টয়লেট পেপার কেন ফ্রিজে রাখতে হবে

সম্প্রতি পশ্চিমা বিশ্বসহ দুনিয়ার নানা প্রান্তের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা পরামর্শ দিচ্ছেন। পরামর্শটা হলো, ফ্রিজে বেকিং সোডার বদলে এক রোল টয়লেট পেপার রাখুন। প্রশ্ন উঠেছে, এই পরামর্শের মানে কী? আর এই অদ্ভুত কৌশল কি আদতেই কোনো কাজের?

গত বছর বা এর কাছাকাছি সময় থেকে টিকটক ও ফেসবুকের বিভিন্ন ভিডিওতে ফ্রিজে টয়লেট পেপার রাখার নমুনা দেখা গেছেছবি: সংগৃহীত

ইংল্যান্ডভিত্তিক খাবারদাবারবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘অনেস্ট ফুড টক’-এর সম্পাদক রুইজ আস্রি বলেন, এই কৌশলের পেছনে আছে টয়লেট পেপারের শোষণক্ষমতা। ফ্রিজের আর্দ্রতা প্রায়ই ছত্রাক ও দুর্গন্ধ সৃষ্টির কারণ। টয়লেট পেপার অতিরিক্ত আর্দ্রতা শুষে নেয় এবং কটু গন্ধ দূর করে।
ফ্রিজে টয়লেট পেপার রাখার চল ঠিক কবে শুরু হয়েছিল, তার কোনো লেখাজোখা নেই, তবে ২০১৫ সালেই এই তত্ত্বের কথা শোনা যায়। কিন্তু শুধু দুর্গন্ধ শোষক হিসেবে টয়লেট পেপারের ব্যবহার সাম্প্রতিক। প্রাথমিকভাবে গত বছর বা এর কাছাকাছি সময় থেকে টিকটক ও ফেসবুকের বিভিন্ন ভিডিওতে এর প্রচলনের নমুনা দেখা যেতে থাকে।

এটা কি সত্যিই কার্যকর

এই পদ্ধতি কিছুটা কার্যকর। টয়লেট পেপার দুর্গন্ধ শোষণ করে ঠিকই, তবে আরও কিছু পদ্ধতি আছে, যা বেশি কার্যকর। টয়লেট পেপার পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, এমন একজন হলেন এমি। তিনি ‘এমি অ্যান্ড রোজ’ নামে প্যারেন্টিং ব্লগের ব্লগার। এমি জানান, তাঁর ফ্রিজ থেকে আঁশটে গন্ধ বের হচ্ছিল। তাঁর মেয়ে তাঁকে টয়লেট পেপার পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়। তাতে কি কাজ হয়েছে? এমির উত্তর, ‘হ্যাঁ, কিছুটা কাজ হয়েছে।’
অর্থাৎ এটি আসলে অস্থায়ী সমাধান। অবশ্যই টয়লেট পেপারের বিকল্প আরও অনেক দুর্গন্ধ বিনাশকারী উপাদান আছে। জেনে নিন তেমনই কিছু বিকল্প সমাধান—

বেকিং সোডা
ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে উন্নত বিশ্বে সত্তরের দশকে একটি বহুল প্রচলিত সমাধান ছিল বেকিং সোডা। বেকিং সোডা ক্ষারীয় উপাদান। অর্থাৎ এটি অ্যাসিড নিষ্ক্রিয় করে। বেশির ভাগ দুর্গন্ধই যেহেতু অ্যাসিডিক, সেহেতু বেকিং সোডা দুর্গন্ধ নির্মূল করে উৎস থেকে। ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে ব্যবহৃত বেকিং সোডা কিন্তু খাবার তৈরিতে ব্যবহার করবেন না! কারণ, দুর্গন্ধনাশে ব্যবহৃত বেকিং সোডা দিয়ে কেক বানালে নিষ্ক্রিয় অ্যাসিডগুলো আবার সক্রিয় হয়ে আপনার কেকটিকে দূষিত করে ফেলতে পারে!

কালিজিরার তেল
কালিজিরার তেলে আছে বিশেষ এক ক্ষমতা। মিথাইল মারক্যাপট্যান একটি রাসায়নিক পদার্থ, যা দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। আর কালিজিরার তেল ওই মিথাইল মারক্যাপট্যান নাশ করে। ৫ ফোঁটা কালিজিরার তেলের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ ডিশ সোপ মিশিয়ে মিশ্রণটির পুরু প্রলেপ লাগান ফ্রিজের ভেতরের প্লাস্টিকের বিভিন্ন অংশে। প্রলেপটি দুই ঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেললে ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর হবে।

ভ্যানিলার নির্যাস
খানিকটা তুলা ভ্যানিলা এক্সট্র্যাক্টে ভিজিয়ে ফ্রিজের ভেতরে রাখুন। এটি দুর্গন্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করে আপনার ফ্রিজে এনে দেবে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ। বিশেষ করে যাঁরা ভ্যানিলা বা বেকারির ঘ্রাণ পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য এটি হতে পারে দারুণ সমাধান।

কোঁচকানো খবরের কাগজ ও কয়লার গুঁড়া
কম খরচে ফ্রিজটাকে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে চাইলে বেছে নিন কোঁচকানো খবরের কাগজ ও কয়লার গুঁড়া। দুর্গন্ধময় ফ্রিজ ভর্তি করে রাখুন কয়লার গুঁড়া ও কোঁচকানো খবরের কাগজ দিয়ে। এক সপ্তাহ ধরে রোজ খবরের কাগজগুলো বদলাতে হবে। খানিকটা সময় লাগলেও এতে কাজ হয়।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট