রমজানে ভাজাপোড়া খাওয়ার নিয়ম
রমজান মাসজুড়ে অনেকেই ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার খেতে পছন্দ করেন। রমজানে জিরোক্যাল নিবেদিত প্রথম আলো অনলাইনের বিশেষ আয়োজন ‘সুস্থ থাকুন রমজানেও’। অনুষ্ঠানের এই পর্বে ভাজাপোড়া খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন এমআইওয়াইসিএনের (মাতৃত্ব, শিশু এবং শিশুপুষ্টি) পুষ্টিবিদ তায়েবা সুলতানা।
রমজানের সময় অনেকেই খাবারের পাতে ভাজাপোড়া নানা আইটেম রাখেন। সারা দিন রোজা রাখার পর তেলেভাজা ও মসলাজাতীয় খাবার এবং বিভিন্ন ধরনের কাবাব খাওয়ার ফলে আমাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো অম্ল। এর কারণে আমাদের অনেকেরই অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়ে থাকে। মসলাজাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে রমজানের এ সময় অ্যাসিডিটির সমস্যা আরও বেড়ে যায়। যাঁরা ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত, তাঁদের জন্য রমজানে প্রতিদিন ভাজাপোড়া খাওয়া উচিত নয়। ডাক্তার ও পুষ্টিবিদ যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা রমজানের সময় রোগীসহ সবাইকে ভাজাপোড়া খাবার কম খেতে উৎসাহিত করেন। কিন্তু ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে। তাই ইফতারে তেলেভাজা খাবার যদি খেতেই হয়, তাহলে দুটি ধাপে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
প্রথমত, খাবার নির্বাচন। কীভাবে খেলে আমরা কম ক্ষতির সম্মুখীন হব। ইফতার আয়োজনে ভাজাপোড়া খাবার রাখলেও সেগুলো দিয়ে ইফতার শুরু করবেন না। প্রথমে পানি খেয়ে নেবেন। বিভিন্ন ধরনের শরবত বা একটি ডিম সেদ্ধ, সঙ্গে কয়েক টুকরা খেজুরও খেতে পারেন। সহজে হজম হয়, এমন খাবার যেমন দই-চিড়া, সবজি দিয়ে তৈরি খিচুড়ি প্রথমেই খেয়ে নিতে হবে। এরপর আমরা আমাদের পছন্দের ভাজাপোড়া খাবার খাব। তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।
দ্বিতীয়ত, আমরা অনেকেই ভাজাপোড়াসহ ইফতারের সব উপকরণ দিয়ে মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে মুড়িভর্তার মতো করি। এই খাবারটি আমাদের অনেকেরই প্রিয়। এ ধরনের খাবার প্রতিদিন না খেয়ে ভাত বা সবজি-খিচুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে খাই, তাহলেও ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কম হবে এবং অ্যাসিডিটিও কম হবে। প্রতিদিন ইফতারে অনেক ভাজাপোড়া আইটেম না রেখে একটি করে খাবার রাখতে পারি। এতে করে ইফতারে ভাজাপোড়াও খাওয়া হবে আবার সমস্যাও কম হবে। ভাজাপোড়া খাবার খেলে হজমশক্তি কমে যায়, রাতে ঘুম হয় না এবং অনেকেরই ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে এই খাবার গ্রহণ করার আগে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাঁদের ডায়াবেটিস ও কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাঁরা ইফতারে কী পরিমাণ ভাজাপোড়া খাবার খেতে পারবেন, সে বিষয়ে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
তৃতীয়ত, ইফতারের জন্য ভাজাপোড়া তৈরির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। সাধারণত ভাজাপোড়া খাবারগুলো আমরা ডুবোতেলে রান্না করি। এই রান্না করা তেল দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যাবে না। একবার ব্যবহারের পর ফেলে দিতে হবে। ভাজা উপকরণগুলো থেকে তেল শুকিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কিছু খাবার আছে ডুবোতেলে রান্না না করে অল্প তেলে রান্না করতে পারি। দোকান থেকে কিনে আনা ভাজাপোড়া খাবার না খেয়ে ওই খাবারগুলোই বাসায় বানিয়ে খেতে হবে। তাতে ভাজাপোড়া খেলেও রমজানে সুস্থ থাকা যাবে।