জানালা সাজানোর খুঁটিনাটি

ঘরের চোখ বলা হয় জানালাকে। তাই ঘর যতই সাজাই না কেন, তার চোখের সাজসজ্জা হওয়া চাই ভিন্নধর্মী। আলো-বাতাস আসার বড় উৎস হলো ঘরের জানালা। আবার মানসিক প্রশান্তির জায়গাও হলো ঘরের এই জানালা। তাই এর সাজও হতে হবে এমন, যাতে অন্য বিষয়গুলো বাধা না পায়। একসময় শুধু পর্দাকেই জানালার সাজ মনে করা হতো। কিন্তু সে ধারণা এখন পুরোনো। প্রাইভেসি রেখেই জানালার সাজ হতে পারে ভিন্ন ধরনের।

পর্যাপ্ত আলো–বাতাস
জানালার সাজের গতানুগতিক ধারণা পাল্টে গেছে, কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে আলো–বাতাস চলাচলের পথটি যেন বন্ধ না হয়। জানালা সাজানোর অনুষজ্ঞ হতে হবে ছোট বা মাঝারি। বড় আকারের শোপিস বা গাছ দেখতে সুন্দর হলেও জানালার ঠিক সামনে রাখা উচিত হবে না।

পর্দায় ভিন্নতা

জানালার পর্দা মানেই ভারী আর এক রকম হতে হবে, তা নয়। অন্দরসজ্জাবিদ গুলশান নাসরীন বলেন, পর্দা হতে পারে ভিন্ন ভিন্ন ফেব্রিকের। ভারী পর্দার পাশে পাতলা পর্দা আধুনিক লুক দেবে। আবার এক কালার আর প্রিন্ট দুই ধরনের পর্দার মিশ্রণে জানালা সাজানো যায়। সব এক রং ব্যবহার না করে গাঢ় ও হালকা, এভাবে সাজালে ঘরের সৌন্দর্য বাড়বে।

জানালার কাচে পেইন্টিং

সাদা জানালার কাচ অনেক সময় একঘেয়েমি নিয়ে আসে। সে ক্ষেত্রে কালার পেন দিয়ে কাচে করা যায় পেইন্টিং। ফুল, লতা বা দৃশ্য—সবই মানানসই হবে জানালার কাচে।

জানালার কার্নিশ সাজানো

যাঁদের জানালার সামনে কার্নিশের জায়গা রয়েছে, তাঁরা অনায়াসেই ছোট পটে ইনডোর প্ল্যান্ট রাখতে পারেন। আবার চাইলে মাটির, সিরামিকের বা মেটালের শোপিসও রাখা যায়।

কাঠের পাল্লা কিংবা ফ্রেঞ্চ জানালা

একসময় কাঠের পাল্লা দেওয়া ফ্রেঞ্চ জানালা দেখা যেত বাড়িগুলোতে। এরপর ব্যবহারে সহজ বলে থাই জানালার জনপ্রিয়তা বাড়ে। কিন্তু ঘরে ক্লাসিক লুক আনতে অনেকেই এখন আবার পুরোনো দিনের কাঠের পাল্লা দেওয়া জানালা বা অন্যান্য ম্যাটেরিয়ালে তৈরি ফ্রেঞ্চ জানালা ব্যবহার করছেন। ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে ধারণাটি ব্যতিক্রমী। অনেকে দেয়ালের সঙ্গে মিলিয়ে কাঠের বর্ডারেও রঙ করেন একই। যাঁরা রঙিন আবহ পছন্দ করেন, তাঁরা কাঠের বর্ডারে লাল, মেরুন, নীল, হলুদ, সবুজ রঙও করে থাকেন। একসময় জানালার কাঠে শুধু বার্নিশ করার প্রচলন থাকলেও এখন গাঢ় রঙেরই ফ্যাশন, বলছেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রীনাত ফওজিয়া।

জানালায় গাছের লতা

যাঁরা ঘরে সবুজের আবহ পছন্দ করেন, তাঁরা বেছে নিতে পারেন জানালা। তবে খেয়াল রাখতে হবে, জানালায় ঝুলন্ত গাছের মাত্রা যেন অতিরিক্ত না হয়। কারণ, এতে ঘরের আলো কমে যাবে। পাতাবাহার বা ঝুলন্ত ইনডোর গাছগুলো আলাদা করবে জানালাকে।
জানালার পাশের দেয়াল

জানালার চারপাশের জায়গাটুকুও কিন্তু এর সাজের অংশ। একে জানালার চারপাশের দেয়াল বর্ডারও বলা যেতে পারে। যেহেতু এ জায়গা খুব বেশি বড় নয়, তাই এখানে বেশি সাজালে ভালো দেখাবে না। এখানের সাজ হতে হবে মার্জিত। ছোট আকারের ফ্রেম করা ছবি বা ছোট ছোট সুতার বা কাপড়ের পুতুল ঝুলিয়ে দেওয়া যায়, এমনটাই বলছিলেন গুলশান নাসরীন।

জানালার পাশে ডিভান

ঘর সাজাতে ডিভানের ধারণাটি একেবারেই নতুন। ডিভান ঘরের কোনার অব্যবহৃত জায়গাতেই বেশি রাখা হয়। আর ঘরের সেই কোনা সাজানো হয় বেশ রঙিন করে। একটু বড় বাড়িতে জানালার সামনের জায়গাটিতে ডিভান দিয়ে সহজেই দৃষ্টিনন্দন ও আরামদায়ক জায়গা তৈরি করা যায়। বৃষ্টি দেখতে বা পছন্দের বই পড়তে চা হাতে বসে যেতে পারেন এ ডিভানে। বিছাতে পারেন রঙিন চাদর আর সঙ্গে থাকতে পারে আরাম করে বসার জন্য কুশন–বালিশ। সে ক্ষেত্রে চাদর আর বালিশে থাকতে হবে বৈপরীত্য, অর্থাৎ চাদর সাদা হলে তাঁর ওপর ফুটে ওঠে এমন হলুদ, লাল বা কমলা রঙের কুশন কাভার ভালো লাগবে বলে জানালেন রীনাত ফওজিয়া।
এ ছাড়া রাতে জানালার সৌন্দর্য বাড়াতে ভিন্নধর্মী লাইটেও সাজাতে পারেন। আবার চাইলে গাছের মধ্যেও দেওয়া যায় কৃত্রিম মোম বা হালকা আলো হয় এমন লাইট।