জীবনের উপকরণগুলো যেভাবে বাক্সে বন্দী করে রাখতে পারবেন

বিশেষ কোনো ঘটনার স্মৃতি জড়ানো উপকরণগুলো যত্ন করে গুছিয়ে রাো যাবে বাক্সে।ছবি: অগ্নিলা আহমেদ

সৈকত থেকে কুড়িয়ে আনা ঝিনুক বা শামুকের খোল তেমন কোনো কাজে আসে না। কিন্তু শখের জিনিস ফেলতেও মন চায় না। বিশেষ কোনো ঘটনার স্মৃতি জড়ানো উপকরণগুলো তো দৈনন্দিন জীবনের জন্য নয়। তারপরও রেখে দিতে চায় মন। শিশুর ব্যবহৃত সামগ্রী, চিঠি, স্ট্যাম্প, শুভেচ্ছা কার্ড, বিয়ের কার্ড, ছবির অ্যালবাম, ক্যাসেট, সিডি, ডিভিডি, ব্যাজ, চুম্বক, ছোট পাথর—রাখতে চাইলে কী না রাখা যায়! ভ্রমণ কিংবা খেলার মাঠের প্রবেশ টিকিট, বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত স্যুভেনির বা স্মৃতিচিহ্ন, পত্রিকার পাতা, রেসিপি, রোজনামচা, স্কুলের ফলাফলের পুরোনো কাগজ, পুরোনো প্রেসক্রিপশন, রসিদ, শিশুর আঁকা প্রথম ছবি, ছোটখাটো খেলনা—তালিকার শেষ নেই।

অগোছালো থাকলে প্রয়োজনের সময় কাজের জিনিস যেমন খুঁজে পাওয়া যায় না, তেমনি ঘরটাও দেখায় এলোমেলো। জিনিসগুলো সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখতে চাই বাক্স। ধাতব উপকরণ, কাঠ, বাঁশ, বেত, পাট, হোগলা, কাগজের বাক্সে রোজকার ব্যবহারের সামগ্রী তো বটেই, পুরোনো দিনের ‘স্মৃতি’ও বন্দী করে রাখতে পারবেন। চাইলে উপহার দেওয়ার সময়ও ব্যবহার করতে পারেন এমন বাক্স। যাকে দিচ্ছেন, উপহারের পাশাপাশি বাক্সটাও তার কাজে লাগবে।

কাগজের বাক্সে রোজকার ব্যবহারের সামগ্রী রাখতে পারেন
ছবি: অগ্নিলা আহমেদ, বাক্স: র্সোস

বাহারি বাক্স

বাক্স বলতে আবার পুরোনো দিনের ট্রাঙ্কের মতো বিশাল আকারের কিছু ভেবে বসবেন না। নানা জ্যামিতিক আকারে পাওয়া যায় বাক্স। গোল, বর্গাকার এমনকি অষ্টভুজাকৃতির বাক্সের দেখা মিলবে। পানপাতা বা হৃৎপিণ্ড আকারের বাক্স, ত্রিভুজ কিংবা ডিম্বাকার বাক্সও পাবেন। কোনো বাক্সে আবার ছোট ছোট খোপ থাকে। কোনো বাক্সের ঢাকনার উল্টো দিকে কিংবা একেবারে নিচের অংশে থাকে আয়না। এগুলো সাধারণত গয়নার বাক্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কোনো বাক্সে থাকে বাটিক বা স্ক্রিন প্রিন্ট করা কাপড়ের আবরণ। ফুল, কল্কি কিংবা তারা যেমন ফুটে ওঠে এসব কাপড়ে, তেমনি আবার একরঙা কাপড়ও ব্যবহার করা হয়। প্যাচওয়ার্ক এবং রিকশাচিত্রের দেখা মিলবে যাত্রা বাংলাদেশ লিমিটেডের বাক্সে। চাইলে ফরমাশ দিয়েও গড়িয়ে নিতে পারেন পছন্দের বাক্স।

বাক্সের ওপর রঙিন নকশা
ছবি: অগ্নিলা আহমেদ, বাক্স: যাত্রা

ছিঁড়ে যাওয়া মালার পুঁতি হোক কিংবা আস্ত গয়না, বাক্সে রাখতে হলে মাপ হওয়া চাই ঠিকঠাক। যাত্রা বাংলাদেশ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ইমতেনান মোহাম্মদ জাকি বলছিলেন নরসিংদীর কারুশিল্পীর হাতে গড়া বাক্সের কথা। শক্ত কাগজ দিয়ে গড়া ভিতের ওপর প্যাচওয়ার্ক বা কোনো ছবির প্রিন্টের কাপড়ের আবরণ দিয়ে তৈরি হয় সুন্দর বাক্স। এগুলোর কোনোটি নানা রঙে রঙিন, কোনোটিতে পাবেন হালকা রঙের পরশ। খেয়াল রাখতে হবে, কাগজের বাক্সে যাতে পানি না লাগে। রিকশাচিত্র ও লোকজ শিল্পের নকশা করা কাঠ ও স্টিলের বাক্সও মিলবে। কোনোটি পানের বাটা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কোনোটি একেবারে ছোট, ২-৩ ইঞ্চি; কোনোটি আবার লম্বায় ১০ ও প্রস্থে ৬ ইঞ্চি।

আরও বাক্স

পুনঃচক্রায়িত পণ্য বিপণন সংস্থা সোর্সের সিনিয়র প্রকিউরমেন্ট অফিসার টুম্পা আক্তার জানালেন, তাঁদের বাক্সগুলো দেশজ উপকরণে তৈরি করা হয়। প্রকৃতি থেকে নেওয়া উপকরণে গ্রামবাংলার শৈল্পিক চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। নকশা ও গড়নেও রয়েছে বৈচিত্র্য। প্রাকৃতিক উপকরণের বাক্সে প্রকৃতি যেন আপনার অন্দরে উপস্থিত হবে। তবে অন্দরে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো রাখতে চাইলে হোগলা, বাঁশ ও পাটগাছের বাক্সগুলো ১৫ দিন অন্তর হালকা রোদে কিছু সময়ের জন্য রাখা ভালো বলে জানালেন তিনি। তবে বাক্সে কাপড়ের আবরণ থাকলে রোদে দেওয়া যাবে না। এসব বাক্সের কোনোটিতে পানি লাগতে দেওয়া যাবে না।

মাটির বাক্সে রাখতে পারেন গয়না
ছবি: অগ্নিলা আহমেদ, বাক্স: খুঁত

ফ্যাশন হাউস খুঁতে পাবেন মাটির বাক্স। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার ঊর্মিলা শুক্লা জানান, এ বাক্সগুলো গয়না রাখার জন্য বেশ। দৃষ্টিনন্দন এসব বাক্স অন্দরে যোগ করবে ভিন্ন মাত্রা। আড়ংয়েও পাবেন বিচিত্র উপকরণে তৈরি নানা আকারের বাক্স। পাট ও শীতলপাটির মতো ঐতিহ্যবাহী উপকরণের দেখা মিলবে। কোনোটায় আবার রয়েছে মখমল। বাঁশের বাক্সে পাবেন চোষা কাপড়ের নকশা। এমব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিক, বিডসের কাজও মিলবে। আছে ডোরাকাটা নকশাও। কাগজের বাক্সের ঢাকনায় সরু কাগজে গড়া ফুল-পাতা দেখায় দারুণ। মেহগনি, গামারি ও কেরোসিন কাঠ এবং প্লাইউডের বাক্সও পাবেন।

শীতলপাটির মতো উপকরণেও তৈরি করা হচ্ছে বাক্স
ছবি: অগ্নিলা আহমেদ

কিনতে চাইলে

আকার, উপকরণ ও নকশার ভিত্তিতে ঠিক করা হয় বাক্সের দরদাম। বাজার ঘুরে ৫৫ টাকার খুদে বাক্স যেমন পাবেন, তেমনি পাবেন ৫ হাজার ৫০০ টাকার বাক্সও। প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী এ সীমার মধ্যে বেছে নিতে পারেন চমৎকার সব বাক্স।