লোকটির দাবি, আমার স্ত্রীর সঙ্গে এখনো তাঁর সম্পর্ক আছে

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার

উত্তর দিয়েছেন মিতি সানজানা

প্রশ্ন: আমি একজন বিবাহিত পুরুষ। বিয়ের দুই বছর হয়েছে। আমার জানামতে, আমার স্ত্রী অত্যন্ত নম্র, ভদ্র। ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় একটি অপরিচিত মুঠোফোন থেকে আমার কাছে একটা ফোন আসে। কলদাতা আমার স্ত্রী সম্পর্কে অনেক মানহানিকর, অপ্রীতিকর কথাবার্তা বলে। বিয়ের আগে আমার স্ত্রীর সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক ছিল, প্রেম-ভালোবাসা ছিল ইত্যাদি। লোকটার দাবি, এখনো তার সঙ্গে আমার স্ত্রীর সম্পর্ক অটুট আছে। এখনো আমার স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে তার কথা হয়, মুঠোফোনে এসএমএসে যোগাযোগ হয়। আমি ছেলেটির সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে রাজি হয়নি। কথা হওয়ার পর থেকে ছেলেটির সেই সিম বন্ধ আছে। তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের দুজনের যে সুস্থ-স্বাভাবিক সম্পর্ক আছে, তা নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই এটা করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়। এমন অবস্থায় ওই কলদাতাকে বিচারের মুখোমুখি করতে আমার কী করা উচিত?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য অনেক ধন্যবাদ। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ, কুৎসা রটানোর মাধ্যমে তাঁর প্রতি অসম্মান প্রদর্শন আইনের চোখে অপরাধ। অপরিচিত কলদাতা আপনাকে আপনার স্ত্রী সম্পর্কে যে ধরনের অপ্রীতিকর তথ্য দিচ্ছেন, সেগুলো যদি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে থাকে, তাহলে আপনি তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারবেন।

দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪৯৯ থেকে ৫০২ ধারা পর্যন্ত মানহানি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি আরেক ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা এমন হতে পারে জেনেও উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান প্রতীকের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকাশ করেন, তাহলে তিনি ওই ব্যক্তির মানহানি করেছেন বলে ধরা হবে। তবে আইনে কিছু ব্যতিক্রমের কথাও বলা হয়েছে, যখন কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নামে মানহানিকর কিছু বললে, লিখলে বা প্রচার করলেও মানহানি হবে না।

মানহানি মামলার ক্ষেত্রে যে উপাদানগুলো দরকার তা হলো—

প্রথমত, বক্তব্যটি অবশ্যই মানহানিকর হতে হবে।

দ্বিতীয়ত, বক্তব্যটির দ্বারা কোনো ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদার ব্যাঘাত ঘটবে।

তৃতীয়ত, বক্তব্যটি বিদ্বেষমূলক হতে হবে।

অর্থাৎ মানহানি হতে হলে অবশ্যই মিথ্যা কিছু বলতে হবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে। সরল বিশ্বাসে সত্য কথা বললে সেটি কোনোমতেই মানহানি হবে না।

সাধারণত মানহানিকর বক্তব্য দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মানহানির মামলা দায়ের করতে পারে। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৮ ধারা অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে আদালতের অনুমতি নিয়ে অন্য কেউ মামলা করতে পারেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির সংজ্ঞা নির্ভর করে সামগ্রিক অবস্থার ওপর। যেমন আপনার স্ত্রীর ক্ষেত্রে চাইলে আপনি মামলা করতে পারেন। যেহেতু আপনার স্ত্রীর মানহানির ফলে আপনিও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন, তাই ১৯৮ ধারা অনুযায়ী আপনিও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং মামলা করতে পারেন।

মানহানির অভিযোগে আপনি ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় ধরনের মামলা বা মোকদ্দমা দায়ের করতে পারবেন। দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা হয়। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দেওয়ানি প্রতিকার, তাই ফৌজদারি মামলায় ক্ষতিপূরণ চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

কেউ যদি কারও বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রকাশ করেন, তখন যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রকাশ করেছেন, তিনি ফৌজদারি আদালতেও নালিশি মামলা হিসেবে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। মানহানির মামলাটি করতে হবে আদালতে অভিযোগ দায়ের করে জবানবন্দি প্রদানের মাধ্যমে। মানহানি মামলায় সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবে না। তবে সমন দিলে আদালতে হাজির না হলে সে ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৫০০ ধারা অনুযায়ী, মানহানির অপরাধের শাস্তি হচ্ছে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

আপনি মামলা করার আগে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। সেই সঙ্গে এই বিষয়ে আপনার আইনগত অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর মতামত গ্রহণ করবেন। আপনাদের জন্য শুভকামনা।

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

ই-মেইল: [email protected], ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA খামের ওপর ও ই-মেইলের subject–এ লিখুন ‘মনের বাক্স’