মা–বাবার সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে যেন ভয়ের দেয়াল না থাকে

স্বাস্থ্যবিষয়ক চিকিৎসা পরামর্শ নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে ডিজিটাল হসপিটালের সরাসরি অনুষ্ঠান ‘ডিজিটাল হসপিটাল লাইভ: হ্যালো ডক্টর’। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। অনেকে স্বাস্থ্য বলতে কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যকেই বুঝে থাকেন। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এ আয়োজনের বিষয় ছিল ‘মানসিক স্বাস্থ্যে পরিবারের ভূমিকা’। এ বিষয়ে কথা বলতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারডেম হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সাইকোলজিস্ট ডা. ফারহানা আহমেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডা. শ্রাবণ্য তৌহিদা। এখানে সরাসরি দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন এই চিকিৎসক।

মানসিক স্বাস্থ্য কী

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউওইচও) সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাস্থ্য হলো একটা মানুষের শারীরিক, সামাজিক ও মানসিক সুস্থতা। তাই স্বাস্থ্য কেবল শারীরিক নয়, মানসিক ও তার চারপাশের পরিবেশও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্য বলতে একটা ব্যক্তি তাঁর আচরণ, চিন্তা ও আবেগ নিয়ে কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই দিকটা নির্দেশ করে। সুস্থ ব্যক্তি তার নিজের দক্ষতা উপভোগ করতে পারবে। স্বাভাবিক মানসিক চাপ সেটা মোকাবিলা করতে পারবে। সমাজেও তার অবদান রাখতে পারবে। শরীর আর মন একটা আরেকটার সঙ্গে ভীষণভাবে যুক্ত। একটা ভালো, অন্যটা মন্দ, তা হয় না। আমাদের যখন মন খারাপ হয়, সেটা শরীরের কাছে একটা বার্তা হিসেবে যায়। এর শারীরিক বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যেমন অনেকের হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে। ঘাম হতে পারে। মাথাব্যথা করতে পারে। আমাদের চিন্তা আর আবেগের সঙ্গে শরীরের সেনসেশন জড়িত। চিন্তা নেতিবাচক হলে আবেগও নেতিবাচক হয়। ভয় লাগে। অস্থিরতা লাগে। ফলে স্বাভাবিকতা বিনষ্ট হয়। তাই শরীরের যত্নের সঙ্গে সঙ্গে মনের যত্নও খুবই জরুরি।

মানসিক স্বাস্থ্যে পরিবারের ভূমিকা

একটা গাছের জন্য যেমন মূল জরুরি, মানুষের জন্য পরিবারও তাই। তাই মানুষের শিকড়ের সঙ্গে সম্পর্কটা খুবই গভীর হওয়া প্রয়োজন। আমাদের দিনের শুরুটা হয় পরিবারের সঙ্গে। তাই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো হলে দিনটা ভালো কাটার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। আবার কাজ শেষে আমরা পরিবারের কাছে ফিরে আসি। তাই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলে আমাদের মানসিকভাবে সুস্থ থাকা সহজ হয়।

‘মানসিক স্বাস্থ্যে পরিবারের ভূমিকা’ বিষয়ক আলোচনা
ছবি: সংগৃহীত

শিশুর মানসিক বিকাশে মা–বাবা


বলা হয়ে থাকে, মা সুস্থ তো সন্তান সুস্থ। সাইকিয়াট্রিস্ট পামেলা লেভিনের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম ছয় মাস বাচ্চার প্রয়োজন পূরণ না হলে পরে সেই বাচ্চা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। মানুষকে আর বিশ্বাস করতে পারে না। এর পরে ১৮ মাস পর্যন্ত বাচ্চারা যদি স্বীকৃতি, অনুপ্রেরণা (রিকগনিশন, ইন্সপিরেশন) না পায়, তাহলে সেই বাচ্চার ভেতরে উদ্বেগ আর হীনম্মন্যতা তৈরি হয়। এ রকম সাতটা স্টেজ আছে, যেখানে পরিবার ওই শিশুর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে সরাসরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসকদের কাছে এমন অনেক রোগী আসে, যাদের সমস্যার গোড়াটা ছোটবেলায় গেঁথে আছে। বাচ্চার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের নির্ভরতার সম্পর্ক থাকতে হবে। সেখানে যেন ভয়ের কোনো দেয়াল না থাকে। বাচ্চা যেন কোনো ভুল করে এসেও মা–বাবাকে নির্ভয়ে বলতে পারে। যেন আস্থার সম্পর্ক থাকে। এটা যদি সে পারে, তাহলে তার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। একটা বাচ্চার শুরুর পাঁচ বছর বলে দেয়, তার ব্যক্তিত্ব কেমন হবে।

এখন অনেক পরিবারেই মা–বাবা দুজনই কাজ করছেন। তবে যে সময় তাঁরা বাসায় থাকছেন, সেই সময়েই বাচ্চার জন্য আলাদা করে সময় রাখতে হবে। সেই সময়ে অন্য কোথাও মনোযোগ দেওয়া যাবে না। সময় দেওয়া মানেই যে অনেক সময় লাগবে এমন নয়। তবে সেই সময়টা যেন ‘কোয়ালিটি টাইম’ হয়। সেটা হলে দিনে ১৫ মিনিটও যথেষ্ট হতে পারে। জীবনে রুটিন খুবই জরুরি। সম্পর্কে সম্মান খুবই জরুরি। সেটা যে কেবল সন্তান মা–বাবাকে করবে, তা–ই নয়; মা–বাবাকেও তাঁর সন্তানকে সম্মান করতে হবে।

চলছে ‘মানসিক স্বাস্থ্যে পরিবারের ভূমিকা’ বিষয়ক আলোচনা
ছবি: সংগৃহীত

বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক বিকাশ ও মা–বাবার ভূমিকা


বয়ঃসন্ধিকালকে তুলনা করা যেতে পারে একটা ভেজা সাবানের সঙ্গে। সেটাকে আপনি শক্ত করে ধরলেও পড়ে যাবে। আবার আলগা করে ধরলেও পড়ে যাবে। একেক বয়সে সন্তানদের একেক রকম দাবি থাকে। বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনকে উদ্‌যাপন করতে হবে। গলার স্বর বদলে গেলে, পিরিয়ড হলে, মনের বদল হলে সেই সময় সন্তানের পাশে পূর্ণ সমর্থন নিয়ে থাকতে হবে। কাদের সঙ্গে মিশছে, সেটাও খুবই জরুরি। ধরুন, আপনার বাচ্চা হয়তো এমন বন্ধুদের সঙ্গে মিশছে, যাদের প্রতিদিনের হাতখরচ ৫০০ টাকা। কিন্তু আপনি আপনার সন্তানকে সেটা দিতে পারছেন না। ফলে আপনি জোর করে আপনার সন্তানকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন। এতে তার ভেতরে একধরনের রাগ, ক্ষোভ, হতাশা জন্ম নেবে। সেই সময় তাই আপনাকেই বন্ধু হয়ে যেতে হবে। সেগুলো মা–বাবাকেই সামাল দিতে হবে। সেই সময়টা বাচ্চাকে আদর করে বোঝাতে হবে। ওই শূন্যতা, ফাঁকা জায়গাটা পূরণ করতে হবে।


আপনি চাইলে আপনার মুঠোফোনে ডিজিটাল হাসপাতালের অ্যাপ নামিয়ে নিতে পারেন (ডাউনলোড) পারেন। নিবন্ধনে পাবেন এক হাজার টাকা ছাড়ের কুপন।