এই মৌসুমে ফুলগাছের জন্য যা প্রয়োজন

শীতে প্রকৃতি নিষ্প্রাণ হয়ে গেলেও বেশ কিছু ফুল কিন্তু এই সময়ই ফোটে। এসব ফুলের কিছু আবার বসন্তের প্রথম অবধি পর্যন্তও থাকে। তাহলে চলতি ও আসন্ন মৌসুমের কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু ফুলের গাছ লাগাতে পারেন এখনই। এসব গাছের যত্নআত্তিও প্রায় একই রকম।

যত্ন নিলে বসন্ত পর্যন্ত থাকবে শীতের ফুল
মডেল: ইভা, ছবি: সুমন ইউসুফ

ফুলগাছের জন্য চাই পর্যাপ্ত রোদ। খোলামেলা জায়গা এসব গাছের জন্য আদর্শ স্থান। বাড়ির সামনের খোলা জায়গা কিংবা ছাদে এসব গাছ রাখতে পারেন। বারান্দায় রাখতে হলেও খেয়াল রাখুন, গাছগুলো যাতে পর্যাপ্ত রোদ পায় আর পায় শিশিরের পরশ। ডেইজি, ক্যালেন্ডুলা, কারনেশন, ফ্লক্স, হলিহক, লুপিং কিংবা লাক্সফারের মতো ফুলগাছ দু-আড়াই মাস পর্যন্ত থাকে। আরও বেশি সময় পর্যন্ত থাকে ইনকা গাঁদা, চায়নিজ গাঁদা, রাজগাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, অ্যাস্টার, সেলভিয়া ও হেলিকুসুম। এমনটাই বলছিলেন রাজধানীর আসাদগেটে অবস্থিত ফলবীথি হর্টিকালচার সেন্টারের উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা জান্নাতুল মার্জিয়া।

ব্র্যাক নার্সারির সহযোগী কর্মকর্তা সোহানুর রহমান জানালেন, শীতের ফুল পিটুনিয়া, কসমস, ডায়ান্থাস, জিপসি আর ডালিয়াও থাকে মার্চ পর্যন্ত। এর মধ্যে পিটুনিয়া দারুণ জনপ্রিয়। বারো মাসের ফুল বাগানবিলাস, হাসনাহেনা, জবা, কামিনী, গোলাপ, কাঠগোলাপ, চামেলি সতেজ হয়ে ওঠে বসন্তে। শীত-বসন্তের এসব গাছের জন্য প্রয়োজন হয় বেলে-দোআঁশ মাটি, চাইলেই যা আলাদাভাবে কিনে নেওয়া যায়।

শীতের ফুল গাছ লাগানোর পর যত্নও নিতে হবে নিয়মিত
ছবি: সুমন ইউসুফ

আরও দুটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। একটি রোদ, অন্যটি পানি। রোদ কম পেলে ফুল কম ফোটে। মাটি ভেজা থাকা অবস্থায় গাছে পানি দেওয়া হলে গাছের কাণ্ড বা শিকড় পচে যায়।

চলুন, জান্নাতুল মার্জিয়ার কাছ থেকে জেনে নিই ফুলগাছের যত্নআত্তির আরও কিছু নিয়ম—

গাছ রোপণ

টবে গাছ লাগাতে চাইলে গাছের আকার অনুযায়ী টব বাছাই করুন। এই যেমন ১২ ইঞ্চি মাপের একটি টবে দু-তিনটি ক্যালেন্ডুলাগাছ লাগানো যায়। আবার কাঠগোলাপের মতো গাছের জন্য চাই ড্রামের মতো বড়সড় টব।

গাছ রোপণের সময় সতর্ক থাকুন, যাতে শিকড় নড়ে না যায়।

গাছ লাগানোর পর সার দিতে হবে
ছবি: নকশা

গাছে চাই সার

গাছ রোপণের এক সপ্তাহ পর শর্ষের খইল পচা পানি দিতে পারেন। তবে খইল পচা পানি ব্যবহারের আগে অবশ্যই তা পাতলা করে নিতে হবে। সপ্তাহ দুয়েক একইভাবে শর্ষের খইল পচা পানি ব্যবহার করতে পারেন। শর্ষের খইল পানিতে ভিজিয়ে ঢেকে রাখলে পচতে দিন দশেক সময় লাগে। পচে যাওয়ার পর তা পাতলা করার জন্য পর্যাপ্ত পানি মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিতে হবে। এরপর ব্যবহার করা যায় গাছের গোড়ায়। ব্যবহারের আগের দিন এবং ব্যবহারের দু-তিন দিন পর অবশ্যই গাছের গোড়া নিড়িয়ে নিন।

এর পর থেকে ১৫ দিন অন্তর গাছে সার দিন। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সার ব্যবহার করতে পারেন। কোনোবার জৈব সার, কোনোবার ভার্মিকম্পোস্ট, আবার কোনোবার রাসায়নিক সার দিতে পারেন। রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে চাইলে সমপরিমাণ টিএসপি ও মিউরেট অব পটাশ সারের মিশ্রণ তৈরি করে খুব সামান্য পরিমাণে দিতে হবে গাছের গোড়ায়। ১২ ইঞ্চি টবের জন্য সারের মিশ্রণ হবে ১ চা-চামচ। রাসায়নিক সার প্রয়োগের পর মাটি নিড়িয়ে দিন; পরদিন পানি দিতে হবে।

তবে বাড়িতে শিশু ও পোষা প্রাণী থাকলে রাসায়নিক সার ব্যবহার করবেন না। শর্ষের খইল পচা পানি কিন্তু গাছের জন্য খুবই ভালো। তাই চাইলেই অনায়াসে রাসায়নিকের ব্যবহার এড়িয়ে এই পানিই ব্যবহার করতে পারেন ১৫ দিন অন্তর।