যদি একটু বেশিই খাওয়া হয়ে যায়...

মিষ্টি খাবার বা পানীয়ে ক্যালরি বেশি। মডেল: মারিয়া নূর
ছবি: অধুনা

ঈদ আসছে। কোরবানির মাংস দিয়ে প্রচলিত খাবারগুলোর পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হবে অভিনব সব পদ। কেবল তা-ই নয়, ঈদের সেমাই কিংবা শেষপাতে মিষ্টান্নও থাকে, আনা হয় কোমল পানীয়ও। স্বজনদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের মন রাখতে হলেও হয়তো একটু বেশিই খাওয়া হয়ে যায়।

কয়েক দিনের টানা অতিরিক্ত খাওয়ায় কয়েক সপ্তাহ পর ওজন বেড়ে যায়, বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই ঈদেও খাওয়াদাওয়া হতে হবে পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর। তেমন পরামর্শই দিলেন ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।

রসনা বনাম ক্যালরি

  • চর্বিহীন সলিড মাংস খেতে পারেন। অবশ্য কোরবানির মাংসে কিছুটা তেল-চর্বি হয়েই থাকে। রান্নার আগে তেমন দেখা না গেলেও জ্বাল দিলে তেল বের হয়।

  • চর্বি ফেলে রান্না করুন। রান্নার পরও বাটি থেকে কিচেন টাওয়েলের সাহায্যে চর্বি সরানোর চেষ্টা করতে পারেন।

  • মগজ, পায়া, পাঁজর, মজ্জা, মাথা, মাথার হাড়, গলা, ভুঁড়িতে চর্বি বেশি। এসব অংশ না খাওয়াই ভালো। নিহারি তরল হলেও তাতে পায়ার মজ্জার চর্বি রয়েছে। তাই এটি এড়িয়ে চলুন।

  • রানের মাংস, কলিজা ও ফ্যাপসা খেতে পারেন, তবে অতিরিক্ত নয়।

  • রেজালা, মাংসের ঝুরি, কাবাব, চাপ, বারবিকিউ—এমন পদের সঙ্গে রুটি, পোলাও কিংবা ভাতও খাওয়া হয় বেশি, যাতে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই এগুলোর পরিমাণও কম রাখা উচিত। অতিরিক্ত মসলা এড়িয়ে চলাই ভালো।

  • প্রচুর সালাদ খান। লেটুসপাতা দারুণ উপকারী। সবজির পদও রাখা ভালো।

  • পর্যাপ্ত পানি খান। খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পর পানি বা পানীয় খেতে হবে। খাবার খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পর লেবুপানি বা তেঁতুলপানি খেতে পারেন। হজমে সাহায্য করবে। মাংস খাওয়ার পর ঠান্ডা পানি বা পানীয় খাওয়া উচিত নয়। লেবুপানি তৈরির জন্য হালকা গরম পানি ব্যবহার করা ভালো।

  • মিষ্টি খাবার বা পানীয়ে ক্যালরি বেশি। এগুলো কম খান। কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন। এটি হজম সহায়ক পানীয় নয়।

পর্যাপ্ত ক্যালরি খরচ করুন

কোরবানির ঈদের কাজগুলোকে অনেকে কষ্টকর মনে করলেও আসলে এতে তেমন ক্যালরি খরচ হয় না। ঈদের কদিন খেয়েদেয়ে জম্পেশ ঘুম দেন অনেকেই। কাজের চাপও নেই, শরীরচর্চার অভ্যাসও থাকে না। কিন্তু প্রত্যেকেরই উচিত, ঈদের সময়টায় প্রতিদিনই খানিকটা সময় শরীরচর্চা করা। একেবারে পার্কে গিয়ে দৌড়াতে হবে, বিষয়টা তা নয়। বাড়িতেই ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম কিংবা কিছুটা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।

ক্যালরি পোড়াতে কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করুন। ছবিতে সোনারগাঁও হোটেলের ফিটনেস প্রশিক্ষক আনোয়ার করিম
ছবি: খালেদ সরকার

বিশেষ ক্ষেত্রে

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বাড়তি সচেতনতা আবশ্যক। কোরবানির মাংস একেবারে নিষেধ নয়, তবে চর্বিযুক্ত অংশ এড়িয়ে চলাই উচিত। চর্বিহীন মাংস খাওয়া যেতে পারে, তবে সেটিও অতিরিক্ত পরিমাণে নয়। ভাত বা রুটিজাতীয় খাবারও খুব বেশি খাওয়া যাবে না। ডায়াবেটিস রোগীদের আলুও এড়িয়ে চলতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন এমন ব্যক্তির জন্য পশুর মাংস কম খাওয়াই সমীচীন। বিশেষ করে তাঁদের পর্যাপ্ত পানি এবং প্রচুর সালাদ খেতে হবে।

ঈদের খুশি ছড়িয়ে দিন

ছড়িয়ে দিন ভালোবাসা, বাড়িয়ে দিন সম্প্রীতির হাত। যতটা সম্ভব বেশি পরিমাণ খাবার পৌঁছে দিন বঞ্চিত মানুষের কাছে। পথের প্রাণীদেরও কিছু খাবার বা খাবারের উচ্ছিষ্ট দিন। মনে তৃপ্তি আসবে। আর শুধু ঈদ বা উৎসবেই নয়, বছরজুড়েই বজায় রাখুন এমন সু-অভ্যাস।