খাবার জায়গাটা কেমন, তার ওপর নাকি নির্ভর করে খাবার রুচি। ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন খাবার ঘরে পরিবেশিত খাবার আনে পরিতৃপ্তি। এ যুগে অনেক অন্দরেরই পরিসর সীমিত। খাবার ঘরটাও ব্যতিক্রম নয়। বিলাসবহুল ভবনে তো আর সবার থাকা হয়ে ওঠে না। তবে বাবুই পাখির নীড়ের মতো ক্ষুদ্র অন্দরেও পরিবারের সবার প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব সৃজনশীল আয়োজনে।
ছোট খাবার ঘরেও অতিথি আপ্যায়নের সুন্দর ব্যবস্থা করা যায়। প্রথাগত ধারণার বাইরে গিয়ে শৈল্পিক রূপে অন্দর সাজানো হচ্ছে আজকাল। খাবার ঘরে কেউ কেউ এমন টেবিল রাখছেন, প্রয়োজনে যেটিকে বড় করে নেওয়া যায়। ফিরে এসেছে চেয়ারে কভার দেওয়ার চল। বসার জন্য কাজে লাগানো হচ্ছে বেঞ্চ। দেয়াল ঘেঁষে গড়ে তোলা আলাদা একটি অংশে খাবার বা পানীয় রাখার ব্যবস্থাও থাকছে। বাঙালিয়ানার ঐতিহ্য কিংবা ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের আভিজাত্য—যেটিই পছন্দ হোক, সেই ধারাতেই গড়ে তোলা যায় খাবার ঘর। এমনটাই বলছিলেন রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের প্রধান ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলসান নাসরীন চৌধুরী।
ছোট পরিবার
ছোট পরিবারের জন্য এমন টেবিল রাখতে পারেন, যেটিকে বিস্তৃত করার সুযোগ থাকে। টেবিলের দুই পাশে কবজার সহায়তায় আলাদা অংশ আটকানো থাকলে প্রয়োজনে টেবিলের পরিধি বাড়ানো যায়। তা ছাড়া ছোট পরিবারের সদস্যদের রোজকার ব্যবহারের জন্য রান্নাঘরের এক পাশেও একটি চারকোনা টেবিল রাখা যায়। এই টেবিলের নিচে চারটি টুল ঢুকিয়ে রাখলে প্রয়োজনের সময় বের করে বসা যায়। এতে করে ব্যস্ততার সময় রান্নাঘর থেকে খাবার ঘর পর্যন্ত বাটি আনা-নেওয়ার সময় বেঁচে যায়।
পরিবেশনে ভিন্নতা
অনেক অতিথির সমাগম হলে খাবার টেবিলে সবার জায়গা না-ই হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে সাধারণত বয়স্ক বা হাঁটুর সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চেয়ারে বসতে দিয়ে বাকিরা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেন। খাবার টেবিলে খাবার দেওয়া থাকে। যে যার মতো খাবার উঠিয়ে নেন। প্রয়োজনে আরেকটি ছোট টেবিল পাশে রেখে সেখানেও কিছু খাবার, মিষ্টান্ন কিংবা পানীয়ের জগ, বোতল ও গ্লাস রেখে দিতে পারেন। উৎসব-আয়োজনে অতিথিদের জন্য তো বটেই, রমজান মাসে বাড়ির লোকেদের জন্যও এমন ‘পানীয় কর্নার’ করতে পারেন।
দেয়াল ঘেঁষে খাবার রাখা
খাবার পরিবেশনের আরেকটি জায়গা হতে পারে ঘরের একটা দেয়াল ঘেঁষে গড়ে তোলা তাকের উপরিভাগ। তাকের ভেতরের অংশে তৈজসপত্র থাকে। উপরিভাগটা গড়া হয় কাঠ, মার্বেল, পাথর বা টাইলস দিয়ে, যেখানে অনায়াসেই থালা, চামচ, গ্লাস, এমনকি খাবারের বাটি বা পানীয়ও রেখে দেওয়া যায়।
চলমান পরিবেশনা
বারবার উঠে খাবার আনতে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন অতিথি। কারও বারবার ওঠাবসায় অসুবিধাও থাকতে পারে। টি-ট্রলিতে টিস্যু বক্স, চামচ, কাঁটাচামচ, টুকটাক খাবার গুছিয়ে প্রত্যেকের সামনে ধরতে পারেন। একজনের প্রয়োজন শেষে পরের জনের কাছে ঠেলে নেওয়া যায় অনায়াসেই।
দেয়ালে ‘লুকানো’ টেবিল
ছোট অন্দরে দেয়ালের সঙ্গে কবজা দিয়ে আটকে ‘লুকিয়ে’ রাখা যায় পরিবেশনের জায়গাটাকে। প্রয়োজনে দেয়াল থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া যায় চেইনের সাহায্যে, নিচে পায়াও থাকে। গুটিয়ে দিলে সেঁটে থাকে দেয়ালে, অনেকটা সৌন্দর্যবর্ধন সামগ্রীর মতো। রিকশাচিত্র বা অন্য নকশা করা যায় এতে।
মানানসই অনুষঙ্গ
অন্দরে রাখুন মানানসই উপকরণ। বাঙালি ধারায় কাঠ, বাঁশ, বেত মানায়। আবার ভিক্টোরিয়ান ধারায় পাবেন আভিজাত লুক। তবে একই বাড়িতে দুই রূপের সংমিশ্রণ কাম্য নয়। ছোট ঘরে তুঁত, বাদামি বা কফিজাতীয় রঙের আসবাব রাখবেন না। ছোট ঘরের দরজার ফ্রেম, পর্দা, টেবিল রানার, চেয়ারের কভার প্রভৃতি সাদা বা হালকা রঙের হলে ভালো। হালকা টেবিল রানারে মানাবে রঙিন তৈজস। ছোট টেবিলে চাই মানানসই আকারের তৈজস। টেবিল রানার, চেয়ারের কভার, পর্দা প্রভৃতি রঙিন হলে সাদা বা চাপা সাদা রঙের তৈজস বেছে নিন।
শেষ কথা
কখনো খাবারের ওপর কেন্দ্রীভূত আলোর প্রয়োজন, কখনো আবার অতিথিদের পরস্পরকে ভালোভাবে দেখার জন্য চাই বিস্তৃত আলো। তাই এমন বাতির ব্যবস্থা করতে পারেন, যা প্রয়োজনে ওঠানো-নামানো যায়।
রান্নার পর খাবার ঘরে কয়েকটা মোমবাতি জ্বালিয়ে দিন। আঁশটে বা মসলার গন্ধ চলে যাবে।
পুরোনো জামদানি শাড়ির পাড় দিয়ে পেলমেট বানাতে পারেন। শাড়ি কেটে পর্দার নিচে পাড়ও লাগাতে পারেন।
কিছুদিন একটি রঙের, আবার কিছুদিন ভিন্ন রঙের কভার রাখতে পারেন চেয়ারে। ভিন্নতা আসবে।