কিছুদিনের জ্বর, গিঁটে গিঁটে ব্যথা। নানা ধরনের পরীক্ষা করিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হলো এএসও টাইটার। হয়তো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই আছে এটি। তাতেই আঁতকে উঠছেন—বাতজ্বর হয়েছে। তার মানে দীর্ঘদিন ধরে ইনজেকশন দিতে হবে বা ওষুধ খেয়ে যেতে হবে।
আমাদের দেশে গ্রামে বা মফস্বলে ব্যাপকভাবে এই পরীক্ষা করা হয়, পেনিসিলিন দিয়ে বাতজ্বরের চিকিৎসাও শুরু হয়। আসলে এটা ঠিক নয়। অনেক ধরনের জ্বরেই গিঁটে ব্যথা থাকতে পারে, সাধারণ ভাইরাস জ্বরেও। তবে এএসও টাইটার বাড়া মানেই বাতজ্বর, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
অনেকের মনে, এমনকি অনেক চিকিৎসকের মনেও এ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের পর এএসও টাইটার বৃদ্ধি পায়। কিন্তু শুধু এএসও টাইটার পরীক্ষা করেই বাতজ্বর নির্ণয় করা যায় না। রোগীর পূর্ব ইতিহাস, উপসর্গ ও অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি এএসও টাইটার বাতজ্বর সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে মাত্র। এটি বাতজ্বর নির্ণয়ের একটি সহায়ক পরীক্ষা মাত্র।
বাতজ্বরের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট মুখ্য ও গৌণ লক্ষণ রয়েছে। এর মধ্যে যদি একসঙ্গে দুটি মুখ্য লক্ষণ কিংবা মুখ্য লক্ষণ একটি ও গৌণ লক্ষণ দুটি পাওয়া যায়, তাহলে বাতজ্বর নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। একই সঙ্গে বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাসের প্রদাহজনিত গলাব্যথার ইতিহাসও থাকতে হবে।
মুখ্য লক্ষণ
১. হৃৎপিণ্ডের প্রদাহের ফলে জ্বর, বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হয়।
২. গিরায় ব্যথা, যা মূলত বড় গিরায় হয়। আক্রান্ত অংশটি ভালো হলেও ক্রমে অন্য গিরায় ছড়িয়ে পড়ে।
৩. ইরিথেমা মারজিনেটাম অর্থাৎ বুকে ও পিঠে বিভিন্ন আকৃতির লাল চাকা দেখা দেওয়া।
৪. হাত-পা বা শরীরের কোনো অংশ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কাঁপা।
৫. চামড়ার নিচে ছোট দানা, যেগুলো সিমের বিচির মতো আকৃতির, শক্ত ও ব্যথাযুক্ত।
গৌণ লক্ষণ
স্বল্পমাত্রার জ্বর, গিরার ব্যথা, রক্তে ইএসআর বেশি, এএসও টাইটার বেশি হওয়া।
বাতজ্বর ছাড়াও কিছু কারণে এএসও টাইটার বেশি হতে পারে। তার মানে যথাযথ উপসর্গ ও অন্যান্য প্রমাণ ছাড়া কেবল এএসও টাইটার নামের পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। নিশ্চিত হতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়|