বাংলায় প্রকৌশলের পাঠ দেন তাঁরা

ইউনিক স্কুলিংয়ের ৩ সহপ্রতিষ্ঠাতা—ফাহিম, জেরিন ও জহিরুল
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০২২’ থেকে জানা যায়, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৯৮ শতাংশই স্কুল-কলেজে বাংলা মাধ্যমে পড়ালেখা করে আসেন। যেহেতু বাংলা বই ও বাংলা পাঠ গ্রহণে তাঁরা অভ্যস্ত, বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে হঠাৎ ইংরেজিতে পড়ালেখা শুরু হলে অনেকেই একটু সমস্যায় পড়েন। প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও প্রকট।

এমন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ফাহিম উদ্দিনও। ক্লাসে পড়া বুঝতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। ইউটিউবে বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন ক্লাসের ভিডিও খুঁজতে গিয়ে ফাহিম খেয়াল করেন, বাংলায় প্রকৌশলের বিষয়গুলোর ভালো মানের ক্লাস নেই। এ সমস্যার সমাধান কী হতে পারে, ভাবতে শুরু করেন তিনি। সহপাঠী জেরিন সুলতানার সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে কথা বলেন। জেরিন চুয়েটের নগর ও পরিকল্পনা অঞ্চল বিভাগের শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন

ফাহিম ও জেরিন ২০২০ সালের ২ এপ্রিল গড়ে তোলেন ‘ইউনিক স্কুলিং’ নামের একটি অনলাইন শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম। ‘উচ্চশিক্ষা হোক মাতৃভাষায়’—এই ছিল তাঁদের স্লোগান। বাংলায় প্রকৌশলের শিক্ষা দেওয়া যাঁদের উদ্দেশ্য, তাঁদের এই উদ্যোগের নাম ইংরেজিতে কেন, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নটা মাথায় এল। ফাহিম বলেন, ‘প্রথম বর্ষে পড়ার সময় যখন শুরু করি, তখন এত কিছু ভেবে করিনি। পরে নামটা বদলাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তত দিনে আমাদের নাম অনেকে জেনে গেছে। তাই আর করা হয়নি।’ শুরুটা দুজন মিলে করলেও পরে তাঁদের সঙ্গে সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে যোগ দেন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম। বর্তমানে বুয়েট, চুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষার্থী ইউনিক স্কুলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন।

প্রকৌশলের বিভিন্ন কোর্সভিত্তিক লেকচার বিনা মূল্যে পাওয়া যায় ইউনিক স্কুলিংয়ের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে। এ ছাড়া ‘প্রিমিয়াম কোর্স’ ও বাংলায় সমাধানমূলক বই পাওয়া যায় ইউনিক স্কুলিংয়ের ওয়েবসাইটে। কোনো শিক্ষার্থী যদি বিশেষায়িত সাহায্য চান, তা-ও নেওয়ার সুযোগ আছে। ফাহিমের দাবি, বর্তমানে ফেসবুক, ইউটিউব ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইউনিক স্কুলিং প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে বাংলায় প্রকৌশল শিক্ষা সেবা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন

এ রকম একটি প্ল্যাটফর্ম কেন জরুরি, সে কথাও বুঝিয়ে বললেন এই প্রকৌশলের শিক্ষার্থী। ‘নিজের ভাষায় শিখতে পারলেই শেখাটা সবচেয়ে ভালো হয়। ইউটিউব ঘাঁটলে হিন্দিতে ভারতের নামী শিক্ষকদের অনেক ক্লাস পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে খুব বেশি নেই। ইংরেজি বইয়ের অনেক কিছু না বোঝার কারণে প্রায় সময় শিক্ষার্থী মুখস্থ করে ফেলার চেষ্টা করেন। অথচ প্রকৌশলবিদ্যার মূল লক্ষ্যই যেকোনো বিষয় বুঝে এর প্রায়োগিক রূপ দেওয়া। শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই ইউনিক স্কুলিং কাজ করছে। আমরা আশা করছি, আমাদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়ার বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে বুঝবে। এর মাধ্যমে দেশে মেধাবী প্রকৌশলী তৈরির পথ সুগম হবে।’

ফাহিমের সহপাঠী জেরিন জানান, খুব শিগগিরই তাঁরা ‘রিসার্চ বাডি’ নামের আরেকটি সেবা চালু করবেন, যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা দেশ–বিদেশের নানা প্রান্তের গবেষকদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে পারবেন।

আরও পড়ুন