শীতে শিশুর ডায়ারিয়া
শীতে শিশুদের সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য সমস্যা সাধারণত বেড়ে যায়। এর সঙ্গে শীতে অনেক শিশুই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। যে কারণে সর্দি-কাশি হচ্ছে, সেই একই জীবাণু দিয়েই আবার ডায়রিয়া হতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করালে দ্রুত ডায়রিয়াজনিত পানিশূন্যতা ভালো হয়ে যায়। এই সময়ে সতর্কতা অবলম্বন করলে এ ধরনের ডায়রিয়া ঠেকানো যেতে পারে।
কী কারণে ডায়রিয়া হচ্ছে?
শীতে সাধারণত ভাইরাসজনিত ডায়রিয়াই বেশি হয়ে থাকে। রোটা ভাইরাস, এডিনো ভাইরাস, এমনকি অমিক্রন বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও ডায়রিয়া হতে পারে। ভাইরাস ছাড়াও ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট দিয়ে আক্রান্ত হয়েও ডায়রিয়া হতে পারে। তবে এ সময়, অর্থাৎ শীতে ডায়রিয়ার রোগীদের বেশির ভাগই আক্রান্ত হন রোটা ভাইরাস দিয়ে। ভাইরাসে আক্রান্ত ডায়রিয়ায় সাধারণত পাতলা পানির মতো পায়খানা হয়ে থাকে। কিছু ভাইরাস আছে, সেগুলো যেমন ঠান্ডা ঘটায়, আবার ডায়রিয়াও ঘটায়।
প্রতিকার কীভাবে?
পানিশূন্যতা পূরণ করাই হলো আসল চিকিৎসা। এই ডায়রিয়া সাধারণত ঘরোয়া যত্নেই সারানো যায়। মুখে খাওয়ার স্যালাইন দিতে হবে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর। শিশুদের ক্ষেত্রে বয়সভেদে খাবার স্যালাইন পরিমাণমতো পান করাতে হবে। মুখে খাবার জিংক দেওয়া যেতে পারে। ডায়রিয়া সেরে যেতে সাধারণত ৫-৬ দিন সময় লাগতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে বেশি সময়ও লাগে। ছয় মাসের কম বয়সীদের সাধারণত বেশি বেশি বুকের দুধ পান করালেই হয়। একটু বয়সী হলে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি ডাবের পানি, কাঁচা কলার ভর্তা বা তরকারি, চিড়ার পানি, ভাতের মাড় ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ দেওয়া উচিত নয়।
কখন হাসপাতালে নেবেন?
সাধারণ ডায়রিয়া ঘরেই সারানো যায়। কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হতে পারে। নিচের লক্ষণগুলো দেখলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
ডায়রিয়ার সঙ্গে অতিরিক্ত বমি করলে
কিছুই খেতে না পারলে
কিংবা অসাড় হয়ে পড়লে
প্রস্রাব অল্প করলে বা বন্ধ হয়ে গেলে
খিঁচুনি হলে
হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেলে।
প্রচলিত ভুল ধারণায় ক্ষতি হতে পারে
শিশুর ডায়রিয়া হলে অনেকে খাওয়াদাওয়া কমিয়ে দেন বা নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেন, যা ডায়রিয়ার সমস্যাকে তীব্র করে। অনেকে আবার ডায়রিয়া হলে বুকের দুধও বন্ধ রাখেন, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। বারবার বমি হলেও অনেকে স্যালাইন বন্ধ করে দেন, যা করা উচিত নয়। বরং বমি বন্ধ হলে বা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অল্প অল্প করে খাওয়ার স্যালাইন দিতে হবে। শিশু খাবার স্যালাইন যতটুকুই পান করুক না কেন, স্যালাইনের পুরো অংশ পরিমাণমতো পানির সঙ্গে মিশিয়ে সেই পানি বারবার পান করাতে হবে।