মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার খাবেন যে কারণে

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট ও ভিটামিন। কিন্তু এসব পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি শরীরের দরকার সঠিক পরিমাণে কিছু মিনারেল বা খনিজ পদার্থ। শরীর গঠন, বৃদ্ধি ও সার্বিক সুস্থতার জন্য এসব খাদ্য উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খনিজ উপাদান দাঁত ও হাড় মজবুত রাখে, মস্তিষ্কের স্নায়বিক সংকেত সঞ্চালনা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

যে খনিজ উপাদান অধিক পরিমাণে প্রয়োজন, সেগুলোকেই ম্যাক্রোমিনারেল বলে। যেমন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম।

ক্যালসিয়াম: আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের দৈনিক চাহিদা প্রায় ১০০০ মিলিগ্রাম। হাড় ও দাঁত মজবুত রাখা ছাড়াও নিয়ন্ত্রিত রক্তপ্রবাহ, মাংসপেশির কার্যক্রম, গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরিতে ক্যালসিয়াম কাজ করে। দুধ, দই, পনির ক্যালসিয়ামের খুব ভালো উৎস। এ ছাড়া পালংশাক, কালো ও সবুজ কচুশাক, শজনেপাতা, পুদিনাপাতা, শর্ষেশাক, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, ঢ্যাঁড়স, বাঁধাকপি, ব্রুকলির মতো বিভিন্ন সবজি এবং কমলা, ডুমুর, আঙুর, কিশমিশ, ড্রাইফ্রুট, তরমুজ, বিটরুট, সয়াবিন, তিল, কাঁচা বাদাম, আখরোট, সামুদ্রিক ও কাঁটাসহ ছোট মাছ ও চিংড়ি শুঁটকিতে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম রয়েছে। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে দাঁত-হাড়ের ক্ষয়রোগসহ মস্তিষ্কের কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

পটাশিয়াম: কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন বিপাকের জন্য পটাশিয়াম খুবই জরুরি। এটি বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজন। শুধু তা–ই নয়, এটি রক্তের পিএইচ লেভেল ও দেহের পানির ভারসাম্য ঠিক রাখে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ৩৫০০-৪৭০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের প্রয়োজন। কলা, কমলা, আঙুর, ড্রাইফ্রুট, কিশমিশ, খেজুর, পালংশাক ও ব্রুকলি, গোল সাদা আলু, মিষ্টি আলু, বিট, মাশরুম, মটরশুঁটি, শসা, রসুন, দুধ, সাদা মুলা ও লাল মাংসে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। পটাশিয়ামের অভাবে মাংসপেশি দুর্বল হতে পারে। কমে যেতে পারে প্রজননক্ষমতা।

ফসফরাস: রক্তে পিএইচের মাত্রা ঠিক রাখতে নিউক্লিক অ্যাসিড, ফসফোলিপিড ও বিভিন্ন এনজাইমের কো-ফ্যাক্টর হিসেবে দরকার ফসফরাস। শর্করা ও চর্বিজাতীয় খাবার বিপাক, দেহকোষ ও টিস্যুর ক্ষত সারানো ও রক্ষণাবেক্ষণে এটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ৮০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস। সাধারণত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার হাঁস–মুরগির মাংস, ডিম, সামুদ্রিক মাছ, বীজজাতীয় খাবার, ডাল, বাদাম, দুধ, পনির, খেজুর ইত্যাদি থেকে প্রচুর ফসফরাস পাওয়া যায়।

ম্যাগনেশিয়াম: ম্যাগনেশিয়াম অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে নতুন ধরনের প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে। ডিএনএ ও আরএনএর পুনর্গঠন, মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণ নিয়ন্ত্রণসহ রক্তের গ্লুকোজ কোষে পৌঁছাতে সাহায্য করে। বয়সভেদে ম্যাগনেশিয়ামের চাহিদা ৩০০-৪০০ মিলিগ্রামের মধ্যে হয়ে থাকে। পূর্ণশস্যজাতীয় খাবার, বাদাম, বীজজাতীয় খাবার, তফু, চর্বিযুক্ত মাছ, কলা, পালংশাক, খোসাসহ আলু ও ঢ্যাঁড়স ম্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস।