মাথাব্যথা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই

এসকেএফ আয়োজিত ‘মাথা নিয়ে মাথাব্যথা’ অনুষ্ঠানের অষ্টম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ১৭ অক্টোবর। এদিন আলোচনার বিষয় ছিল মাথাব্যথা যখন বিপজ্জনক রোগের কারণ। অতিথি ছিলেন মাথাব্যথার সঙ্গে জড়িত তিনজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহেদ হায়দার চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিউরোমেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ আফতাব হালিম।  আরও ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (নাক, কান, গলা) ডা. মুহাম্মাদ ফরিদ উদ্দিন মিল্কি। আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন সুস্মিতা শ্রুতি চৌধুরী।

এসকেএফ আয়োজিত ‘মাথা নিয়ে মাথাব্যথা’ অনুষ্ঠানের অষ্টম পর্ব অনুষ্ঠিত হলো
ছবি: সংগৃহীত

ডা. মুহাম্মাদ ফরিদ উদ্দিন মিল্কি জানান, তাঁর কাছে প্রায়ই রোগীরা আসে সাইনোসাইটিসের প্রচণ্ড মাথাব্যথা নিয়ে। সাইনোসাইটিসে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। তাই কেবল মাথাব্যথার ওষুধ খেলে হয় না। যে কারণে সমস্যাটা হচ্ছে, সেটির সমাধান করতে হয়। সাইনাস ক্লিয়ারেন্স করতে হয়। এটা করলে যে কারণে অক্সিজেন সরবরাহ আবার ঠিক হয়ে যায়। নাকের সঙ্গেও মাথাব্যথার সম্পর্ক আছে। নাকের নানা সমস্যার কারণে সাইনাস ব্লক হয়ে সাইনোসাইটিস হতে পারে। ফলে মাথাব্যথা হতে পারে। একটা এক্স–রে করালেই সমস্যাটা চিহ্নিত করা যায়, ধরা পড়ে।

চলছে মাথাব্যথা নিয়ে আলোচনা
ছবি: লাইভ আলোচনার স্ক্রিনশট

মাথা ঘোরানোকে বলা হয় ভার্টিগো। এটা একটা ফলস সেনসেশন। যার কারণে মানুষ মনে করে, সে ঘুরছে অথবা তার চারপাশটা ঘুরছে। একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সেন্ট্রাল ভার্টিগো আর পেরিফেরাল ভার্টিগো। সেন্ট্রাল ভার্টিগো শতকরা ১০ থেকে ২০ শতাংশ। আর বাকিটা পেরিফেরাল ভার্টিগো। কানের কারণে সবচেয়ে বেশি হয়। কানের তিনটি অংশ। বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ আর অন্তঃকর্ণ। অন্তঃকর্ণতে খুব একটা ভার্টিগো সমস্যা নিয়ে আসে না রোগীরা। মূলত মধ্যকর্ণের সমস্যার কারণে ভার্টিগো হয়। সত্তরোর্ধ্বদের অনেকেরই কানের কারণে ভার্টিগো হয়। কানের বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। কয়েকটি টেস্ট করাতে হবে। এর লক্ষণগুলো অনেকটা স্ট্রোকের সঙ্গে মিলে যায়। ব্রেইনের সমস্যার কারণেও ভার্টিগো হয়। স্ট্রোক, টিউমার বা ইনফেকশনের কারণেও ভার্টিগো হতে পারে। এমআরআই এটার জন্য সেরা টেস্ট। কানের চিকিৎসা ও বিভিন্ন ব্যায়ামের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। এখন বাংলাদেশের ভার্টিগোর উন্নত চিকিৎসা আছে।

শাহেদ হায়দার চৌধুরী জানান, চোখের সঙ্গে মাথাব্যথার গভীর সম্পর্ক আছে। আমাদের অনেকেরই চোখে রিফ্লেক্সনজনিত ত্রুটি থাকে। সেটা মায়োপিয়া (রেটিনার সামনে প্রতিবিম্ব তৈরি হয়) হতে পারে। আবার হাইপারমেট্রোপিয়াও (রেটিনার পেছনে প্রতিবিম্ব তৈরি হয়) হতে পারে। এ ছাড়া বয়সজনিত চোখের সমস্যাও হতে পারে। ফলে দূরে বা কাছের জিনিস আমি যদি জোর করে দেখতে চাই, ফোকাস করতে চাই, তখন চোখের মাসলের ওপর চাপ পড়ে। ফলে মাথাব্যথা হতে পারে। অটো রিফ্লেক্টোমিটারের সামনে বসে চোখের ডাক্তার চশমার মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান করে দেন। আর এমনিতেই বয়স চল্লিশের বেশি হয়ে গেলে তখন চোখের সমস্যা হতে পারে। পড়তে অসুবিধা হয়। তখনো চক্ষু বিশেষজ্ঞরা চশমার মাধ্যমে সেটা কারেকশন করে দেন।

অনলাইনে অংশ নিয়েছেন এই তিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার
ছবি: সংগৃহীত

ডা. মোহাম্মাদ আফতাব হালিম জানান, তিনি সাত বছর ধরে যত রোগী দেখেছেন, তাঁদের শতকরা ৭০ ভাগ আসেন মাথাব্যথা নিয়ে। মাথাব্যথা নিজে কোনো রোগ নয়, এটা একটা রোগের লক্ষণ। মাথাব্যথা দুই প্রকার। প্রাইমারি হেডেক আর সেকেন্ডারি হেডেক। যত মাথাব্যথা আছে, এর শতকরা ৯০ ভাগ হলো প্রাইমারি হেডেক। নানা কারণে তা হয়। তবে সবচেয়ে কমন হলো টেনশন হেডেক আর মাইগ্রেন হেডেক। মাথাব্যথা হলেই ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। মাথাব্যথার মূল কারণটা আগে বের করতে হবে। সেটা চোখ, নাক বা কানের কারণে হতে পারে। এমনকি গলার কারণেও হতে পারে। ঘুম কম বা বেশি হবার কারণে হতে পারে। হতাশা, মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা থেকেও হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ থেকেও মাথাব্যথা হতে পারে। সাধারণত মাথাব্যথার সবচেয়ে কমন ওষুধ হলো প্যারাসিটামল। ওটা খেলেই কমে যায়। আর যদি না যায়, তাহলে যেকোনো একজন বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে। তিনি কারণ বের করে চিকিৎসা করবেন। যদি তাতে না হয়, তাহলে কার কাছে গেলে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যাবে, উনি সেটা বলে দেবেন। মাথাব্যথায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে একটা সাধারণ উপদেশ হলো, বয়স চল্লিশোর্ধ্ব হলেই একজন নিউরোলজিস্ট বা কার্ডিওলজিস্টকে নিয়মিত দেখানো উচিত। ছয় মাস পরপর রেগুলার চেকআপ করানো উচিত।

বিজ্ঞাপন বার্তা