রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ক্লাসের চারজন পেয়েছেন ইরাসমাস বৃত্তি

বাঁ থেকে রাইন হাসান চৌধুরী, সুজিত কর্মকার , সাইফুল ইসলাম ও মুশফিকুল ইসলাম।
ছবি: রিয়াদ হাসান

ইউরোপে পড়ালেখার সবচেয়ে সম্মানজনক বৃত্তিগুলোর একটি ইরাসমাস মুন্ডাস। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া এই পূর্ণ বৃত্তির (ফুল ফান্ডেড) অধীনে প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকেই বহু শিক্ষার্থী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যান। বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী ইরাসমাস মুন্ডাস বৃত্তি পাচ্ছেন। তবে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের একই ব্যাচের চারজনের এই বৃত্তি পাওয়া একটু অবাক করা ঘটনাই বটে।

যাঁদের কথা বলছি, তাঁদের চারজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ ব্যাচের ছাত্র। নাম সাইফুল ইসলাম, সুজিত কর্মকার, মো. রাইন হাসান চৌধুরী ও মো. মুশফিকুল ইসলাম। চার বন্ধুর গল্প আলাদা হলেও লক্ষ্য ছিল এক। বিশ্বমানের কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা ও গবেষণা করতে চেয়েছেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একসঙ্গে স্বপ্ন পূরণের সুযোগও পেয়ে গেছেন।

আরও পড়ুন

ইরাসমাস মুন্ডাসের ‘ম্যানুফ্যাকচারিং ৪.০ বাই ইন্টেলিজেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবল টেকনোলজিস (মেটা ৪.০)’ প্রোগ্রামের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন সুজিত কর্মকার। সামাজিক, আর্থিক, নানা বাধাই তাঁকে অতিক্রম করতে হয়েছে। সুজিত বলেন, ‘খবরটা জানার পর বেশ খুশি লাগছিল। তবে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছিলাম। কিছুটা সময় নিয়েছিলাম পুরো বিষয়টা বোঝার জন্য।’

এ ছাড়া সাইফুল ইসলাম ‘মেমব্রেন ইঞ্জিনিয়ারিং ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (মাস্টার এমইএসডি)’ প্রোগ্রাম, মুশফিকুল ইসলাম ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারিটি ইন ম্যাটেরিয়ালস ফর এনার্জি স্টোরেজ অ্যান্ড কনভারসন (আই-এমইএসসি)’ প্রোগ্রাম এবং রাইন হাসান চৌধুরী ‘ন্যানো ম্যাটেরিয়ালস ফর গ্রিন অ্যান্ড ডিজিটাল ট্রানজিশন’ প্রোগ্রামের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। ইরাসমাস মুন্ডাস বৃত্তির নিয়ম অনুযায়ী, ইউরোপের একাধিক দেশ ঘুরে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হয় স্নাতকোত্তরের জন্য। অতএব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীই একেক সেমিস্টার সম্পন্ন করবেন ইউরোপের একেক দেশে, একেক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে।

এই অর্জনের পেছনে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বড় অবদান আছে বলে জানালেন চার শিক্ষার্থী। সাইফুল ইসলাম যেমন বলছিলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের বিভাগের পাঠ্যক্রম খুব উন্নত, আন্তর্জাতিক মানের। তাত্ত্বিক জ্ঞান ও ব্যবহারিক কাজের সমন্বয় এখানে দারুণভাবে শেখানো হয়। মাস্টার এমইএসডিতে নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে অর্জিত জ্ঞান এবং বায়ো অ্যান্ড ন্যানোটেকনোলজি রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে গবেষণার অভিজ্ঞতা আমাকে সাহায্য করেছে।’ শিক্ষকদেরও ধন্যবাদ দিলেন সাইফুল। রেকমেন্ডেশন লেটারসহ (সুপারিশপত্র) বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেতে হলে আবেদনপত্রে যেসব বিষয় উল্লেখ থাকে, তার মধ্যে মোটিভেশন লেটার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। যেখানে একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, কেন এই প্রোগ্রামটিতে অংশ নিতে চাচ্ছেন, এমন নানা বিষয়ে লিখতে হয়। ইরাসমাস মুন্ডাস বৃত্তিপ্রাপ্ত চার শিক্ষার্থীর মতে, তাঁরা সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেছেন এই মোটিভেশন লেটারের পেছনে। মুশফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যে প্রোগ্রামে সুযোগ পেয়েছি, সেখানে আবেদন করার সময় একটি মোটিভেশনাল ভিডিও আপলোড করা বাধ্যতামূলক ছিল। এটাতেই আমি সবচেয়ে বেশি ফোকাস করেছিলাম। আমি মনে করি, এ ভিডিওটিই আমাকে অন্যান্য আবেদনকারীদের তুলনায় এগিয়ে রেখেছে।’

এখনকার বিশ্ব তুমুল প্রতিযোগিতামূলক হলেও ধৈর্য, সাহস ও একাগ্রতা নিয়ে কোনো কিছুর জন্য লেগে থাকলে অর্জন করা অসম্ভব নয়—এমনটাই বিশ্বাস করেন সাইফুল, সুজিত, রাইন ও মুশফিকুল। তাঁরা বলছেন, একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে এগিয়ে থাকা সহজ হয়।

চার শিক্ষার্থী একই বিষয়ে স্নাতক করলেও তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আলাদা। কেউ মাস্টার্স শেষে ভিনদেশে পিএইচডি করতে চান, কেউ শিক্ষকতায় আসতে চান, কেউ আবার নিজের দক্ষতাকে দেশ ও বিশ্বের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চান। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মো. রাইন হাসান চৌধুরী বলছিলেন, ‘ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্টিস্টরা ভবিষ্যৎ তৈরি করে। সেই সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরিতে আমি ছোট একজন কারিগর হতে চাই।’