধরুন, একজন নারী হাসিমুখে কথা বলতে বলতে হঠাৎ মুড খারাপ হয়ে গেল, পরক্ষণেই আবার ঠিক হয়ে গেল, এটাকেই সংক্ষেপে মুড সুইং বলে। পিরিয়ড শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে থেকে অনেক মেয়ের ক্ষেত্রেই কিছু মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়, যা খুব দ্রুত বদলাতে থাকে। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট এই সময়ে অস্বস্তি, ক্রোধ, খিটখিটে মেজাজ থেকে শুরু করে মানসিকভাবে একদম ভেঙেও পড়তে পারে মেয়েরা। এই লক্ষণগুলোকে একসঙ্গে বলা হয় প্রি–মিনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম বা পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগের সিন্ড্রোম; যা সংক্ষেপে পিএমএস নামে বেশি পরিচিত। অনেকেই আবার মুড সুইংকে ইমোশনের ‘রোলার কোস্টার’ও বলে থাকেন।

মুড সুইং কেন হয়?

পিএমএস বা মুড সুইংয়ের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা স্ত্রী হরমোনকেই দায়ী করে থাকেন। নারীদের পিরিয়ড সাইকেলকে কার্যক্রম অনুসারে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যার মধ্যে শেষ পর্যায়টিতে নারী পিএমএসে আক্রান্ত হন। এরপর শুরু হয় পিরিয়ড, অর্থাৎ নতুন সাইকেল বা চক্র। মেয়েদের শরীরে থাকা স্ত্রী হরমোনের নিঃসরণ মাসের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম পরিমাণে হয়। একটা পিরিয়ড শেষ হলে প্রধান ফিমেল হরমোন ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। ১৪-১৫ দিনের মাথায় তা পৌঁছে যায় তার সর্বোচ্চ মাত্রায়। যাকে বলে ওভল্যুশন। এরপর তরতরিয়ে কমতে থাকে ইস্ট্রোজেন নিঃসরণ। আবার পরের পিরিয়ড শুরুর পর থেকে অল্প অল্প করে নিঃসরণ বাড়ে। ইস্ট্রোজেনের এই উত্থান-পতনই মেয়েদের মানসিক অবস্থায় প্রভাব ফেলে এবং পিএমএসজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে।

প্রতীকী ছবি
ছবি: পেকজেলসডটকম

কিছু গবেষণায় বলা হয়, নারীবিশেষ হরমোনগুলো কিছু ব্রেইন কেমিক্যালকে কমিয়ে মুডের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সেরেটোনিন। এ বিষয়ে আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে চিকিৎসকেরা মনে করেন। সেরেটোনিনের মাত্রা কমে গেলে হতাশা, বিষণ্নতা, অস্থিরতা তৈরি হয়। এ ছাড়া পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে স্বাভাবিকভাবেই একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম শারীরিক বা মানসিক লক্ষণ দেখা যায়। অনেকের ক্ষেত্রেই পেটের পেশিতে টান, খেতে অনিচ্ছা, শরীরে অস্বস্তি বা মাথাধরা ইত্যাদি জানান দেয়, এবার পিরিয়ড শুরু হবে। এ জন্যও অনেকের মুড সুইং হতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন আপনার পিএমএস বা মুড সুইং হচ্ছে?

হঠাৎ রেগে যাওয়া
ছোট ছোট ব্যাপারেই হঠাৎ রেগে যাওয়া, স্বাভাবিক একটা ব্যাপার মেনে নিতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে যাওয়া মুড সুইংয়ের অন্যতম একটি লক্ষণ।

প্রতীকী ছবি
ছবি: পেকজেলসডটকম

ডিপ্রেশন বা অবসাদ
মাসের নির্দিষ্ট একটি সময়ে আপনার মন ভার হয়ে থাকলে, বিগত নানা ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে মনের অজান্তেই আপনার হতাশা সৃষ্টি হলে বুঝবেন আপনার মুড সুইং হচ্ছে। শুধু ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন নয়, সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রাও এই সময় কমে যায় বলেই, মন খারাপের এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।

কান্নাকাটি
পিএমএসের সময় এটি আরেকটি অতি সাধারণ ঘটনা। খুবই সামান্য কারণে মন খারাপ করে তা থেকে কান্না এলে এটি মুড সুইংয়ের একটি কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়।

উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি
কাজ করতে করতে হঠাৎই মনে হলো আপনাকে দিয়ে কিছুই হবে না; আত্মবিশ্বাস কমে গেল নিমেষেই। দিনের বেশির ভাগ সময়েই এই উদ্বেগ তৈরি হলে এটিও পিএমএসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ।

অবসাদগ্রস্ততা
অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, কাজে অনীহা ইত্যাদিও মুড সুইংয়ের জন্য দায়ী।

মুড সুইং বা পিএমএস থেকে যেভাবে পরিত্রাণ পেতে পারেন

মুড সুইংয়ের কোনো স্থায়ী সমাধান না থাকলেও নানাভাবে আপনি আপনার এই সমস্যাকে আয়ত্তে আনতে পারেন। যেমন:

ব্যায়াম

সকালে অথবা বিকেলে হাঁটতে বের হওয়া, বাড়িতে কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করলে এই মুড সুইং থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে পারেন। এক্সারসাইজের সময় ব্রেইন থেকে এন্ডোরফিন নামের একটি কেমিক্যাল বের হয়, যেটি আমাদের মধ্যে একধরনের সুখানুভূতি তৈরি করে এবং পিএমএসের জন্য দায়ী ক্ষতিকর হরমোনগুলোকে প্রতিহত করে।

প্রতীকী ছবি
ছবি: পেকজেলসডটকম

সঠিক খাদ্যাভ্যাস

এ সময় একটি হেলদি ফুডচার্ট মেইনটেইন করলে আপনি সুফল পেতে পারেন। এ ছাড়া এই সময়ে জাংক ফুড এবং ক্যাফেইন–জাতীয় খাবার কম খাওয়াই ভালো।
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: আপনার স্ট্রেসগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে মুড সুইংয়ের মাত্রা কম হতে পারে বলে ধারণা করা যায়।

মুড সুইং আসলে এমন একটা জিনিস, যা আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, ভিকটিম নিজেই তার মুড সুইং সম্পর্কে অবহিত না। যার প্রধান কারণ অজ্ঞত। তবে নারী-পুরুষ উভয়েরই মুড সুইং সম্পর্কে জানা উচিত। এটিকে কখনোই মেয়েদের ন্যাকামি কিংবা মানসিক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। বরং মেয়েটির প্রতি সদয় হয়ে তাকে এই সমস্যা থেকে বের করা আনার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।