হাল ছেড়ো না বন্ধু

.
.
দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসার প্রতিটি দিন যেভাবে এগোয়, তার মধ্যে দৈনন্দিন কাজ, সন্তান, সংসার যেন তাকে আনন্দ দেয়, এ বিষয়টা নিশ্চিত করতে চেয়েছি। ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধে সাহস ফিরিয়ে আনাটাও যেন অনেক বড় এক যুদ্ধ।

ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার আগের-পরের সময়টুকু আমাদের জীবনকে দিন আর রাতের মতোই আলাদা করে দিয়েছিল। কখনও ঢাকা, কখনও মুম্বাই: কেমোথেরাপির পর অপারেশন এরপর আবারও কেমো। তারপর টানা রেডিও থেরাপির দীর্ঘ সময়টুকুতে দেখেছি, সংসার, সন্তান—সবকিছু আঁকড়ে ধরার যে আকুতি, তা যেন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। সে সময়গুলোতে পাশে থাকাটা খুব জরুরি। অন্তত নির্দিষ্ট একজনের, যে বন্ধুর মতো আপন হয়ে পাশে থাকবে। দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসার প্রতিটি দিন যেভাবে এগোয়, তার মধ্যে দৈনন্দিন কাজ, সন্তান, সংসার যেন তাকে আনন্দ দেয়, এ বিষয়টা নিশ্চিত করতে চেয়েছি। ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধে সাহস ফিরিয়ে আনাটাও যেন অনেক বড় এক যুদ্ধ। নিজেকে কখনো আলাদা মানুষ, অসুস্থ মানুষ মনে করে সে যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে, এ বিষয়টাও সময়ে সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। অর্থব্যয়, চিকিৎসার জন্য ছোটাছুটি, বাড়তি যত্নের কারণে নিজেকে যেন কখনো সবার বোঝা মনে না করে, সে চেষ্টা করেছি।

একটা সময় মন খুব অসহায় আর নরম হয়ে পড়ে। সকাল-বিকেল-রাত পেরিয়ে শরীরও যেন ভেঙে আসে ক্লান্তিতে। কিন্তু দীর্ঘ চিকিৎসার একপর্যায়ে চিকিৎসকের মুখ থেকে যেদিন সে জানতে পারল, তার শরীরে আর ক্যানসারের অস্তিত্ব নেই! এ খবর কতটা যে চাঙা করেছিল তাকে! সেদিন বিকেলটার কথা আজও মনে আছে; সোনালি আলোয় চারপাশটা যেন ঝলমল করছিল। সেদিন মনে হয়েছিল, কী যুদ্ধই না ছিল একটা! অনেক কষ্ট আর ক্লান্তিকর এক সার্বক্ষণিক যুদ্ধ। যে যুদ্ধে আমরা হাল ছাড়িনি দুজনেই। আজ তাই যুদ্ধ জয়ের আনন্দ। আজ তাই সন্তানদের কাছে আবারও দুজন একসঙ্গে ঘরে ফিরতে পেরেছি।