দক্ষিণ এশিয়া—পৃথিবীর মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ভূমিজুড়ে অবস্থান করছে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ। এখানে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ২৪ শতাংশের বসবাস। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকিতে আছে এ অঞ্চলের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে, আলোচনা ও নিজেদের আইডিয়া উপস্থাপন করতে আমরা ১০০ তরুণ এক হয়েছিলাম নেপালের কাঠমান্ডুতে। ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন চ্যাম্পিয়নস নেটওয়ার্ক প্রোগ্রাম ২০২২’ নামের এ সম্মেলনে ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার নানা বয়সের তরুণেরা অংশ নিয়েছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সমস্যার সমাধান ও প্রভাব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। কীভাবে ভবিষ্যতের পৃথিবীর জন্য কার্বনদূষণ কমানো যায়, টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি না করে কাজ করা যায়—এসব ছিল আমাদের আলোচ্য বিষয়। পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় সামাজিক ও নীতিগত কী পরিবর্তন আনা যায়, তা নিয়ে ভাবনার সুযোগ পেয়েছি আমরা।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া তরুণ মেলিশা চৌধুরী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োটেকনোলজি বিষয়ে পড়েছেন। তিনি বলছিলেন, ‘এই কনভেনশন থেকে একটা বড় প্রাপ্তি হলো আমরা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তরুণেরা কী ভাবছে, সে সম্পর্কে জানতে পেরেছি। নানা বিষয়ে পড়ালেখা করা ও নানা পেশার তরুণেরা এক হয়েছিল এ সম্মেলনে। এ ছাড়া বায়ুদূষণের কারণে কীভাবে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর ক্ষতি হচ্ছে, তা নিয়ে দলগতভাবে আমরা কাজ করেছি। বিভিন্ন পেশাজীবী ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনের নানা পথ বের করার চেষ্টা করেছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের জেনল্যাব, নেপালের আইএসএসআর (ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড সোশিও-ইকোনমিক রিসার্চ) ও শ্রীলঙ্কার এসডিজেএফ (শ্রীলঙ্কা ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্টস ফোরাম)। উদ্বোধনী আয়োজনে নেপালের বন ও পরিবেশমন্ত্রী প্রদীপ যাদব বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, গবেষক, পরিবেশবিদ, শিক্ষক ও কূটনীতিকেরা অংশ নেন। বাংলাদেশের তরুণ সংগঠক রাতুল দেব বলছিলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তরুণদের নানা সংকটের মুখে পড়তে হবে। যেমন দারিদ্র্য, বেকারত্ব। এসব সমস্যা সমাধানে সমন্বিত উপায়ে কাজের প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা।’
ভারতের তরুণ রাজেশ শানমুগান কৃষি নিয়ে কাজ করেন। আরেক তরুণ আমানদিপ শ্রীবাস্তব বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও জলবায়ু পরিবর্তনের নানা কাজ নিয়ে বেশ আগ্রহী। সামুদ্রিক জলজ উদ্ভিদ নিয়ে কাজ করেন শ্রীলঙ্কার তরুণ সেনুরা ফনসেকা। সবার সঙ্গে দেখা হলো এ আয়োজনে। সেনুরা বলছিলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্রীলঙ্কা বড় ঝুঁকিতে আছে। বাংলাদেশের তরুণদের সঙ্গে আমি কাজ করতে চাই। সমন্বিত উপায়ে আমরা পরিবেশসংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করতে পারি।’
নেপালের তরুণ মনীশ রিগমা কাজ করছেন ভার্টিক্যাল ফার্মিং নিয়ে। বাংলাদেশে এর সুযোগ কেমন, তা নিয়ে কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার তরুণ পেশাজীবী সারা জাবিন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী তাসলিমা আক্তারসহ অনেক তরুণ বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে তাঁদের প্রস্তাবিত সমাধান উপস্থাপন করেন। সম্মেলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রিফাত আরা জান্নাত বলেন, ‘ভবিষ্যতের তরুণদের ভাবনা টেকসই উন্নয়নের জন্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পৌঁছানো প্রয়োজন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে তরুণেরা নিজের দেশ ও প্রতিবেশীদের নিয়ে ভাবার সুযোগ পাবে।’ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশের মাহমুদা ইয়াসমিন, নাফিয়া ইসলাম, তাসনিয়া খন্দকার সবাই বেশ উচ্ছ্বসিত। ব্যবহারিক জ্ঞান ও নীতিনির্ধারণের নানা বিষয় সম্পর্কে হাতে-কলমে জানার সুযোগ ছিল সবার।
ভুটানের তরুণ ইয়াম কুমার পৌদেল, শেরিং টোবগে, শেরিং লাহমোর কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরার সুযোগ হলো। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কীভাবে বাংলাদেশ মানিয়ে নিচ্ছে, তা নিয়ে গল্প করছিলাম ওদের সঙ্গে। একজন আইনের গবেষক হিসেবে এই সম্মেলনে আমি ভুটানের বায়ুদূষণ কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে নিজের ভাবনা উপস্থাপন করেছি। বাংলাদেশের ঢাকার বায়ুদূষণ আর ভুটানের বায়ুদূষণের প্রকৃতি আলাদা। সম্মেলনে অন্য দেশের তরুণদের সঙ্গে আমার দলের প্রস্তাবিত সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছি। সব মিলিয়ে দারুণ এক অভিজ্ঞতা হয়েছে।’