মানুষ বুঝে শোবার ঘর

রুচি এবং প্রয়োজন মিলিয়ে ঘরের ব্যক্তিত্বও যেন হয় আলাদা আলাদা

শোবার ঘরেই শুরু হয় আমাদের দিন, দিনের শেষও হয় এখানেই। সারা দিনের পরিশ্রম শেষে এই শোবার ঘরেই ফিরে পাওয়া যায় প্রশান্তি। তাই এর সাজসজ্জা হতে হবে ছিমছাম। শোবার ঘরের সাজে শৌখিনতা আর আভিজাত্যের চেয়ে আরামের বিষয়টিই যেন প্রাধান্য পায় বেশি, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।

ঘর হোক ছিমছাম
ছবি: নকশা

স্থাপত্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান আর্কভিজের স্থপতি মেহেরুন ফারজানা জানান, শুধু ঘুমেই আর শোবার ঘরের কাজ সীমাবদ্ধ নেই। আগেকার দিনের মতো পড়া বা অন্য কাজের জন্য চাইলেও আর আলাদা ঘর রাখা এখন আর সম্ভব হয় না। যার যার ব্যক্তিগত ঘরটাই ঘুমানোসহ সব কাজেই ব্যবহার হয়। তাই বয়সভেদে শোবার ঘরের অন্দরসজ্জায়ও এসে গেছে পরিবর্তন। সব বয়সের রুচি এবং প্রয়োজন মিলিয়ে এ কারণে ঘরের ব্যক্তিত্বও যেন হয় আলাদা আলাদা।

প্রবীণদের শোবার ঘর

প্রবীণদের ঘরে রকিং চেয়ার রাখা যেতে পারে
ছবি: নকশা

প্রবীণদের ঘর একটু খোলামেলা রাখাই ভালো। ঘরে বেশি আসবাব ও অন্য জিনিস না রাখতে পরামর্শ দিলেন স্থপতি ফারজানা। এতে তাঁদের ঘরে চলাফেরা করতে সুবিধা হবে। বয়োবৃদ্ধদের জন্য বিছানায় ওঠা-বসাটা একটু কষ্টকর হয়ে পড়ে। খাট যেন খুব উঁচু না হয়, আবার খুব নিচুও না হয়ে যায়। বসলে পায়ের পাতা মেঝেতে লেগে থাকে, এমন খাটই ব্যবহার করতে হবে। খাটের পাশে থাকা বেডসাইড টেবিল বয়োবৃদ্ধদের জন্য বেশ প্রয়োজনীয়। ওষুধ, পান-জর্দা কিংবা নিত্য দরকারি পথ্য রাখার জন্য বেডসাইড টেবিল ব্যবহার করতে পারেন। আলমারি বা ওয়ার্ডরোবের উচ্চতাও যেন তাঁদের সুবিধামতো হয়। অবসর সময়ে যে বইগুলো পড়েন, সেগুলোর জন্য ঘরে বুকশেলফ থাকতে পারে। বয়োবৃদ্ধদের ইজি বা রকিং—দুই ধরনের চেয়ারই উপযোগী। বয়স্কদের ঘরে প্রাকৃতিক আলো–বাতাসের প্রয়োজনীয়তা আছে। দেয়াল সাদা বা যে কোনো হালকা রঙের হলে ভালো। কৃত্রিম আলোর ক্ষেত্রেও বেছে নিন সাদা।

দম্পতির শোবার ঘর

ঘরের বারান্দার পাশে থাকুক একজোড়া চেয়ার, একান্তে বসে গল্প করার জন্য
ছবি: নকশা

দম্পতির শোবার ঘরে মূলত থাকে খাট, টেলিভিশন, ওয়ার্ডরোব, ড্রেসিং টেবিল, জানালার পাশে কফি টেবিল বা স্টাডি টেবিল, ঘরে ভালো থাকবে এমন গাছ ইত্যাদি। ছোট ঘরগুলোতে জায়গা বাঁচানোর জন্য দেয়ালের সঙ্গে লাগানো ওয়ার্ডরোব বা ক্যাবিনেট দিয়ে সাজানো হচ্ছে। সদ্য যাঁরা দাম্পত্য শুরু করেছেন, তাঁদের শোবার ঘরকে কিছুটা ভিন্নভাবে সাজানো যায়। চাপা সাদা, ধূসর, নীল, হলদে সবুজ ইত্যাদি রং দিয়ে রাঙাতে পারেন শোবার ঘরের দেয়াল। যেকোনো একটি দেয়াল হাইলাইট করা যেতে পারে বিপরীত রং দিয়ে। মূল আলোর সঙ্গে বড় একটি ল্যাম্পশেড রাখতে পারেন। এ ছাড়া ঘরের একটি কোণে আড্ডা দেওয়ার জন্য চেয়ার থাকতে পারে।

দম্পতির শোবার ঘরে মূল আলোর সঙ্গে বড় একটি ল্যাম্পশেড রাখা যায়
ছবি: নকশা

কিশোর-কিশোরীর ঘর

কিশোর-কিশোরীর চিন্তাভাবনা একেবারেই আলাদা। নিজেদের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি জগৎ তৈরি করে রাখে তারা। তাদের ঘরটি সম্পূর্ণ তাদের পছন্দ এবং প্রয়োজনমতো সাজানো গেলেই ভালো। এই বয়সীদের থেকে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়েদের পোশাক একটু যেন বেশিই থাকে। তাই একটি বিছানার পর যে জিনিসটি প্রয়োজন, তা হলো প্রচুর জিনিস রাখার জায়গা। দেয়ালের সঙ্গে লাগোয়া বড় আলমারি সব থেকে ভালো কাজে দেবে এ সময়। এ ছাড়া ড্রেসিং টেবিল, পড়ার অথবা কম্পিউটার টেবিলের প্রয়োজন হয়।

কিশোর-কিশোরীর ঘরে আলোর ব্যবহারে ভিন্নতা
ছবি: নকশা

ঘরের একটি দেয়ালজুড়ে একই সঙ্গে আলমারি, ড্রেসিং টেবিল এবং স্টাডি টেবিল সেট কিনতে পাওয়া যায়। জায়গার স্বল্পতা থাকলে বহু কাজে ব্যবহার করা যায় (মাল্টিপারপাস) ধরনের আসবাব ভালো হবে। কিশোর হোক কিংবা কিশোরী, এই বয়সে বন্ধুরা আসে বাড়িতে। তাই শোবার ঘরে দুটো সোফা, ডিভান বা নিচু উচ্চতার বসার জায়গার ব্যবস্থা থাকা ভালো। রঙের ক্ষেত্রে পুরোটাই তাদের পছন্দে করা উচিত। কারও উজ্জ্বল রং, আবার কারও হালকা রং পছন্দ হতে পারে।

শিশুদের শোবার ঘর

বাচ্চাদের ঘরের আসবাবের মধ্যে আছে বিছানা, পড়ার টেবিল, খেলনা, কাপড় ইত্যাদি রাখার জন্য ওয়ার্ডরোব বা স্টোরেজ ইউনিট, বইপত্র রাখার জন্য শেলফ। বাচ্চাদের ঘরে যতটুকু সম্ভব খোলামেলা রাখার চেষ্টা করা উচিত। বাজারে এমন অনেক আসবাব পাওয়া যায়, যা একসঙ্গে অনেক কাজে ব্যবহার করা যায়। একের অধিক শিশু যদি একই ঘর ভাগ করে থাকে, তাহলে বাঙ্ক বেড কার্যকর ও যুগোপযোগী একটি সমাধান। ছবি আঁকতে ভালোবাসে, এমন শিশুর জন্য ঘরে রাখুন ছবি আঁকার একটি কোণ বা দেয়ালে রাখুন বোর্ড বা ক্যানভাস। আবার গল্পের বই পড়তে ভালোবাসে এমন শিশুর ঘরে রাখুন আরামদায়ক রিডিং কুশন, চেয়ার বা বিন ব্যাগ। ঘর বড় হলে আনুষঙ্গিক কিছু আসবাব রাখার কথা ভাবতে পারেন।

শিশুর ঘরের দেয়ালে আঁকা পছন্দের কার্টুন
ছবি: নকশা
দেয়ালের কার্টুন উড়ে এসে জুড়ে বসেছে আলমারির ওপর
ছবি: নকশা

রুমে ছোট একটি দোলনা বা ডিভানও রাখা যায়। ঘরের এক কোণে খেলার তাঁবু, খেলার জায়গা ইত্যাদি রাখতে পারেন, যদি জায়গা থাকে। দেয়ালে থাকল রঙিন কাগজের ঝালর, প্রিয় কার্টুনের ছবি। সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দিতে পারেন কাগজ দিয়ে বানানো চাঁদ-তারা, রকেট বা প্রিয় কিছু। শতরঞ্জির ওপর সাজিয়ে দিতে পারেন প্রিয় সব পুতুল। শিশুর ঘরের দেয়ালে সাধারণত হলুদ, গোলাপি, কমলা, নীল এসব রং ব্যবহার করা হয়। শুধু দেয়ালেই নয়, ছাদও হতে পারে ক্যানভাস। সে ক্ষেত্রে বিছানার ওপর সিলিংটি বেছে নিন। সিলিং জুড়ে থাকতে পারে নক্ষত্রপুঞ্জের চিত্র। নক্ষত্রপুঞ্জে বসিয়ে দিন রেডিয়ামের গ্রহ-নক্ষত্রের স্টিকার। দেয়ালচিত্রের কাহিনি পর্দা ও বিছানার চাদরে রাখলে ঘরটি শিশুর কাছে হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়।