বিশ্বের যে অন্দরসাজগুলো এখন বাংলাদেশের ঘরে

অন্দর আর বাড়ির আঙিনায় শোভা পাচ্ছে সবুজ গাছপালা। অন্দরে প্রাকৃতিক আলো বেশি চাচ্ছে মানুষ। দেয়ালে দুই ধরনের রঙের, স্মার্ট হোম ডিভাইসগুলোর ব্যবহার বেড়েছে। বিশ্ব বাজারে অন্দরসজ্জায় যা চলছে, বাংলাদেশের বাড়িগুলোতেও সেগুলো দেখা যাচ্ছে।

সময়ের সঙ্গে মানুষই বদলে যায়। তাই অন্দর বদলাবে, এ আর নতুন কী! মানুষের সামর্থ্য, রুচি, প্রয়োজন, আন্তর্জাতিক ধারা, নান্দনিকতা অনুযায়ী প্রতিনিয়ত অদলবদল হচ্ছে অন্দরের। ইন্টারনেট ক্রমেই ঘুচিয়ে দিয়েছে দূরত্ব; তাই বিশ্ব বাজারে অন্দরসজ্জায় যা চলছে, বাংলাদেশেও চটজলদিই তা ঢুকে পড়ছে। এই মুহূর্তে অন্দরসাজের চলতি ধারায় কোন কোন বিষয় রয়েছে, দেখে নেওয়া যাক।

কাচের বড় দরজা বা জানালা দেওয়ার প্রচলন দেখা যাচ্ছে
ছবি: নকশা

ঘরের ভেতর সূর্যের আলো

মহামারিকালের পর থেকে মানুষ এখন অনেক বেশি স্বাস্থ্যসচেতন। মানুষ এখন প্রাকৃতিক আলো বা লাইট থেরাপির গুরুত্ব বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। তাই অন্দরে যেন যথেষ্ট প্রাকৃতিক আলো ঢুকতে পারে, সেটা গুরুত্ব পাচ্ছে। ফলে নতুন বাড়িতে, বসার ঘর, শোবার ঘর, বারান্দায় ব্যবহার করা হচ্ছে স্বচ্ছ কাচের পার্টিশন। পুরোনো বাড়ির ইট-সিমেন্ট ভেঙে সেখানে বসে যাচ্ছে কাচের দেয়াল। সেই দেয়াল সরিয়ে দিলেই বাহিরকে আমন্ত্রণ জানানো যায় অন্দরে। সকালের রোদ গায়ে মেখে পত্রিকা হাতে চা খেতে খেতে একটা আয়েশি সময় পার করাটা আর বিলাসিতা নয়, রীতিমতো চাহিদা এখন। নতুন ভবন যেসব বানানো হচ্ছে, সেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে কাচের দেওয়াল।

অন্দরে প্রাকৃতিক সবুজ

অন্দর আর বাড়ির আঙিনায় শোভা পাচ্ছে সবুজ গাছপালা। ঢাকা মহানগরীর মানুষ ইট-পাথর, মানুষের ক্লান্ত মুখ, কালো ধোঁয়া, যানজট আর কংক্রিটের জঙ্গল দেখতে দেখতে ক্লান্ত। সে রকম পরিস্থিতে একটু স্বস্তি দেয় ডেস্কে রাখা মানিপ্ল্যান্টের কলাপাতা রঙের সদ্যগজানো পাতা বা অন্দরেই টবে লাগানো হাসনাহেনার সুবাস। ল্যাপটপের পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে সবুজের দিকে তাকিয়ে কয়েক সেকেন্ডের বিরতি মনের অন্দরে এনে দেয় স্বস্তি। মহামারিকালে মানুষ ছাদবাগানের প্রতি যত্নশীল হয়েছিল, সেই ছাদবাগান এখন ‘কাস্টমাইজড’ হয়ে ঢুকে পড়েছে বাড়ির অন্দরেও।

ঘরের ভেতর গাছ রাখার পাশাপাশি চিকের ব্যবহার বেড়েছে
ছবি: নকশা

শিকড়কে অন্দরে ঠাঁই

নিজস্ব সংস্কৃতির উপাদানে অন্দর সাজানো এখন আর শৌখিনতা নয়, বরং চলতি ধারা। বাংলাদেশেও বেড়েছে মাটি, কাঠ, হোগলাপাতাসহ নানা প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি অনুষঙ্গের বিক্রি। নকশি কাঁথা, শীতলপাটি, শতরঞ্জি এখন অনেক শহুরে বাড়িতেই পাওয়া যাবে। প্রকৃতির দিকে তাকান, কোনো কিছুই একেবারে সোজা নয়। পাহাড়, নদী, গাছ, পাতা—এই সবকিছুর কাঠামোয় আছে নিজস্ব ঢং। ২০২২ সালে আসবাবের নতুন ডিজাইনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে প্রকৃতি থেকে অনুপ্রাণিত নকশা। কাঠ দিয়ে বানানো টুল বা একটা ডাইনিং টেবিলে কাঠের ওই প্রাকৃতিক লুক রেখে দেওয়া হচ্ছে। বিছানার চাদর বা জানালার পর্দা—সেখানেও উঠে আসছে প্রকৃতি।

ডাইনিং টেবিলে কাঠের প্রাকৃতিক লুক রেখে দেওয়া হচ্ছে
ছবি: নকশা
আরও পড়ুন

জিম ঢুকে পড়েছে ঘরে

মহামারিকালে যা কিছু বেশি বিক্রি হয়েছে, তার ভেতর অন্যতম ছিল ট্রেডমিল। কেননা, ঘর থেকে বের হওয়া বারণ! এভাবেই স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের ঘরের একটা অংশ এখন হয়ে উঠেছে জিমনেসিয়াম।

ঘরেই এখন ব্যায়াম করছেন অনেকে
ছবি: নকশা

অন্দরে উন্নত প্রযুক্তি

বাংলাদেশের বাসাবাড়ির অন্দর এখনো প্রযুক্তিকে আপন করে নেয়নি। তবে বিশ্বব্যাপী স্মার্ট হোম ডিভাইসগুলোর ভেতর রোবট ভ্যাকিউম, স্মার্ট এয়ার পিউরিফায়ার, পেট ক্যামেরা, স্মার্ট ডিসপ্লে অথবা অন্দরে নানা কিছুতে অ্যালেক্সা বা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের ব্যবহার চলছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের অন্দরও হয়ে উঠবে ‘স্মার্ট’।

আর নয় সাদা

বেশ কয়েক বছর অন্দরে রাজত্ব করেছে সাদা। দেয়াল, বিছানার চাদর, পর্দা থেকে শুরু করে অন্দরের একটা বড় অংশ ছিল সাদায় মোড়ানো। এখন সাদার জায়গা নিচ্ছে যেকোনো রঙের হালকা প্যালেট। এতে অন্দর যেন একটু স্বাধীনতা উপভোগ করছে। চোখের দৃষ্টিও সহজেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এখান থেকে ওখানে।

থ্রিডি আর্ট

কনটেমপোরারি আর্টের পাশাপাশি জায়গা করে নিচ্ছে থ্রিডি আর্ট। এ ছাড়া আগে অন্দরে ঝুলিয়ে রাখা শিল্পকর্মে ছিল রঙের বাহার, আর এখনকার শিল্পকর্মে প্রাধান্য পাচ্ছে এক রং, বিশেষ করে সাদাকালো আর নীলের বিভিন্ন শেড।

দেয়ালে দেখা যাচ্ছে দুইটি রঙের ব্যবহার
ছবি: নকশা

বেড়েছে ওপেন কিচেনের জনপ্রিয়তা

বাড়ির সৌন্দর্য বা কাজের স্বস্তির জন্য ওপেন কিচেনের কদর বেড়েছে। তবে আমাদের দেশে রান্নায় ব্যবহৃত মসলা ওপেন কিচেনের উপযোগী নয়। সে ক্ষেত্রে এখানে ওপেন কিচেনকে মূলত ড্রাই কিচেন হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে।

বাইকালারিং বা দুইরঙা

দুই ধরনের রং ব্যবহার করে বৈচিত্র্য সৃষ্টির মাধ্যমে অন্দরকে করে তোলা হচ্ছে আকর্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে, একই রঙের গাঢ় শেড আর হালকা শেড বসে যাচ্ছে পাশাপাশি। অনেক সময় হালকা শেডের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে সাদা। অন্দরে বাইকালারিং এনেছে চাঞ্চল্য।

আরও পড়ুন

টেকসই অন্দর

জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ব উষ্ণতর হয়ে যাওয়া, প্রকৃতি ধ্বংস—এসবও প্রভাবিত করছে অন্দরসজ্জাকে। যে বাড়িতে প্রচুর প্রাকৃতিক আলো–বাতাস ঢোকে, বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা কম, সোলার প্যানেল আছে, প্লাস্টিক বা প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর উপাদানে তৈরি আসবাব বা ব্যবহার্য জিনিসপত্র নেই, শাকসবজি–ফলমূল বাড়ির ছাদে বা আঙিনায় চাষ হচ্ছে, অন্দরে সবুজের স্বস্তি—একে আপনি বলতে পারেন টেকসই অন্দর।

টেকসই অন্দর এখন জনপ্রিয় ধারা
ছবি: নকশা

একটা জায়গার বিবিধ ব্যবহার

বাড়ির অন্দরে কোনো একটি কোণকে নিজের জন্য ভাবা আর একই জায়গাকে একাধিক কাজে ব্যবহার করাও গুরুত্ব পাচ্ছে। এই সবকিছুর ওপর মিনিমাল জীবনধারার অংশ হিসেবে মিনিমাল অন্দরও এখন চলতি ধারা। আগামী বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত মিনিমালিজমের দাপট থাকবে। যা কিছু একান্তই দরকারি, সেগুলোই থাকবে অন্দরে। জায়গাজুড়ে থাকা লোকদেখানো জিনিসপত্র অনলাইনে সেল করে ‘বিদায়’ দেওয়া হয়েছে আন্দরসজ্জার চলতি ধারায়।

আরও পড়ুন