একই ‘স্ট্রিট ফুড’ খেয়ে কারও পেট খারাপ হয়, কারও হয় না কেন

পথের ধারের খাবার সবাই হজম করতে পারে না। মডেল: বাপ্পা শান্তনু
ছবি: সুমন ইউসুফ

চটপটি, ফুচকা, ভেলপুরি, ফল মাখা, আচার, নানা প্রকার শরবত জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড। রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া এসব খাবারে নানা জীবাণু থাকে, জানার পরও আমরা লোভ সামলাতে পারি না। কেউ কেউ এসব খাবার নিয়মিত গ্রহণ করেও দিব্যি সুস্থ্য থাকেন, আবার কেউ মাসে একবার খেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন, দেখা দেয় হজমজনিত নানা জটিলতা। এমন কেন হয়?

এর পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আমাদের হজমপ্রক্রিয়া। আমাদের পাচনতন্ত্র খাদ্য এবং তরলকে রাসায়নিক উপাদানে (কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও চর্বি) ভেঙে ফেলে, শরীর সেগুলো শক্তি এবং কোষ মেরামত করার জন্য পুষ্টি হিসেবে শোষণ করে। একটি ভালো হজমপ্রক্রিয়া বলতে বোঝায় এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে পৌষ্টিকতন্ত্র বা পাচকতন্ত্র পাচক এনজাইম তৈরি করতে পারে। এতে উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকে, সঠিকভাবে দেহে পুষ্টি শোষণ করে, প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে, অবাঞ্ছিত ও দূষিত পদার্থ দেহ থেকে দূর করে।

খাবার সঠিকভাবে হজম না হওয়ার অন্যতম কারণগুলো হলো পাকস্থলীর কোনো অসুখ, খাদ্যনালির গঠনগত কোনো ত্রুটি, মাত্রাতিরিক্ত অ্যাসিডিটি, অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্য, দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকার পর একসঙ্গে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা, হঠাৎ করে খুব বেশি খাবার নিয়ন্ত্রণ, অতিরিক্ত ঝাল খাওয়া, গভীর রাতে বা খুব ভোরে একসঙ্গে অনেক বেশি খাওয়া ইত্যাদি।

ফুটপাতে উন্মুক্ত অবস্থায় তৈরি খাবারে জীবানু বেশি থাকে। মডেল: বাপ্পা শান্তনু
ছবি: সুমন ইউসুফ

ফুটপাতে সাধারণত খাবার খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত অবস্থায় তৈরি, বিক্রি ও সাজিয়ে রাখা হয়। তাই পোকামাকড়, মাছি দ্বারা এসব খাবার দূষিত হয়। সাধারণত সস্তা, তৈলাক্ত ও ঝাল হওয়ার কারণে রাস্তার খাবারের বেশ কদর রয়েছে। এ জাতীয় খাবার খেলে মানুষ যেসব রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, আলসার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদি। ব্যক্তিভেদে এই হজমজনিত সমস্যার পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

এখন অনেকেই যে ফুটপাতের খাবার খেয়েও অসুস্থ্ হন না, তার আরেকটা বড় কারণ তাঁর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। বিশেষ করে দেখা যায়, নিম্ন আয়ের মানুষ বা শ্রমিকেরা এই খাবার খেয়ে তুলনামূলক কম অসুস্থ হন। এর কারণ, দীর্ঘদিন ধরে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা ও বছরের পর বছর অপরিচ্ছন্ন খাবার খেতে খেতে এসব জীবাণুর বিরুদ্ধে তাঁদের শরীর মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা (অ্যান্টিবডি) তৈরি করে ফেলেছে। তবে এ ধরনের মানুষদের আবার স্বাস্থ্যবানও বলা যায় না। হয়তো কোনো না কোনো পুষ্টির ঘাটতি তাঁদের থেকেই যায়।

রাস্তার খাবার কি তাহলে একেবারেই নিষেধ?

চলুন জানি কীভাবে এসব খাবার গ্রহণ করলে কিছুটা হলেও অসুস্থতা এড়ানো যায়—

চটপটি, ফুচকা ও ভেলপুরি

অনেকে বাসা থেকে অফিস বা কলেজে না খেয়েই চলে যান, তারপর টিফিন বিরতিতে বা খিদে পেলে চটপটি, ফুচকা খান। অভ্যাসটি খুবই অস্বাস্থ্যকর। খালি পেটে চটপটি, ভেলপুরি বা ফুচকা খাওয়া ঠিক নয়। চটপটিতে অনেক সোডিয়াম থাকে, তাই এর সঙ্গে আলাদা লবণ বা বিট লবণও খাবেন না।

চটপটি

চটপটির সঙ্গে শসা, টমেটো, পেঁয়াজ, লেবুর খোসা, সেদ্ধ ডিম, আলু ইত্যাদি মেশালে চটপটি পরিমাণে কিছুটা কম খাওয়া হয়। চটপটি বাটিতে না খেয়ে ছড়ানো ছোট থালায় ছোট চামচ দিয়ে অল্প নিয়ে খেলে কম খাওয়া হয়। তেঁতুলের কেনা সস দিয়ে টকপানি না বানিয়ে, ফ্রেশ তেঁতুলে ফোটানো পানি ও ঘরের মসলা দিয়ে ঘরে তৈরি তেঁতুলপানি স্বাস্থ্যকর। বাইরের বেশির ভাগ দোকানে কেনা বোতলের সস থেকে তেঁতুলপানি বানানো হয়। আর পানি ফোটানো না হলে সেটি অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে। তাই বাইরের তেঁতুল–পানি খাওয়ার আগে জেনে নিন, সেটা কীভাবে তৈরি। প্রয়োজনে তেঁতুলপানি নেবেন না।

বিভিন্ন ফল মাখা

রাস্তার পাশে আমড়া, পেয়ারা, আনারসসহ নানা ফলমাখা খেতে আমরা পছন্দ করি। ফল খেতে হলে বাড়ি থেকে এয়ারটাইট টিফিন কৌটায় ফল নিয়ে বের হন।

গোটা ফল কিনে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে খান

রাস্তা থেকে কিনতে চাইলে গোটা ফল কিনে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে খান। কাটা ফল খাওয়ার আগে দোকান দেখুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দোকান থেকেই কেনার চেষ্টা করুন। পারলে সামনে দাঁড়িয়ে ফল কাটিয়ে বিশুদ্ধ পানিতে ধুয়ে তারপর মাখিয়ে নিন। যে পাত্রে সেটা দিচ্ছে, সেটাও পরিষ্কার কি না, দেখে নিন।

নানা পানীয় বা শরবত

ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতাদের পানি, বরফ কোথা থেকে আনা হয়, তা না জেনেই আমরা সেটা পান করি। এসব শরবতে ব্যবহার করা বিট লবণও নিরাপদ নয়। তৃষ্ণা নিবারণে অসচেতনতা থেকে বিভিন্ন ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছি আমরা। তেষ্টা পেলে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। সে পানি হতে পারে লেবুর শরবত। উচ্চ রক্তচাপ না থাকলে খাবার স্যালাইনও পান করা যায়। রাস্তার পাশের এসব পানীয়র চেয়ে ডাবের পানি নিরাপদ।