৫ মাসে যেভাবে কমেছে ২৩ কেজি

ওজন কমানোর আগে ও পরে রায়ানা

২০১১ সালে দ্বিতীয়বার সন্তান ধারণ করার পরে হঠাৎ করেই আমার ওজন অস্বাভাবিক কমে যায়। আমার উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, ওজন কমে হয়েছিল ৬৩ কেজি। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বাকালীন আমার শারীরিক নানা রকম জটিলতাও বাড়ছিল। কিন্তু ওজন বাড়ার সমস্যা তৈরি হয় সন্তান হওয়ার পর।

২০১৩ সালের দিকে আমার ওজন বেড়ে হয় ৮০ কেজি। মাঝেমধ্যে ওজন কমলেও তা ছিল সামান্য। আমি আট বছর চিটাগং গ্রামার স্কুল, ঢাকায় বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়ালে (বিআইটি) শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছি। এই সময়ে ওজন বেড়ে গেলেও সঠিক নিয়মে খাওয়া ও ব্যায়ামের প্রতি গুরুত্ব দিতে পারিনি।

২০২১ সালের মার্চ মাসে এসে আমার ওজন বেড়ে হয় ১০০ কেজি। হঠাৎ করোনা মহামারি বেড়ে যাওয়ায় ব্যায়াম করার পরিমাণ একেবারে ছিল না বললেই চলে। এ ছাড়া পুরো রমজান মাসে ইফতারির পর খাবার খেয়েছি বেশি বেশি।

এ ছাড়া হরমোনের সমস্যা, অনিয়মিত পিরিয়ড, পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা তো ছিলই। যে কারণে স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধসহ অনেক ধরনের ওষুধ খেতে হতো নিয়মিত।

ওজন কমানোর আগে রায়ানা

যা–ই হোক, আমার ওজন ১০০ কেজি হওয়ার পরেই মূলত ওজন কমানোর প্রয়োজনীয়তা বেশি অনুভব করতে শুরু করি। কারণ, ওজন বাড়ার কারণে আমার শারীরিক জটিলতাও বাড়ছিল। চিকিৎসকেরা ওজন কমানোর পরামর্শও দিচ্ছিলেন। শুরুতে নিজে নিজে ওজন কমানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সে সময়ে আমার কাছে সঠিক ও নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা ছিল না। তাই ভালো ফলাফলও পাচ্ছিলাম না।

এ বছরের মে মাসের শেষের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনেত্রী হাসিন রওশনের ফেসবুক গ্রুপ হাসিন’স টেলের কথা জানতে পারি। এই গ্রুপে ওজন কমানো নিয়ে ভিন্ন রকম পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়। ডায়েট চার্ট অনুসরণে কীভাবে ওজন কমানো যায়, তা জানা যায় এই গ্রুপ থেকে। আর এই ডায়েট তালিকা মেনেই আমি গত ৫ মাসে ২৩ কেজি ওজন কমাতে পেরেছি। বর্তমানে ১০০ থেকে আসতে পেরেছি ৭৭ কেজিতে।

হাসিন রওশন আপা নিজেও এই পদ্ধতিতে তাঁর ওজন কমিয়েছেন। অন্যদের অনুপ্রেরণা ও যথাযথ নির্দেশনা দিতেই গ্রুপটি খোলেন তিনি।

ওজন কমিয়ে এখন রায়ানা
ছবি: খালেদ সরকার

এই ডায়েট পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যের দিকে দেওয়া হয় বিশেষ গুরুত্ব। প্রয়োজনীয় সব খাবারই তালিকায় থাকে, কিন্তু তা পরিমাণমতো ও নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া হয়।

খুব বেশি খেতে ইচ্ছা যেন না হয়, তাই খাবার খাওয়ার আগে ১ চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার কুসুমগরম পানিতে মিশিয়ে খেয়ে নিই। এ ছাড়া চিয়া বীজের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে খেলেও বেশি খাওয়ার ইচ্ছা অনেকটাই কমে। তবে মাঝেমধ্যে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা বেড়ে গেলে লো ফ্যাট দুধের কফি খাই। চিনি না খেয়ে জিরোক্যাল দিয়ে নিই। এ ছাড়া ব্ল্যাক কফিও ভালো কাজ করে।

ওজন কমানোর জন্য পরিমাণ ও খাবার ধরন বুঝে খাওয়া উচিত। আমি এখন শর্করা, দুধজাতীয় খাবার, ফল ও চিনি একেবারেই খাওয়া থেকে বিরত আছি। তবে আমিষজাতীয় খাবার, সবজি, ডাবের পানি ও ডিম রাখছি খাবারের তালিকায়। আর দুধজাতীয় খাবার খেতে হলে মাঝেমধ্যে দেশি পনির খাই।

খাবারের পাশাপাশি নিয়ম মেনে ব্যায়াম ও সঠিক জীবনযাত্রা মেনে চলা জরুরি। রোববার, সোমবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে ৩০ মিনিট পার্কে হাঁটি। এরপর বাড়িতে এসে ৪০ মিনিট অ্যারোবিকস করি। এর সঙ্গে রোববার, সোমবার ও বুধবার ওয়েট ট্রেনিংও করি। শনিবার ও মঙ্গলবার বরাদ্দ রেখেছি সাঁতারের জন্য। এই দুদিন অন্য কোনো ব্যায়াম একেবারেই করি না। কিছুদিন আগে ঘুরতে গিয়েও ব্যায়াম একেবারে বাদ দিইনি। ট্রেডমিলে প্রতিদিন ৩০ মিনিট অন্তত হেঁটে নিয়মের মধ্যেই থেকেছি।

১০০ কেজি থেকে ওজন কমে ৭৭ কেজি হওয়ায় আমার শারীরিক নানা পরিবর্তন নিজেই দেখতে পারছি। জটিলতাগুলো একেবারে নেই বললেই চলে। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরেই নানা ওষুধ খেতে হয়েছে আমাকে।

আর দিন শেষে আমার মনে হয়েছে ওজন কমানো বিশেষ কোনো কঠিন কাজ নয়। এর জন্য শুধু ধৈর্য রাখা চাই। নিজেকে সংযত রাখতে পারলেই অর্ধেক কাজ হয়ে যায়।

অনুলিখন: রিফাত পারভীন