আদর নিতে বিশেষ এক আহ্লাদী ভঙ্গিতে মাথাটা বাড়িয়ে দেয় ফুলঝুরি (পোষা বিড়াল)। কপালে কয়েকবার চুমো এঁকে দিলে তবেই তার প্রশান্তি। বাড়ির সবার প্রিয় এই চারপেয়ে সদস্যটির আদুরে স্বভাবের ছোট্ট এক উদাহরণ দিয়েই শুরু করলাম। বিড়াল যে আদুরে প্রাণী, তা কে না জানে? আবার বিড়ালের স্বভাবের মজার মজার দিক ‘আবিষ্কার’ করে আনন্দও পান বাড়ির বাকি সদস্যরা। একেকটি বিড়ালের বৈশিষ্ট্য একেক রকম। কেউ আলসে, কেউ ছটফটে; কেউ আপনার কথার জবাবে নানা ‘কথা’ বলে, কেউ থাকে চুপচাপ।
বিড়াল কেন উঁচুতে ওঠে
এই তো সেদিন ফুলঝুরি তার চারপেয়ে বন্ধু নক্ষত্রের সঙ্গে বসে ছিল আলমারির ওপর। উঁচু শোকেস বা ফ্রিজের ওপরও দেখা যায় বিড়ালদের। আসলে উঁচু জায়গা বেশ পছন্দ করে বিড়াল। ওপরে থাকলে সে নিজেকে নিরাপদ অনুভব করে। ওপর থেকে ‘দুনিয়া’ টাকে দেখতে ভালোবাসে।
বিড়াল প্রজাতীর (ক্যাট ফ্যামিলি) বন্য প্রজাতির সদস্যরা উঁচু গাছের পাতার আড়ালে ছদ্ম-আবরণ অর্থাৎ ক্যামোফ্লেজ সুবিধা পায়। বিপজ্জনক কিছু এগিয়ে আসছে কি না, সেদিকে রাখতে পারে তীক্ষ্ণ নজর। ওপরে থাকলে শিকারের ওপর হামলা করতেও সুবিধা। জিনগত কারণে এই ওপরে থাকার স্বভাবটাই আছে বিড়ালের মনজুড়ে।
আলমারির পাশে কিছু বাক্স রেখে দিতে পারেন, যাতে লাফিয়ে বিড়াল আলমারির ওপরে উঠতে পারে। বিড়ালের উপযোগী মইও রাখতে পারেন।
ধাপে ধাপে ওঠার জন্য কৃত্রিম গাছ কিনতে বা বানাতে পারেন। এই গাছের ‘শাখা-প্রশাখা’য় বসতে পারবে বিড়াল। একদম ওপরে ঘুমানোর প্ল্যাটফর্মও থাকে এসব গাছে।
শিকার নিয়ে ছুটে আসে কেন
ইঁদুর, টিকটিকি বা পোকামাকড় শিকার করতে ভালোবাসে বিড়াল। শিকার করা এসব প্রাণীকে আপনার জন্য ‘উপহার’ হিসেবে নিয়ে এলে ভয় পাবেন না, রাগও করবেন না। এমনটা করলে বুঝতে হবে, আপনাকে সে নিজের পরিবারের একজন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। নিজের দক্ষতা আপনাকে দেখিয়ে পরিতৃপ্তি পাচ্ছে।
তবে বহুতল ভবনের বিড়াল শিকার করতে গিয়ে আচমকা লাফিয়ে পড়ে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এমন ভবনের বারান্দা, জানালায় নেট লাগানো আবশ্যক। এসব ভবনের ছাদ বা সিঁড়িঘরেও বিড়ালকে যেতে না দেওয়াই ভালো।
শিকারের বাসনা তবে পূরণ করবে কী করে? নানা ধরনের খেলনা কিনে দিন বিড়ালকে (খেলনা ইঁদুর বা লোমশ কিছু)। সেগুলো দিয়েই তার শিকারের বাসনা পূরণ হবে।
কেন বক্সে ঢুকতে ভালোবাসে
শিকারি বন্য বিড়াল গাছে বা গুহায় লুকিয়ে শিকারের জন্য ওত পেতে থাকে। ঘরের বিড়ালও তাই বাক্সে লুকিয়ে থাকতে ভালোবাসে। শীতল আবহাওয়ায় পোষা বিড়াল উষ্ণ থাকতে পারবে, একটি আরামদায়ক কার্টনের বাক্সে। কার্ডবোর্ডের দু–একটি বাক্সে ছোট ছোট ছিদ্র করেও দিতে পারেন, যা দিয়ে ‘হাত’ বাড়াতে পারবে সে। ছিদ্রের সামনে কিছু একটা ঝুলিয়ে দিলে হাত বাড়িয়ে সেটা দিয়ে খেলতে পারে বিড়াল।
প্রবাহিত পানি ভালোবাসে কেন
বিড়ালের জন্য রাখা পাত্র থেকে পানি খেতে পছন্দ না-ও করতে পারে সে। পানির ওপর ময়লার আস্তর পড়তে পারে কয়েক ঘণ্টায়ই। পাত্র থেকে পানি খেতে গিয়ে পাত্রের কিনারায় বা পানিতে গোঁফ ঠেকে অস্বস্তিও হতে পারে তার। কিন্তু কলের প্রবাহমান পানি টাটকা, পরিষ্কার, তুলনামূলক বেশি অক্সিজেনসমৃদ্ধ; এর স্বাদটা আলাদা।
ধীরগতিতে ছেড়ে রাখা কলের পানি মুখ বাড়িয়ে খেতে তাই ভালোবাসে অনেক বিড়াল। তবে সব বিড়ালই এমন নয়। তাই বিড়ালের পাত্রের পানি ঘন ঘন বদলে দিন।
সূত্র: রিডার’স ডাইজেস্ট