রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, বাঁচুন দীর্ঘদিন

অলংকরণ; সব্যসাচী মিস্ত্রী

উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় নীরব ঘাতক। কারণ, এটি খুব নীরবে মানবশরীরে বাসা বাঁধে। এ জন্য চাই সচেতনতা। মানুষকে উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে সচেতন করতে ১৭ অক্টোবর বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস পালন করা হয়। এ উপলক্ষেই আয়োজন করা হয় এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ের সুরক্ষা’।

ডা. নাদিয়া নিতুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন অধ্যাপক অমল কুমার চৌধুরী ও অধ্যাপক তৌফিকুর রহমান ফারুক

প্রথম পর্বের প্রতিপাদ্য—আপনার রক্তচাপ জানুন, নিয়ন্ত্রণ করুন, দীর্ঘদিন বাঁচুন। ডা. নাদিয়া নিতুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি ইউনিট প্রধান অধ্যাপক অমল কুমার চৌধুরী ও মানিকগঞ্জ জেলার কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তৌফিকুর রহমান ফারুক। অনুষ্ঠানটি ১৪ অক্টোবর প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ ছাড়াও সম্প্রচারিত হয় এসকেএফের ফেসবুক পেজ থেকে।

আলোচনার শুরুতেই অধ্যাপক ডা. অমল কুমার চৌধুরী উচ্চ রক্তচাপ কী, সে বিষয়ে দর্শকদের জানান। তিনি বলেন, যখনই কেউ রক্তচাপ মাপবে, দুটো সংখ্যা দেখতে পাবে। এই সংখ্যা দুটি দিয়েই সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ নির্ণয় করা হয়। অর্থাৎ হৃৎপিণ্ড থেকে রক্তবাহী ধমনিতে রক্তের চাপ বোঝানো হয়। যন্ত্রে আপনি দেখবেন যে আপনার রক্তচাপ দেখাচ্ছে ১২০/৮০ বা এ রকমই অন্য দুটি সংখ্যা। ওপরের সংখ্যাটি হলো সিস্টোলিক রক্তচাপ এবং নিচেরটা ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ। এ দুটি সংখ্যাই মাপা হয় মিলিমিটারে পারদ চাপের হিসাবে বা মিলিমিটার মার্কারি হিসেবে।

এ দুটি রক্তচাপই আমাদের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ সংখ্যাগুলোর দুটি বা যেকোনো একটি নিয়মিত বেশি হওয়া মানেই ধরে নিতে হবে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হচ্ছে। আবার কম হলে বুঝতে হবে যে শরীরে রক্ত চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এরপর উচ্চ রক্তচাপ কী কী কারণে হতে পারে, তা জানতে চাওয়া হয় অধ্যাপক ডা. তৌফিকুর রহমান ফারুকের কাছে। তিনি জানান, উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত দুই ধরনের হয়। প্রাইমারি হাইপারটেনশন এং সেকেন্ডারি হাইপার টেনশন। প্রাইমারি হাইপারটেনশনের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। সাধারণত বয়স্ক মানুষের এ ধরনের উচ্চ রক্তচাপ বেশি হয়ে থাকে। তবে সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। এটি হওয়ার কারণও অনেক। যেমন বংশগত। যদি মা–বাবার উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে সন্তানেরও এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ধূমপান ও মাদকাসক্তিও এর কারণ হয়ে থাকে। এজন্য ধূমপান অবশ্যই বর্জনীয়। এমনকি ধূমপায়ীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুতে হবে। তামাক পাতা, জর্দা, গুল লাগানো ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।

খাবারে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ অথবা অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার খাওয়া। যেমন ফাস্ট ফুড, লোনা মাছ, শুঁটকি মাছ ইত্যাদি বেশি খেলে এ রোগ হতে পারে। যথেষ্ট পরিমাণে কায়িক শ্রম না করলে, ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম না করলে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে। এতে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। আবার অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবারেও ওজন বাড়ে। মাংস, মাখন ও ডুবোতেলে ভাজা খাবারও উচ্চ রক্তচাপের কারণ। এর আর একটি প্রধান কারণ হচ্ছে কোলেস্টেরল। ডিমের হলুদ অংশ, কলিজা, গুর্দা, মগজ এসব খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। এ ছাড়া অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভয় এবং মানসিক চাপ দীর্ঘায়িত হলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু রোগের কারণেও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। যেমন ডায়াবেটিস, কিডনির রোগ ইত্যাদি।

অনুষ্ঠানে সরাসরি দর্শকদের উচ্চ রক্তচাপ–সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন উভয় ডাক্তার। যেখানে তাঁরা দুজনই এ রোগ থেকে বাঁচতে কিছু পরামর্শ দেন। যার মধ্যে রয়েছে জীবনযাত্রার পরিবর্তন। উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে এর বিকল্প নেই বললেই চলে। বিশেষ করে যাদের বংশগতভাবে উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। ওজন নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনোভাবেই ওজন বাড়তে দেওয়া যাবে না। খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিনের খাবার গ্রহণের সতর্কতা হতে হবে। কম চর্বি ও কম কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। কম তেলে রান্না শেষ করার পরামর্শও দেন তাঁরা। বলেন, বেশি আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা ভালো। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন হাঁটতে হবে। সম্ভব হলে দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম, লিফটে না উঠে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাসিখুশি ও প্রফুল্ল থাকতে হবে।