
ইট-কাঠের শহুরে জীবনে সবুজ প্রকৃতি যেন অধরা। তাই তো এক টুকরো সবুজের আকাঙ্ক্ষা যেন সবারই। যাঁরা গাছ ভালোবাসেন, গাছে ফুটে থাকা ফুল, ঝুলে থাকা ফল ভালোবাসেন, তাঁরা নিজের ফ্ল্যাট বা বাড়ির বারান্দায় গড়ে তুলতে পারেন এক টুকরো সবুজ বাগান।
বারান্দায় বাগানের জন্য নার্সারিতে পাওয়া যায় নানা রকম বাহারি গাছ। ফুলের মধ্যে টগর, গোলাপ, অপরাজিতা, জুই, দোলনচাঁপা, অর্কিড, বেলি, হাসনাহেনা পাবেন। আর পাওয়া যাবে নানা রকম পাতাবাহারসহ অর্নামেন্টাল গাছ। বলছিলেন প্রকৃতিবিদ মোকাররম হোসেন। তাঁর মতে, পছন্দের গাছ কিনে এনে তৈরি করে নেওয়া যায় এক টুকরো সবুজ প্রকৃতি। তবে ধৈর্য ধরে প্রয়োজনীয় রোদ, ছায়া, পানি দেওয়াসহ প্রয়োজন নানা রকম যত্নআত্তি। না হলে বাগান টিকিয়ে রাখা যে অসম্ভব, সেটাও জানান তিনি।

বারান্দায় গাছ লাগানো এবং সেসব গাছের পরিচর্যা বললেন ব্র্যাক নার্সারি এন্টারপ্রাইজের ইনচার্জ মো. কবির হোসেন খান। তিনি জানান, যে বারান্দায় গাছ লাগানোর কথা ভাবছেন সেখানে রোদ পড়ে কি না—তা শুরুতেই খেয়াল রাখতে হবে। রোদ এলে সেখানে হাইব্রিড যেকোনো ফল গাছ লাগানো যাবে। যেমন পেয়ারা, লেবু, আম ইত্যাদি। বিভিন্ন ফুলের গাছও হবে। যদি রোদ না থাকে তাহলে পাতাবাহার জাতীয় গাছ লাগানো যাবে। যেমন, এরিকা পাম, মানিপ্লান্ট ইত্যাদি। ছায়াতে কখনোই ফুল, ফল বা সবজি ভালো হয় না।
বারান্দায় লাগানো গাছে নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। ছোট গাছগুলো টবে লাগাতে হবে। সকালে বা বিকেলে পানি দিতে হবে। রোদের সময় পানি দেওয়া যাবে না। টব ভেজা থাকলে পানি দেওয়া যাবে না। প্রতি মাসেই টবের মাটি নিড়ানি দিয়ে আলগা করে নিতে হবে এবং প্রতি তিন মাস পরপরই জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। পচা গোবর, প্যাকেট-জাতীয় কমপোস্ট সার, খৈল অথবা বাসায় ব্যবহৃত সবজির খোসা পচিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এটা হবে সব থেকে উৎকৃষ্ট মানের সার। কিছু রাসায়নিক সারও ব্যবহার করা যায়, যেমন মিশ্র সার।
পাতা-জাতীয় গাছগুলোয় মাঝে মাঝে রোগ-জীবাণু আক্রমণ করে ফলে পাতা কুঁকড়ে যায়। পাতা পোকায় কেটে ছিদ্র করে ফেলে এ কারণে নিয়মিত স্প্রে (কীটনাশক) করতে হবে। আক্রান্ত গাছে সপ্তাহে দুইবার স্প্রে করতে হবে। সুস্থ গাছে একবার করে করতে হবে। রোগ-জীবাণুর ধরন বুঝে ভিন্ন স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। পাতা কুঁকড়ে যাওয়া, সাদা সাদা গুঁড়ার মতো কিছুতে ভরে যাওয়া বা তুলোর মতো বল হওয়া, পাতায় ছিদ্র হয়ে যাওয়া, পাতার মাঝখানে হলুদ হয়ে যাওয়া বা পাতার সামনের অংশ শুকিয়ে যাওয়া দেখতে পেলেই ধরে নিতে হবে এটি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিটি টবের নিচে প্লেট রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে পানি পড়ে বারান্দার মেঝে নষ্ট হবে না। এটাও খেয়াল রাখতে হবে যেন পানি জমে মশার সৃষ্টি না হয়।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার সাবিহা আক্তার কুমু বললেন, ‘বারান্দায় রোদ এবং ছায়ার ওপর ভিত্তি করে ইনডোর এবং আউটডোর দুই ধরনের গাছই লাগানো যেতে পারে। দুই উপায়ে এই গাছগুলো লাগানো যেতে পারে। ছোট পরিসরে শুধু টবে রেলিংয়ে বা ছাদ থেকে ঝুলিয়ে দিতে পারেন। অন্যটি হলো বড় পরিসরে মাটি ফেলে গ্রাউন্ড তৈরি করে, মোজাইক থাকলে তা তুলে ফেলে পলিথিন বিছিয়ে জায়গাটিকে ঘেরা দিয়ে পছন্দমতো গাছ লাগিয়ে নেওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে একজন দক্ষ মালির পরামর্শ নেওয়া জরুরি।’ যে গাছই লাগানো হোক না কেন, তার সঠিক যত্ন প্রয়োজন এবং সুন্দর করে সাজানোর ওপরেই নির্ভর করে আপনার বারান্দা-বাগানটা কতটা নান্দনিক দেখাবে। বাজারে চমৎকার দেখতে টব পাওয়া যায়। সেসব টবে গাছ লাগিয়ে কিছু রঙিন পাথর দিয়ে টবের চারপাশ ঘিরে দিলে দেখতে ভালো লাগবে। এ ছাড়া মাটির চাড়িতে একটু আলপনা এঁকে তাতেও পানির গাছগুলো রাখা যেতে পারে। বাতাসে দুলবে না এমন জায়গা বেছে নিয়ে সেখানে পাটের শিঁকায় আলপনা আঁকা হাঁড়িতে লতানো কোনো গাছ ঝুলিয়ে দিলেও ভালো দেখাবে।
আপনার বারান্দাটা পছন্দের গাছ দিয়ে এত সুন্দর করে সাজালেন যে শেষ বিকেলে কিংবা ভোরে নিশ্চয়ই আপনার একটু বসে সময় কাটাতে ইচ্ছে করবে। সে ক্ষেত্রে খুব সাধারণ কিন্তু নান্দনিক কিছু চেয়ার বা মোড়া সাজিয়ে বসার আয়োজন করতে পারেন। বাঁশ, বেত, রড আয়রন, কাঠের টুল বা চেয়ার রাখতে পারেন। মাটির বড় পটারির ওপর গ্লাস বসিয়ে নিয়ে তৈরি করতে পারেন টেবিল। সকাল বা বিকেলে চায়ের কাপ হাতে পড়তে পারেন পত্রিকা বা বই। শুনতে পারেন গান কিংবা দিতে পারেন আড্ডা। গাছে ভরা বারান্দায় কেটে যাবে আপনার সুন্দর মুহূর্ত।