অভিভাবক হিসেবে আপনি ইতিবাচক তো?

সন্তানের প্রতি বাবা–মায়ের ইতিবাচক মনোভাব তাকে সঠিক পথে রাখতে সাহায্য করে
ছবি: অধুনা

বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের বন্ধন হয় ভীষণ মায়ায় জড়ানো। জীবনের কোনো না কোনো বাঁকে আবেগের চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়তো এই একটি সম্পর্কের ক্ষেত্রেই দিতে হয় আমাদের। আজকাল অনেককেই অভিযোগ করতে শোনা যায়, এই প্রজন্ম আবেগের মূল্য দিতে জানে না; উল্টো দিকে বাবা-মাকে আবেগীয় দিক থেকে প্রবঞ্চিত করে নিজেদের শখ-আহ্লাদ পূরণ করে নেয় তারা। বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ কিন্তু বলছে, অভিযোগটা বেশ একপেশে। অভিভাবকদের দিক থেকে করার আছে অনেক কিছু। তবে সন্তানের মধ্যে একগুঁয়েমি বা স্বার্থপর মানসিকতা গড়ে ওঠার বহু আগে থেকেই অভিভাবকদের ইতিবাচক হয়ে উঠতে হবে।

শুরুর আগে শুরু যেথায়

সন্তান মায়ের গর্ভে আসার আগেই মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে হবু বাবা-মাকে। ছেলে হবে নাকি মেয়ে, সে বড় হলে ডাক্তার হবে নাকি ইঞ্জিনিয়ার—এসব ভাবনার আগে নিজেদের মধ্যে এই বোধ তৈরি করতে হবে, একজন ভালো ‘মানুষ’-এর মা-বাবা হতে চান আপনারা।

খাওয়া নিয়ে জবরদস্তি নয়

ছয় মাস মায়ের দুধ ছাড়া আর কিছু দেওয়া যাবে না, এ তো সবাই জানেন। এরপর সন্তানকে ধীরে ধীরে অন্য খাবারে অভ্যস্ত করে তোলার পালা। অনেকে খাওয়া নিয়ে জবরদস্তি করেন। এটা ঠিক নয়। বরং সন্তানের চাহিদামাফিক খাবার দেওয়ার অভ্যাস করুন। পুষ্টিকর, মজাদার খাবার দিন।

খাবার নিয়ে শিশুর সঙ্গে জবরদস্তি করার দরকার নেই
ছবি: অধুনা

মতামতের গুরুত্ব দিন

সন্তান হয়তো কাঁদছে বা কিছু নিয়ে জেদ করছে, বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। ধমকাবেন না। তাকে মারবেন না। চাইলেই পৃথিবীতে চট করে সব পাওয়া যায় না, এ সত্য খুব বেশি নির্মমভাবে উপস্থাপন করবেন না তার সামনে। যেটার জন্য সে কষ্ট পাচ্ছে, তার বিকল্প কিছু তৈরি করতে পারেন সৃজনশীল উপায়ে। মোটকথা, সন্তানের সব শখ পূরণ করাটা বাস্তবসম্মত না হলেও সেই অপূর্ণ শখের জন্য তার কষ্টটা যে আপনি উপলব্ধি করছেন, সেটি যেন বুঝতে পারে সে। নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা চাপিয়ে দেবেন না তার ওপর। সবটাতেই ‘না’ করবেন না। কিছু নিষেধ করা হলে ঠান্ডা পরিস্থিতিতে সেটির পেছনের কারণ বুঝিয়ে বলুন তাকে।

নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেবেন না
ছবি: অধুনা

খেয়াল রাখুন এই বিষয়গুলো

  • সন্তানকে স্পর্শ করুন। জড়িয়ে ধরুন। আদর করুন। যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনি তার পাশে আছেন, এই বিশ্বাসটুকু বুনে দিন ওর মনে।

  • একলা থাকার মতো বড় না হওয়া অবধি বাবা-মায়ের ঘরেই আলাদা একটি বিছানায় থাকতে দিন সন্তানকে।

  • পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তুলুন খেলতে খেলতেই। মেঝেতে ব্যথা লেগেছে বলে মেঝেকে আঘাত করলাম, এটি ভালো শিক্ষা নয়।

  • সন্তান বেড়ে উঠছে। তার আলাদা জগৎ তৈরি হচ্ছে। তবে আপনার জগৎ থেকে সে যাতে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে। ঘোরাঘুরি, হাঁটতে যাওয়া, খাবার খাওয়া, খেলাধুলা—এমনকি সম্ভব হলে কাজেও নিজের সঙ্গে যুক্ত করে নিন তাকে। সন্তানের বন্ধুবান্ধবের খোঁজ রাখুন। তবে অতিরিক্ত নজরদারি করবেন না।

  • ইতিবাচক থাকুন। ব্যক্তিজীবনে আপনার ইতিবাচক আচরণ সন্তানকে সুশিক্ষিত করে তুলবে।

  • পরীক্ষার ফল বা পড়ালেখা নিয়ে চাপের সৃষ্টি করবেন না, বরং ভালো ফল করতে মূল্যবোধ বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়—এমনটাই শেখান তাকে।