একটি পরিবার থেকে বের হয় এই পত্রিকা, লেখেন পরিবারেরই লোকজন

লেখকদের দেওয়া হয় পুরস্কার
ছবি: সংগৃহীত

একটি পরিবার থেকে প্রতিবছর একটি পত্রিকা বের করা হয়। পরিবারের ছোট-বড় সবাই তাতে লেখেন। সেরা লেখকদের ছোট-বড় দুই ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে হাতে তুলে দেওয়া হয় বই। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার সাদেকাবাদ মণ্ডলবাড়ির গল্প এটা।

সাদেকাবাদ মণ্ডলবাড়ির মরহুম ছাদেক আলী মণ্ডল ও বেগম নূরজাহান আলীর পরিবারের সদস্যসংখ্যা বর্তমান ১১১! পাঁচ প্রজন্মের ছোট-বড় লেখকদের লেখা নিয়ে বের করা হয় পারিবারিক পত্রিকা ‘ছায়া’। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকাটির ১১তম সংখ্যা।

‘ছায়া’ বিষয়ে তাঁরা

‘ছায়া’র ১১তম সংখ্যায় কল্যাণভাষ লিখেছেন কবি ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, সাহিত্যিক আনিসুল হক ও সাহিত্যিক দন্ত্যস রওশন।


আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, ‘একই পরিবারের এতসংখ্যক লেখক নিয়ে একটি পত্রিকা বের হওয়া সত্যিই বিস্ময়ের ব্যাপার। প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে মানুষ ক্রমে সাহিত্যবিমুখ হয়ে যাচ্ছে। এই সময় সাহিত্য পত্রিকার চর্চা সাহিত্যের জন্য সুবাতাস বলে মনে করি।’
রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘আমি প্রথমত বিস্মিত হয়েছিলাম। পরে “ছায়া” দেখেছি। খুব ভালো লেগেছে এই ভেবে যে বাংলাদেশে একটি পরিবার থেকে এককভাবে একটি পত্রিকা নিয়মিত ছাপা হয়। বাংলাদেশে আর কোনো পারিবারিক পত্রিকা আছে বলে আমার জানা নেই।’

‘ছায়া’ পত্রিকা হাতে পরিবারের সদস্যরা
ছবি: সংগৃহীত

আনিসুল হক বলেন, ‘একই পরিবার থেকে এতসংখ্যক লেখক নিয়ে একটি পত্রিকা প্রকাশ অকল্পনীয়। এক দশক পেরিয়ে পত্রিকাটি পা দিচ্ছে এক যুগের দিকে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। আজকের খুদে লেখকেরা একদিন মহিরুহে পরিণত হবে, বিশ্বাস। ছায়া দেবে সাহিত্যাকাশে।’

‘ছায়া’র শুরু

ছাদেক আলী মণ্ডলের বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন মাতা–পিতার স্মরণে একটি পারিবারিক পুস্তিকা বের করার ইচ্ছা করেন। সেখান থেকেই শুরু। ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর বের করা হয় এর প্রথম সংখ্যা। শুরুতে পরিবারের ২৮ জন সদস্য এতে লেখেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রতি সংখ্যায় বাড়তে থাকে লেখকের সংখ্যা। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রায় অর্ধশতজনের লেখা নিয়ে বের হয় ‘ছায়া’র ১১তম সংখ্যা। এ সংখ্যায় শিশু ও দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এবং চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরাও লিখেছেন।

ছড়া, কবিতা, ভ্রমণ, গল্প, সমাজ, সংস্কৃতি নিয়ে লেখা ‘ছায়া’র বেশির ভাগই পরিবারকেন্দ্রিক। পাঁচ প্রজন্মের ছায়াদানকারী ছাদেক আলী মণ্ডল ও বেগম নূরজাহান আলী স্মরণে পত্রিকাটির নাম করা হয় ‘ছায়া’।

‘ছায়া’র ১১তম সংখ্যা
ছবি: সংগৃহীত

পরিবার থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন


২৫ বছর আগে ছাদেক আলী মণ্ডল মারা যাওয়ার পর তাঁর বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন এক লাখ টাকা দিয়ে জনকল্যাণমূলক একটি ট্রাস্ট খোলেন। পরিবারের কর্মজীবীদের আয়ের ২ থেকে ৫ শতাংশ অনুদানে চলে এ ট্রাস্ট। মাঝেমধ্যে পরিবারের কর্মজীবী সদস্যরা নিজে থেকে বেশি অর্থ দেন এই ট্রাস্টে। সাদেকাবাদ জনকল্যাণ ট্রাস্টের সহযোগিতায় এলাকার দুস্থ-এতিম ও দরিদ্র পরিবারকে শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ, বৃত্তি প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। রয়েছে একটি লোকসারণি সংগ্রহশালা ও গণগ্রন্থাগার। সকালে এলাকার দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান, রাতে বয়স্কদের শিক্ষাদান, দুস্থ বিধবা নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রম চলে। সাদেকাবাদ জনকল্যাণ ট্রাস্টের তিনতলা একটি দাতব্য চিকিৎসালয়ও রয়েছে।