ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে যা জানা জরুরি

ম্যালেরিয়া মশাবাহিত সংক্রামক রোগ। এ রোগের মূলে রয়েছে ‘প্লাজমোডিয়াম’ গোত্রের একধরনের পরজীবী। সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল যেখানে গরম ও আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি, সেসব অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।

যেভাবে ম্যালেরিয়া ছড়ায়

অ্যানোফিলিস নামক একধরনের মশার কামড়ের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। এ ছাড়া ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত দান করে, তাহলে তার দেহেও এই জীবাণু প্রবেশ করতে পারে।

ম্যালেরিয়ার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
ছবি: প্র স্বাস্থ্য

উপসর্গ

মশার কামড়ের ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। যেসব উপসর্গ সচরাচর দেখা যায়, সেগুলো হলো—

  • কাঁপুনি দিয়ে তীব্র জ্বর

  • মাথাব্যথা

  • হাতে-পায়ে তীব্র ব্যথা

  • দুর্বলতা

  • বমি হওয়া

  • ক্ষুধামান্দ্য

সংক্রমণের মাত্রা তীব্র হলে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্ডিস, যকৃৎ ও প্লীহা বড় হওয়া, খিঁচুনি, কোমা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

যাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি

  • ৫ বছরের কম বয়সের শিশু

  • গর্ভবতী মহিলা

  • ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভ্রমণকারী বা অভিবাসী

  • যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম

জটিলতা

প্লাজমোডিয়াম গোত্রের পাঁচটি প্রজাতি থেকে মানবদেহে ম্যালেরিয়া হয়। এর মধ্যে ‘ফ্যালসিপেরাম’ সবচেয়ে মারাত্মক। এর দ্বারা সংক্রমণ হলে ‘সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া’ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সংক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায়, আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে বা খিঁচুনি হতে পারে। এ ছাড়া রক্তশূন্যতা, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়া, তীব্র শ্বাসকষ্ট, শরীরের ভেতর রক্ত জমাট বাধা, হার্ট ও কিডনি অকার্যকর হয়ে যাওয়াসহ নানাবিধ জটিলতা হতে পারে।

গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে গর্ভস্থ শিশু এবং মা উভয়েরই নানা জটিলতা হতে পারে, যেমন মায়ের গর্ভপাত, নির্ধারিত সময়ের আগে সন্তান জন্মদান, কম ওজন নিয়ে নবজাতকের জন্ম, মৃত নবজাতক প্রসব ইত্যাদি।

ম্যালেরিয়া শনাক্তকরণের উপায়

ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় থাকা অবস্থায় বা ঘুরে আসার পর কারও জ্বর হলে বা অন্যান্য উপসর্গ থাকলে, ব্লাড ফিল্ম অথবা রক্তে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।

চিকিৎসা

রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সংক্রমণের তীব্রতা আর ম্যালেরিয়ার ধরনের ওপর এই রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে। সাধারণত তীব্রতা কম হলে ম্যালেরিয়া-প্রতিকারের জন্য মুখে খাওয়ার ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করতে হয়।

প্রতিরোধ

ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি, অ্যারোসল স্প্রে, মশার কয়েল, প্রতিরোধক ক্রিম ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।

এ ছাড়া লম্বা হাতার জামাকাপড় পরা, সন্ধ্যার পূর্বে ঘরের জানালা বন্ধ রাখা, দরজা-জানালায় নেট ব্যবহার করা, বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় এবং জলাবদ্ধ জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, কোথাও যেন পানি জমে মশার বংশবিস্তার ঘটতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এ রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর টিকা এখনো বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত নয়। কাজেই অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই এ রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।

উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। ম্যালেরিয়া রোগে অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ হলো সময়মতো রোগ শনাক্ত না হওয়া এবং চিকিৎসায় বিলম্ব। সে জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে, জটিলতা সৃষ্টির আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা