বিলাসিতা নয় দরকারি

ঘরের আসবাব কেনার আগে অবশ্যই প্রথমে যা নির্ধারণ করা দরকার তা হলো, আপনি কোথায় থাকবেন। যদি বাসা ঠিক না করেই আসবাব পছন্দ করেন, তাহলে ভুল হবে। পরে দেখা যায়, অনেক আসবাব বাসায় সেট করা যাচ্ছে না। তাই বিয়ের পর নতুন বাসা ঠিক করে তারপর আসবাব কেনা উচিত। নতুন দম্পতিদের আগে দেখতে হবে তাঁরা যে ঘরে বাস করতে যাচ্ছেন, সেটি কেমন। অনেক বাসায় আজকাল রুমের ভেতরে পিলার তোলার কারণে জায়গা নষ্ট হয়। সেসব জায়গায় বুদ্ধি করে আসবাব ব্যবহার করতে হবে। বাড়ি পছন্দের পর আপনার সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করুন ঘরের কোথায় কী রাখবেন। আসবাব সাধারণত দীর্ঘদিন ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে কেনা হয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাব অনেক সময় ঘরের শোভা নষ্ট করে। নিজেদের বানানো বাড়ি হলে খুব একটা সমস্যা হয় না, কিন্তু যদি ভাড়া বাড়ি হয়, তবে বাসাবদলের সময় সবচেয়ে ঝামেলাপূর্ণ ও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে অতিরিক্ত আসবাব।

কোন ঘরে কী রাখবেন

বাড়ির প্রতিটি কক্ষ গুরুত্বপূর্ণ। সব দম্পতির নিজেদের বেডরুম সাজানো নিয়ে বিশেষ ভাবনা থাকে। কারণ, এই রুম থেকে দিনের শুরু ও শেষ। যদি আপনার বেডরুমের আয়তন হয় বড়, তবে একটি বিছানা, আলনা, ড্রেসিং টেবিল, ওয়ার্ডরোব রাখতে পারেন। যদি ঘরের আকার হয় মাঝারি, তবে বিছানার আকৃতি ছোট হওয়া ভালো। ড্রেসিং টেবিলের পরিবর্তে দেয়ালে আয়না টাঙাতে পারেন। আলনার পরিবর্তে ছোট আকারের ওয়ার্ডরোব ব্যবহার করতে পারেন। এই ঘরের দেয়ালে রাখতে পারেন একটি ঘড়ি আর ছবির ফ্রেম।

বসার ঘরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে সোফা। সোফা ঠিক কত সেট রাখবেন, সেটি নির্ভর করছে আপনার রুমের আকৃতি ও বাজেটের ওপর। সঙ্গে যোগ করতে পারেন টিভি ক্যাবিনেট, টি-টেবিল, বুক শেলফ। বুক শেলফ অনেকে বেডরুমে রাখতেও পছন্দ করেন। এটা নিজেদের পছন্দমতো সেট করাই ভালো।

সব বাসায় আলাদা ডাইনিং রুম থাকে না। সে ক্ষেত্রে বসার ঘরের একটা অংশ ডাইনিং হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। রুমের আকার বুঝে ডাইনিং টেবিল কিনুন। বেশি লোকজন না হলে চার চেয়ারসহ টেবিল পাতুন। তাতেও যদি জায়গার সংকুলান না হয়, তবে ভাঁজ করা যায় এমন টেবিল কিনুন। ফ্রিজ সাধারণত ডাইনিং রুমে রাখা হয়। জায়গা না থাকলে বেডরুম বা রান্নাঘরের সামনে বৈদ্যুতিক সংযোগ আছে, এমন কোনো জায়গায় রাখুন ফ্রিজ।

একান্ত নিজের

আসবাব নির্বাচনের সময় অন্দরের পরিসর কেমন, সেটা মাথায় রাখুন। রুমের সঙ্গে যদি বারান্দা থাকে, তাহলে এই জায়গাটুকু নিজেদের একান্ত হিসেবে সাজাতে পারেন। অনেক বেশি জিনিসপত্র এখানে মানাবে না। দুজনের জন্য বারান্দায় ছোট্ট দুটি বসার টুল রাখতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি বারান্দায় একটা দোলনা ঝোলানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। দোলনাকে চাইলে নানান ধরনের লেইস বা কাপড় দিয়ে রঙিন করতে পারেন। আবার নরম গদি আর কুশন দিয়ে করতে পারেন আরামদায়ক। গাছ ভালোবাসলে বারান্দার এক পাশে শেলফ দিয়ে সেখানে কিছু গাছ রাখতে পারেন। ঘরের ভেতরে অনেক বেশি আসবাব দিয়ে অন্ধকার করে ফেলা যাবে না। খোলামেলা রাখতে চেষ্টা করুন।

ভবিষ্যতের ভাবনা

খাট, ড্রেসিং টেবিল থেকে শুরু করে কাপড় রাখার আলমারি—সব কিছুই একটা সময় পরিবর্তন করতে হয়। নতুন ক্যাবিনেটসহ প্রচুর স্টোরেজ ইউনিট খুব জরুরি হয়ে পড়ে নতুন সংসারে। ঘরের আসবাবে আরেকটি বিশেষ দিক হলো রঙের সমন্বয়। একেকটি আসবাব যদি একেক রঙের হয়, তাহলে সেটা দেখতে ভালো লাগবে না। তাই রং বুঝে আসবাব কিনুন, যাতে সমন্বয় ঠিক থাকে। কাঠের আসবাব ছাড়াও আজকাল বোর্ড, স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম আর প্লাস্টিকের তৈরি আসবাবও ঘরে মানিয়ে যায় বেশ। দামও তুলনামূলক কম।

আসবাব কিনুন প্রয়োজন বুঝে। নতুন সংসারে যেসব আসবাব না হলেই নয়, কেবল সেগুলোই আগে কিনুন। একসঙ্গে অনেক আসবাব অনেকেরই সাধ্যে কুলোয় না। তা ছাড়া অল্প আসবাবে স্বল্প জায়গাতেই মনের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারবেন। ঘরও পরিপাটি থাকবে। সাশ্রয়ী মূল্যে কাঠের আসবাব কিনতে চাইলে যেতে পারেন রাজধানীর পান্থপথ, লালবাগ, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁও। এ ছাড়া ব্র্যান্ডের মধ্যে হাতিল, অটবি, রিগ্যাল, নাভানা, আখতার ফার্নিচার, পারটেক্স ফার্নিচার, ব্রাদার্স ফার্নিচার, নাদিয়া ফার্নিচার ও ইশো ফার্নিচার অন্যতম। হাতিলের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এইচ রহমান বলেন, ‘নতুন সংসারের প্রায় সবকিছুই নতুন করে কিনতে হয়। বিশেষ করে আসবাব। শুধু নতুন দম্পতিদের কথা ভেবেও নতুন নকশার আসবাব তৈরি করে হাতিল। ব্যবহারে আরামদায়ক সেসব আসবাব।’ ইএমআইয়ের মাধ্যমেও হাতিলের পণ্য কেনার সুযোগ রয়েছে।