ব্লাড ক্যানসার ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট

বিশ্বব্যাপী মরণব্যাধিগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্লাড ক্যানসার। বাংলাদেশেও এটি মৃত্যুহারের জন্য দায়ী রোগগুলোর একটি। তাই এই ক্যানসার যাতে প্রাথমিক পর্যায়েই প্রতিরোধ করা যায়, সে জন্য এর উপসর্গ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখতে হবে।

মো. শাহরিয়ার ইসলামের সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন অধ্যাপক এম এ খান ও অধ্যাপক আলমগীর কবির

বলা হয়ে থাকে, শরীরের যাবতীয় রোগের মধ্যে ব্লাড ক্যানসার খুবই মারাত্মক। তবে আশার কথা হলো, প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে জটিলতা এড়ানো যায়। একই সঙ্গে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।

এ লক্ষ্যে এসকেএফ অনকোলজি নিবেদিত ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ অনুষ্ঠানের দশম পর্বে অতিথি হিসেবে যোগ দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট, হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক এম এ খান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ও রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আলমগীর কবির। অনুষ্ঠানের আলোচ্য বিষয় ছিল ব্লাড ক্যানসার ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট। অনুষ্ঠানটি প্রথম আলোর ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন মো. শাহরিয়ার ইসলাম।

অধ্যাপক এম এ খান বলেন, রক্তকোষের ক্যানসারই হলো ব্লাড ক্যানসার; অর্থাৎ এর নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে ওঠাকেই ব্লাড ক্যানসার বলা হয়। এগুলো লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা কিংবা অণুচক্রিকা থেকে উৎপন্ন হতে পারে। ব্লাড ক্যানসারকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একটি হলো অ্যাকিউট ব্লাড ক্যানসার এবং অপরটি হলো ক্রনিক ব্লাড ক্যানসার।

এর মধ্যে অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকোমিয়ায় সাধারণত শিশুরা আক্রান্ত হয়ে থাকে। বড়দের সাধারণত মাইনর লিউকোমিয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া অনেকে আবার ক্রনিক মাইনর লিউকোমিয়া ও ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। আবার অনেক ক্যানসারের উৎপত্তি গ্ল্যান্ড থেকে হয়ে থাকে। এগুলোকে আমরা লিম্ফোমা বলে থাকি। এর অনেকগুলো ধরন রয়েছে। তা ছাড়া মাল্টিপল মাইলোমা নামক আরেক ধরনের ক্যানসার রয়েছে, যেটি সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের হয়ে থাকে। এটি শরীরের হাড়গুলোকে দুর্বল করে বা ক্ষয় করে ফেলে, এমনকি এর ফলে হাড় ভেঙেও যেতে পারে।

উল্লেখ্য, ব্লাড ক্যানসারগুলোতেই সাধারণত সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। এর কোনো একটি বা একাধিক উপসর্গ দেখা দিলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে হবে।

আমাদের দেশের রোগীরা সাধারণত রক্তশূন্যতা, জ্বর, গিঁটে ব্যথা, পেটে চাকা অনুভব, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। তবে এসব সমস্যা দেখা দিলেই যে রোগী ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত, এমনটি মনে করার কারণ নেই। অর্থাৎ অন্যান্য অসুখের কারণেও রোগীর দেহে এসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে ব্লাড ক্যানসারের উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমেই আমরা সিভিসি ও বোনম্যারো পরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকি। ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হলেও যেন বেশি দুর্বল হয়ে না পড়ে, সে জন্য ইমিউনো সিস্টেম স্ট্রং করতে হবে। তাই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে হবে।

অধ্যাপক আলমগীর কবির বলেন, ব্লাড ক্যানসারের বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শরীর ক্লান্ত বা দুর্বল অনুভূত হওয়া, অনেক সময় রোগীর ঝিমানোভাব থাকে। রক্তের শ্বেতকণিকা কম থাকার কারণে সাধারণত ইনফেকশন বেশি হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়াজনিত কিংবা ভাইরাল বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। অণুচক্রিকা কম থাকার কারণে শরীরের যেকোনো স্থান থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। ফলে রোগীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আর ব্যাকটেরিয়াল ও ভাইরাল সব ধরনের ইনফেকশনই তখন সহজে শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে। তাই এ বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

যেহেতু আমাদের দেশের উচ্চবিত্তরা হাসপাতালগুলোতে তাঁদের প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা করানোর সুযোগ পাচ্ছেন, তাই সরকারি হাসপাতালগুলোকে নন-কোভিড ট্রিটমেন্ট শতভাগ নিশ্চিত করা উচিত। এতে অল্প বা সীমিত আয়ের যেসব রোগী কষ্ট পাচ্ছেন, তাঁরা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। আর করোনা পরিস্থিতিতে আমরা সাধারণত কিছু কেমোথেরাপি একটু কমিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি।

এ ক্ষেত্রে আমরা ‘আমেরিকান সোসাইটি অব হেমাটোলজি’র নির্দেশাবলি অনুসরণ করে থাকি। আমরা রোগীর অবস্থা বুঝে থেরাপি দিয়ে থাকি এবং যেখানে সুযোগ রয়েছে, সেখানে ওরাল থেরাপির মাধ্যমেও রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো বর্তমানে আমাদের দেশেও ক্যানসারের উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। তাই উপসর্গ দেখামাত্রই দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।