টাইলস পরিষ্কার করবেন কীভাবে

টাইলস নিবিড়ভাবে পরিষ্কার (ডিপ ক্লিন) করার কিছু নিয়ম আছে। দেশি–বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও এক্সপার্ট ক্লিনারের  সঙ্গে কথা বলে তেমন কিছু পরামর্শ দিলেন তাইয়্যেবা তাবাসসুম

পরিষ্কার করার সময় শক্ত ব্রাশ ব্যবহার না করাই ভালো
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ভবনের অন্দরে–বাহিরে এখন থিমভিত্তিক নকশার চল। তাই টাইলসও পাওয়া যায় হরেক রকম। মার্বেল, কংক্রিট, পোরসেলিন, সিরামিক টাইলসের ব্যবহার চোখে পড়ছে বেশি। কোনো টাইলস হয়তো মেঝের তাপ ও  চাপ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে, কিছু টাইলস আবার দেখতে সুন্দর তবে ভঙ্গুর প্রকৃতির। কিছু টাইলস আর্দ্রতা সয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শক্তপোক্ত হয়, কিছু আবার আর্দ্রতা পেলে ক্ষয় হতে শুরু করে। তাই মেঝে বা দেয়াল যেখানেই টাইলস ব্যবহৃত হোক, সুবিধা-অসুবিধা আর পরিষ্কার করার উপায় জেনেই দীর্ঘস্থায়ী টাইলস লাগানো উচিত।

নিয়মিত টাইলস পরিষ্কার করার জন্য প্রয়োজন মাইক্রোফাইবার কাপড়, সাধারণ ডিটারজেন্ট বা সোপ, হালকা গরম পানি, নরম ঝাড়ু বা ব্রাশ। টাইলস সহজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছে নানা রকম নিয়ম।

সিরামিক

বাজারে সচরাচর বিভিন্ন আকারের চকচকে রংবেরঙের যেসব টাইলস দেখতে পাওয়া যায়, তার বেশির ভাগই সিরামিক টাইলস। আনগ্লেজড সিরামিক আজকাল পাওয়া যায়। এই টাইলসগুলোর চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কম, তাই পরিষ্কার করার সময় শক্ত ব্রাশ ব্যবহার না করাই ভালো। ডিশ সোপ অথবা সাদা ভিনেগার আর হালকা গরম পানি ব্যবহার করে সহজেই এমন টাইলসের দাগ পরিষ্কার করা যায়; এতে টাইলসের চকচকে ভাবটাও অটুট থাকে। আর যদি স্পঞ্জের কাপড় ব্যবহার করে টাইলস পরিষ্কার করেন, তাহলে অবশ্যই বারবার ময়লা পানি পরিবর্তন করতে হবে। সেই সঙ্গে পরিষ্কার করে পানি শুকিয়ে যাওয়ার আগে শুকনা সুতি কাপড় দিয়ে মেঝে মুছে ফেলতে হবে। তাহলে টাইলসে পানির ছোপ ছোপ দাগ লেগে থাকবে না।

ডিশ সোপ অথবা সাদা ভিনেগার আর হালকা গরম পানি ব্যবহার করে সহজেই এমন টাইলসের দাগ পরিষ্কার করা যায়
Sabina Yasmin

পোরসেলিন

অতি উচ্চ তাপমাত্রায় কাদামাটি-কোর্টজের সঙ্গে আরও নানা উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা হয় শক্তিশালী পোরসেলিন টাইলস। কম ভঙ্গুর ও সহজে দাগ পড়ে না বলে মেঝের টাইলস হিসেবে এটি বেশ জনপ্রিয়। পোরসেলিনে নানা রকমের নকশা কপি করা যায়। মার্বেল বা কাঠের  টেক্সচার—সবই হুবহু কপি করা যায়। পোরসেলিনের টাইলসও তরল সাবান অথবা ভিনেগারের সঙ্গে কুসুম গরম পানি মিশিয়ে পরিষ্কার করা যায়। তবে রান্নাঘর বা বাথরুমের টাইলসের হলদে ভাব কাটানোর জন্য সপ্তাহে একবার অ্যাসিডিক বা ব্লিচ ক্লিনার সল্যুশন ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি স্প্রে বোতলের সাহায্যে নোংরা জায়গায় ক্লিনার সল্যুশন স্প্রে করে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে। তারপর হাতে গ্লাভস পরে, বাথরুমের ব্রাশ দিয়ে হালকা করে ঘষে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। সরাসরি ক্লিনার সল্যুশন ব্যবহার করার আগে অবশ্যই টাইলসে অল্প করে ফেলে পরীক্ষা করে নেবেন, টাইলসের রং পরিবর্তিত হয়ে যায় কি না। অ্যাসিডিক ক্লিনার ব্যবহারে অনেক সময় টাইলস ক্ষয় হয়ে  যায় অথবা বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে। তাই এ ধরনের ক্লিনার ব্যবহার করার আগে এর পিএইচ লেভেল দেখে কেনা উচিত। পিএইচ লেভেল ৭ মানে হলো সেটা নিউট্রাল ক্লিনার।

আরও পড়ুন

টেরাকোটা টাইলস

ঐতিহ্যবাহী টেরাকোটা টাইলস রান্নাঘর, স্নানাগার, বসার ঘরে কিংবা বাড়ি থেকে বাগানের সংযোগ পথে অনেকেই পছন্দ করেন। লালচেরঙা পোড়ামাটির টাইলস গ্রামীন ভাবধারার নিদর্শন। টেরাকোটা টাইলস সাধারণত হাতে বানানো হলেও প্রাকৃতিক ভাবটা যন্ত্রের সাহায্যেও আনা যায়।  এই টাইলস পরিষ্কার করার আগে প্রথমেই ভ্যাকুয়াম করা বা শুকনা কাপড় দিয়ে ধুলা মুছে নেওয়া উচিত। শক্ত ময়লার জন্য প্রয়োজনে ব্রাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। হালকা গরম পানি আর ডিশ ওয়াসার দিয়ে মুছে নিলেই এসব টাইলসের ময়লা ভাব কেটে যায়। অতিরিক্ত ময়লার জন্য অক্সালিক অ্যাসিড আর পানির মিশ্রণ ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।

হালকা গরম পানি আর ডিশ ওয়াসার দিয়ে মুছে নিলেই ময়লা ভাব কেটে যায়
ছবি: প্রথম আলো

কুয়েরি টাইলস

অনেকটা টেরাকোটা ভাবধারার এই টাইলস টেরাকোটা থেকে উচ্চ তাপে বানানো হয়। তাই অনেকে বেশি মজবুত মনে করে মেঝেতে ব্যবহার করে থাকেন। যেহেতু অনেকটা টেরাকোটা ধরনের টাইলস, তাই পিএইচ নিরপেক্ষতা বুঝে তেমন ক্লিনার দিয়ে মুছে ফেলাই ভালো। এই টাইলসে অ্যাসিডিক ক্লিনার ব্যবহারে টাইলস ক্ষয়ে যেতে পারে। 

জেল্লিজ টাইলস

মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষত মরক্কোর তৈরি একধরনের পোড়ামাটি টাইলস। মেটে মেটে রঙের জ্যামিতিক নকশায় সাজানো এই টাইলসে ‘হাতে তৈরি’ ভাব থাকায় মিনিমালিস্ট ভক্তদের খুব পছন্দ। এই টাইলস বারান্দায় বা রান্নাঘরের দেয়ালে ব্যবহার করলে দু–চার দিন পরপর শুকনা কাপড় দিয়ে ধুলা পরিষ্কার করে নিতে হবে। অম্লধর্মী ক্লিনারের সাহায্যে এই টাইলস পরিষ্কার না করা ভালো।

স্লেট টাইলস 

যাদের বাড়ির রং সাদা-কালো মনোক্রম, তাদের জন্য স্লেট টাইলস। তামাটে কয়লা বা রুপালি রঙের মিশ্রণে এই টাইলসগুলা হয়ে থাকে। সাধারণত বাসার বাইরের রান্নাঘর, বারান্দা, কটেজে ব্যবহারের উপযোগী। এমন টাইলস দু–এক দিন পরপর ভ্যাকুয়াম করে বা শুকনা কাপড়ে মুছে রাখলে দেখতে সুন্দর লাগবে।  

মার্বেল

মার্বেলের টাইলসের প্রসঙ্গ এলে প্রথমেই আসে আভিজাত্য ও সুরুচির কথা। প্রাকৃতিক উপাদানের তৈরি বলে একটি থেকে আরেকটি টাইলসের ডিজাইনে বেশ পার্থক্য লক্ষ করা যায়। এই টাইলস সহজেই ঘর আলোকিত করে তোলে। গ্রানাইটের চেয়ে কম সহনীয় ও ভঙ্গুর হওয়ায় অন্দরে বেশি ব্যবহার করা হয়। মার্বেলের টাইলস যত্ন নিয়ে ব্যবহার করলে অনেক বছর পর্যন্ত নতুনত্বের ভাব রয়ে যায়। তবে অম্লধর্মী ক্লিনার মার্বেলে ব্যবহার করা যাবে না। মার্বেলের টাইলসে দাগ পড়লে এক চামচ বেকিং সোডা আর পানি মিশিয়ে পেস্ট করে দাগ বা ময়লা জায়গায় লাগাতে হবে। এরপর প্লাস্টিকের র৵াপিং দিয়ে মুড়িয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। শেষে সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিলে দাগও পরিষ্কার হবে, সেই সঙ্গে মার্বেলের ঝকঝকে ভাব ফিরে আসবে।

টাইলস যে ধরনেরই হোক না কেন, সাধারণ কিছু জিনিস মনে রাখা জরুরি

অনেক সময় দাগ বা ময়লা দুই কাটিং টাইলসের মাঝে বেশি লেগে থাকে। অনেকে এসবের জন্য স্টিমিং ক্লিনিংয়ের পরামর্শ দিলেও এটি টাইলসের জন্য ক্ষতিকর। তাই এতে বেকিং সোডা আর পানির পেস্ট তৈরি করে কয়েক ঘণ্টা প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে রাখাই ভালো। অথবা রাতভর এভাবে রেখে সকালে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায় সিলিকন বেজ সিলিং করিয়ে নিলে। এতে ময়লা, আর্দ্রতা বা পানি—কোনোটাই টাইলসের ক্ষয় করতে পারে না।