পুষ্টিগুণে নুডলস কেমন
ঝটপট তৈরি করা যায় এমন নাশতা হিসেবে নুডলস জনপ্রিয়। নুডলসে ক্ষুধা তো মেটেই, রসনার তৃপ্তিও হয়। তবে পুষ্টিগুণে নুডলস কেমন, সে সম্পর্কে জানেন কি? টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান বললেন নুডলসের পুষ্টিগুণের কথা।
নুডলস শর্করাজাতীয় খাবার। খানিকটা আমিষ আর স্নেহপদার্থও থাকে এতে। সামান্য খনিজ উপাদানও থাকে। তবে নুডলসে নানা রকম পুষ্টি উপাদান যোগ করা সম্ভব। কোন ধরনের নুডলস বেছে নেওয়া হচ্ছে, আর কীভাবে তা তৈরি করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে নুডলসের পুষ্টিমান।
সঠিকভাবে তৈরি করা হলে নুডলস একটি পুষ্টিকর পদ হতে পারে। তবে খেয়াল রাখবেন, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) বা টেস্টিং সল্ট স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। এই উপকরণ তাই এড়িয়ে চলুন অবশ্যই।
ক্যালরির মাত্রা
১০০ গ্রাম নুডলস রান্না করলে তা থেকে আপনি ১০০ ক্যালরির কিছুটা বেশি পাবেন। নুডলসের ধরন ভেদে তা ১৪০ ক্যালরির মতো হতে পারে। তবে নুডলসে আপনি কতটা তেল দিচ্ছেন, রান্নার সময় বা খাওয়ার সময় সস বা কেচাপ যোগ করছেন কি না—এসব বিষয়ের ওপরও নির্ভর করে ক্যালরির মাত্রা।
তেলের পরিমাণ যত বাড়বে, ক্যালরির মাত্রাও তত বাড়বে। সস আর কেচাপে থাকা চিনির কারণেও বাড়বে ক্যালরি। সাদা সস বা ক্রিমজাতীয় উপকরণ যোগ করলেও ক্যালরি বেড়ে যাবে।
তেলের আরও হিসাব–নিকাশ
কোন তেল ব্যবহার করছেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। ধরা যাক, নুডলস সেদ্ধ করে তাতে খানিকটা অলিভ অয়েল মাখিয়ে খেয়ে নিলেন আপনি। এভাবে নুডলস খাওয়া যতটা স্বাস্থ্যকর, সয়াবিন তেলে নুডলস রান্না করে খাওয়া ততটা স্বাস্থ্যকর নয়।
তবে সয়াবিন তেলের রান্নাও স্বাস্থ্যকর হতে পারে, যদি তেলের পরিমাণ রাখা যায় সীমিত। ক্যানোলা তেল, সূর্যমুখী তেল কিংবা ধানের কুঁড়ার (রাইস ব্র্যান) তেল হতে পারে সয়াবিন তেলের বিকল্প। তবে স্বাস্থ্যকর যেকোনো তেলও আপনাকে ব্যবহার করতে হবে পরিমিত পরিমাণে।
অবশ্যই মনে রাখবেন, ব্যবহৃত তেল বারবার ব্যবহার করতে নেই। পুনর্ব্যবহার করতে চাইলেও সর্বোচ্চ একবার, সেটিও ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে। নারকেল তেল, পাম তেল, ঘি, মাখন বা ডালডা এড়িয়ে চলুন।
অন্যান্য পুষ্টি উপাদান
নুডলসে ডিম বা মুরগির মাংস যোগ করলে আপনি তা থেকে আমিষও পাবেন। সবজি যোগ করলে পাবেন সেটির পুষ্টিও। নানা ধরনের সবজি যোগ করতে পারেন নুডলসে। নুডলসে সবজির অনুপাত বাড়িয়ে দিলে নুডলস বেশ স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে।
নানা রঙের সবজি আর ডিম বা মাংস যোগ করা নুডলস শিশুরা বেশ পছন্দ করে। নুডলসের সঙ্গে কাঁচা সবজির সালাদ খেলে তা থেকেও পাবেন নানান পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে ভিটামিন বি। কারণ, সবজি রান্নার সময় ভিটামিন বি অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়।
শেষ কথা
যেকোনো নুডলস আঁশের পরিমাণ কম থাকে। তাই নুডলস খেয়ে পেট ভরলেও অল্প সময় পরেই আবার ক্ষুধা লেগে যেতে পারে। কিছুটা আমিষ এবং বেশি করে সবজি যোগ করা হলে অবশ্য সেই নুডলস খেয়ে পেট ভরা থাকে দীর্ঘক্ষণ।
নাশতা বা স্ন্যাকস হিসেবে না খেয়ে এভাবে তৈরি করে তা এক বেলার পরিপূর্ণ খাবার হিসেবে খাওয়া ভালো। সন্ধ্যায় নাশতা হিসেবে নুডলস, আবার রাতে ভাত—এভাবে খাওয়া হলে সারা দিনের মোট ক্যালরির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। বরং সন্ধ্যায় নুডলস খেলে রাতে ভাত না খেয়ে দুধ বা ফলমূল খেয়ে নেওয়া যেতে পারে।
সব ধরনের নুডলসের মধ্যে হোল গ্রেইন বা গোটা শস্যের তৈরি নুডলস সবচেয়ে ভালো; কারণ, তাতে আঁশের পরিমাণ বেশি থাকে। তবে আমাদের দেশে সে ধরনের নুডলস সহজলভ্য নয়।