২০২৪ সালের অন্দরসজ্জা কেমন হবে?

২০২৪ সালে এ দেশের অন্দরসজ্জায় থাকছে মেটে রং, হালকা আসবাব এবং প্রাণ ও প্রকৃতির ছোঁয়া। উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার সীমিত রাখা হচ্ছে নির্দিষ্ট কোনো কোনো জায়গায়। দেয়ালসজ্জায় বৈচিত্র্যময় অনুষঙ্গও দেখা যেতে পারে। দেশজ কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে উপস্থাপন করে—এমন অনুষঙ্গ যেমন থাকছে, তেমনি বৈশ্বিক পরিসরে সমাদৃত ধারা এবং রংও জায়গা করে নিতে পারে এ দেশের অন্দরে।

কয়েক বছর ধরেই অন্দরে হালকা আসবাবের চল দেখা যাচ্ছে। অন্দরে প্রশান্তির পরশ চান সবাই। তাই রঙের রকমারিও নেই। অনুজ্জ্বল রঙের প্রাধান্য থাকছে অন্দরে। আসবাবের ক্ষেত্রে সমসাময়িক ধারাটাই জনপ্রিয়। তবে অন্দরসজ্জায় একাধিক ধারার সমন্বয়ও পছন্দ করছেন কেউ কেউ, যা চলছে বিশ্বজুড়েই। এ ক্ষেত্রে পুরো ঘর একই ধারায় সাজানো হলেও দু-একটি অনুষঙ্গ ভিন্ন ঘরানার হয়ে থাকে। এই ভিন্নতা আসতে পারে রঙে, আসবাবের ধরনে কিংবা অন্দরসজ্জায় ব্যবহৃত কোনো কাপড়ে। তবে যেটিই যেভাবে করা হোক না কেন, স্বস্তির দিকটাই প্রাধান্য পাবে। এমনটাই জানালেন আরএমএ আর্কিটেক্টসের প্রধান স্থপতি রাফিয়া মারিয়াম আহমেদ।

২০২৪ সালে এ দেশের অন্দরসজ্জায় থাকছে মেটে রং, হালকা আসবাব এবং প্রাণ ও প্রকৃতির ছোঁয়া
ছবি : প্রথম আলো

অন্দরে প্রকৃতি

অন্দরে এখন গাছ রাখছেন অনেকে। এ বছরও এই ধারা চলমান থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য মাধ্যমেও প্রকৃতিকে নিয়ে আসা হচ্ছে। বাঁশ, বেত, কাঠ ও মাটির মতো প্রাকৃতিক উপকরণ ফিরে আসছে অন্দরে। বৈশ্বিক ধারায় ফুলেল কাজ, ফিতা বা লেইসের মতো উপকরণ পাবে গ্রহণযোগ্যতা।

রঙের ছটা

দেয়াল বা মেঝের জন্য নিরপেক্ষ রং বেছে নেওয়ার চল থাকবে এ বছর। একটা অংশে অবশ্য কিছুটা রঙের পরশ থাকতে পারে। বিশেষ করে বড় জায়গার ক্ষেত্রে হালকা ও গাঢ় রঙের সমন্বয় করা যেতে পারে। ছোট জায়গার জন্যও বেছে নিতে পারেন পেঁয়াজরং, জলপাই সবুজ বা সবুজের অন্যান্য হালকা শেড।

দেয়াল বা মেঝের জন্য নিরপেক্ষ রং বেছে নেওয়ার চল থাকবে এ বছর
ছবি: সংগৃহীত

বৈশ্বিক ধারা থেকে অন্দরের নানা অনুষঙ্গের জন্য বাদামি, ধূসর, পিচ বা অ্যাপ্রিকটের মতো রং বেছে নিতে পারেন। অ্যাপ্রিকটের রঙের সঙ্গে নিরপেক্ষ ও প্রাকৃতিক রঙের সমন্বয় আনতে পারে উজ্জ্বল বৈপরীত্য।

দামি রত্নের রং কিংবা গোলাপি, কমলা আর লাল রংও আসতে পারে অন্দরের অনুষঙ্গে। বৈশ্বিক ধারায় কিন্তু এমন রংও আসতে পারে, যা সাধারণত কেউ অন্দরের রং হিসেবে ভাবেন না।

আসবাবের ধারা

আসবাবের রং হিসেবে প্রাকৃতিক কাঠের রং জনপ্রিয় থাকবে। হালকা শেডের কাঠরংও দেখা যেতে পারে। দেয়াল আর মেঝে যদি হয় নিরপেক্ষ রঙের, তাহলে আসবাবে ব্যবহৃত কাপড় একটু রংচঙে হলেও ক্ষতি নেই।

আধুনিক ধারায় সাদামাটা, মসৃণ আসবাবই জনপ্রিয়। তবে দু-একটা পুরোনো আসবাবও রাখা যেতে পারে। পুরো অন্দরে ভিন্নমাত্রিক এমন কিছু থাকলে সেটিকেও ভিত্তি করা যেতে পারে।

আধুনিক ধারায় সাদামাটা, মসৃণ আসবাবই জনপ্রিয়
ছবি: প্রথম আলো

একটা ফাঁকা দেয়ালের পাশে গাছের গুঁড়ির মতো বেঞ্চ রেখে তার পাশে ফ্লোর ল্যাম্প দাঁড় করিয়ে দিলে দারুণ দেখাবে। আসবাবের ধাতব উপকরণের ক্ষেত্রে ধাতব রঙের ব্যবহার হবে, তবে অতিরিক্তভাবে নয়।

আরএফএল গ্রুপ ও রিগ্যাল ফার্নিচারের মার্কেটিং ডিরেক্টর চৌধুরী কামরুজ্জামান বলেন, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের পছন্দ ও চাহিদায় এসেছে পরিবর্তন। সে কথা মাথায় রেখেই নতুন বছরে রিগ্যাল ফার্নিচারের পণ্যবহরে যুক্ত করা হবে মাল্টিপারপাস, স্মার্ট ও স্টাইলিশ ডিজাইনের আসবাব। মধ্যবিত্তের ক্রয়সীমার মধ্যেই থাকবে নতুন এসব পণ্য।

আলোময় অন্দর

উষ্ণ আলোর ধারা চলবে এ বছর। হলদে ধাঁচের এই আলো অন্দরের পরিবেশে স্বস্তিদায়ক। তবে পড়ালেখা বা রান্নার মতো কাজের জায়গায় পুরোনো সাদা আলোটাকেই রাখতে চান কেউ কেউ।

চাইলে এমন জায়গায় দুই ধরনের আলোর ব্যবস্থাও রাখতে পারেন, যাতে প্রয়োজনমাফিক যেকোনোটি বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে।

দেয়ালসজ্জায় থাকতে পারে বৈচিত্র্যময় আকার-আকৃতি
ছবি: প্রথম আলো

দেয়ালসজ্জায় নতুনত্ব

দেয়ালসজ্জায় থাকতে পারে বৈচিত্র্যময় আকার-আকৃতি। শুনতে একটু অন্য রকম মনে হলেও পুরোনো সিরামিকের থালা, জামদানি কাপড় কেটে বাঁধাই করে রাখা কিংবা দেশজ ঐতিহ্যবাহী মালা বা চুড়ির মতো উপকরণ কাজে লাগানো যায়। দেয়ালের একটা কোনাকে এমন উপকরণ দিয়ে সাজালে পুরো ঘরেই আসবে নতুনত্ব।

বৈশ্বিক ধারায় দেয়ালে ম্যুরালের ব্যবহার হতে পারে, ভাস্কর্যের মতো শৈল্পিক অনুষঙ্গও যুক্ত হতে পারে দেয়ালে।