এক টাকায় কী পাওয়া যায়?

এক টাকায় কী পাওয়া যায়, সেই ভাবনার শুরুতেই চেপে বসে নস্টালজিয়া। ছোটবেলায় অনেক কিছুকেই আমার কাছে ম্যাজিক ম্যাজিক লাগত। টিভিকে ম্যাজিক লাগত, বিদ্যুৎকে ম্যাজিক লাগত, ম্যাজিক লাগত বাসার টেবিল ফ্যানটাকেও। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যেত টাকার ম্যাজিক। ছোট্ট একটা নোট বা গোল একটা কয়েন নিয়ে দোকানে গেলেই পাওয়া যেত চকলেট, চিপস বা আইসক্রিম। টাকা হাতে থাকলেই জীবনটা হয়ে যেত স্বপ্নের মতো সুন্দর।

এই তো কিছুদিন আগেই বলিউড তারকা সারা আলী খান আর ভিকি কৌশল অভিনীত একটা সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, ‘জারা হাটকে, জারা বাঁচকে’। হিট মুভি। সেখানকার একটা দৃশ্যে কঞ্জুস ভিকি কৌশল রাস্তার পাশের একটা রেস্তোরাঁয় খেয়ে এক টাকা বকশিশ রেখে যান। পরেরবার যখন খেতে আসেন, তখন ওই হোটেলের বয় সেই এক টাকা ফেরত দিয়ে অপমান করার চেষ্টা করে বলে, ‘ভাই, আগের দিন ভুল করে এই কয়েনটা ফেলে চলে গিয়েছিলেন। এই নেন, রাখেন।’

সত্যি এক টাকা যে কেন এখনো বাজারে চলছে, সেটাই অনেকের কাছে একটা প্রশ্ন!

এক টাকায় কী পাওয়া যায়, সেই ভাবনার শুরুতেই চেপে বসে নস্টালজিয়া। ছোটবেলায় অনেক কিছুকেই আমার কাছে ম্যাজিক ম্যাজিক লাগত। টিভিকে ম্যাজিক লাগত, বিদ্যুৎকে ম্যাজিক লাগত, ম্যাজিক লাগত বাসার টেবিল ফ্যানটাকেও। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যেত টাকার ম্যাজিক। ছোট্ট একটা নোট বা গোল একটা কয়েন নিয়ে দোকানে গেলেই পাওয়া যেত চকলেট, চিপস বা আইসক্রিম। টাকা হাতে থাকলেই জীবনটা হয়ে যেত স্বপ্নের মতো সুন্দর।

যে হরিণওয়ালা এক টাকার নোট আমাদের কাছে ছিল আনন্দের উৎস, এখন সেসব হয়ে গেছে বিরক্তির উপলক্ষ
ছবি: সংগৃহীত

সেই স্বপ্নের জগতে আমরা ঢুকতে পারতাম এক টাকা বা দুই টাকার একটা নোট বা কয়েন দিয়ে। এক টাকা দামের প্রাণ মিল্কক্যান্ডি বা অ্যালপেনলিবে আমাদের কাছে শুধুই একটা লজেন্স ছিল না, বরং ছিল আমাদের শৈশব। স্কুলের মাঠে ঝালমুড়ি, লাল-সবুজ বা মালাই আইসক্রিম কিনতেও এক টাকার বেশি লাগত না। ১০ টাকার একটা নোট হাতে থাকলে মনে হতো, চাইলে আমি পুরো দোকানটাই কিনে ফেলতে পারি!

আমদের এক টাকার সেই যুগ গত হয়েছে অনেক আগে। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গায় গড়িয়েছে অনেক জল, এক টাকার আনন্দ কালের বিবর্তনে এখন পরিণত হয়েছে রূপকথায়।

যে হরিণওয়ালা এক টাকা বা দোয়েলের ছবিওয়ালা দুই টাকার নোট আমাদের কাছে ছিল আনন্দের উৎস, এখন সেসব হয়ে গেছে বিরক্তির উপলক্ষ। এখন একজন ভিক্ষুককেও এক বা দুই টাকার নোট দেওয়া মানে তাঁকে অপমান করা। এমন ভাবটা করেন, যেন কত বড় অন্যায় করে ফেলেছেন তাঁদের সঙ্গে।

অবশ্য তাঁদেরই আর দোষ দিই কী করে? হু হু করে বাড়তে থাকা দুর্মূল্যের এই বাজারে এক টাকা দিয়ে আর হয়টাই–বা কী? এক টাকা বা দুই টাকা দিয়ে এখন মাঝেমধ্যে এক পিস কাঁচা মরিচও হয় না!

তাই প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক। আমাদের যে দিন গেছে, একেবারেই কি গেছে? কিছুই কি বাকি নেই আর? আসলেই কি এক টাকা একেবারেই ফেলে দেওয়ার সময় চলে এসেছে? নাকি আজও মুদিখানার দোকানে এক টাকা নিয়ে গেলে কিছু কেনা সম্ভব?

সম্ভব, এখনো এক টাকার কিছু কিনতে গেলে আপনাকে খালি হাতে ফিরে আসতে হবে না।

তালিকার শুরুর নামটাই ওই প্রাণ মিল্কক্যান্ডির। বত্রিশ বছরে কেউ কথা না রাখলেও মিল্কক্যান্ডি কথা রেখেছে। রেডিও টিভির যুগ পেরিয়ে আমরা এসে পড়েছি ফেসবুকের যুগে, আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতে ফেলেছে, শুধু ওই এক জায়গাতে আটকে থেকেছে প্রাণ মিল্কক্যান্ডি। আজও একটা মিল্কক্যান্ডি কিনতে আপনাকে এক টাকার বেশি খরচ করতে হবে না। শুধু মিল্কক্যান্ডি নয়, অ্যালপেনলিবে, মিস্টার ম্যাংগোসহ আরও কিছু ক্যান্ডিও আপনি পেয়ে যাবেন এক টাকায়।

আজও একটা মিল্কক্যান্ডি কিনতে আপনাকে এক টাকার বেশি খরচ করতে হবে না
ছবি: সংগৃহীত

ক্যান্ডি বাদেও আপনি এক টাকার মধ্যে পেয়ে যেতে পারেন মিনি শ্যাম্পু। কাপড় সেলাই করার সুইও এখন বিক্রি হয় এক টাকা পিস করে। এ ছাড়া মেয়েদের মাথার কয়েকটা ছোট ক্লিপ আর রাবার ব্যান্ডের দামও এক টাকা। এক টাকার মার্বেল বিষয়টা এখনো সত্যি। হ্যাঁ, মার্বেল খেলার সেই দুরন্ত বিকেলগুলোর দাম এখনো বাড়েনি, এক টাকা দিলে আপনি এখনো পেয়ে যেতে পারেন সুন্দর, সবুজ একটা মার্বেল।

শায়েস্তা খাঁর আমলে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত শুনে অনেকেই হাহুতাশ করেন। কল্পনাবিলাসী কেউ হয়তো ভেবে বসেন, ইশ, একটা টাইম মেশিনে চড়ে যদি সেই শায়েস্তা খাঁর আমলে চলে যেতে পারতাম! যেহেতু টাইম মেশিন আবিষ্কার হয়নি, তাই শায়েস্তা খাঁর আমলে ফেরার সুযোগও আমাদের নেই। তবে রংপুরে যাওয়ার সুযোগ আছে।

রংপুর শহরের লালবাগ বাজারে গেলেই দেখা মিলবে এক টাকার হোটেলের
ছবি: সংগৃহীত

সেই রংপুর শহরের লালবাগ বাজারে গেলেই দেখা মিলবে এক টাকার হোটেলের। এখানে আপনি শিঙাড়া বা নিমকির মতো মুখরোচক খাবার পেয়ে যাবেন মাত্র এক টাকাতেই। দুর্মূল্যের এই বাজারে এক টাকায় এত কিছু দেওয়াও কি শায়েস্তা খাঁর সেই রূপকথার চেয়ে কম অবাক করা ব্যাপার? অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র আর ডাকসুর চায়ের দামও এক টাকা। ঐতিহ্য ধরে রাখতে বাড়ানো হয়নি এই চায়ের দাম।