গরমে নতুন এসি লাগানো বা পুরোনোটা চালু করার আগে এই কাজগুলো করুন

ক্যালেন্ডারের পাতা মেনেই যেন এবার শীত বিদায় নিল। শীতের মাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে গরমের তীব্রতা। ফলে শীতের সময় অবসরে যাওয়া সিলিং ফ্যান কিংবা এসির মতো শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রকে আবারও চলবে কাজে নামানোর পালা। দুই মাস নিশ্চল থাকার পর হঠাৎ করে সচল করতে গিয়ে যেন কোনোরূপ বিপত্তিতে না পড়েন, তার জন্য এই সচেতনতামূলক লেখা। প্রায় প্রতিবছরই খবরে উঠে আসে এসি বিস্ফোরণের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। একটুখানি পূর্বসতর্কতা ঠেকাতে পারে বড় দুর্ঘটনা।

নতুন এসি কিনছেন এখন অনেকেই। মডেল: মারসিয়া ও বাপ্পা
সুমন ইউসুফ

ট্রান্সকম ডিজিটাল–এর সেলস অ্যান্ড সার্ভিস মেইন্টেন্যান্সে কর্মরত টেকনিশিয়ান মনির হোসেনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলো। আমাদের নাক ও মুখ বন্ধ থাকলে যেমন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসবে, ঠিক তেমনই যান্ত্রিক ত্রুটি কিংবা ময়লা জমে এসির কমপ্রেসর বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে বিস্ফোরণের মতো অঘটন ঘটতেও পারে। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত সার্ভিসিং করার প্রতি জোর দেন তিনি।

এসি দুর্ঘটনা এড়াতে যেসব বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত

বাসাবাড়ি কিংবা অফিস রুমের আকার অনুযায়ী সঠিক মাত্রার এসি নির্বাচন করতে হবে। যেমন ১৫০ বর্গফুট জায়গার জন্য অফিসের ক্ষেত্রে দেড় টন আর বাসাবাড়ির ক্ষেত্রে এক টন ধারণক্ষমতার এসি হলেই যথেষ্ট।

প্রতিযোগিতার বাজারে কম মূল্যে নিম্নমানের এসি বিক্রি হচ্ছে অনেক স্থানে। এসব এসির গুণগত মান খারাপ হওয়ায় সহজেই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। তাই উচিত সরাসরি শোরুম থেকে নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের এসি কেনা। এমনটাই জানালেন ট্রান্সকম ডিজিটালের কারওয়ান বাজার শাখার সহকারী শাখা ব্যবস্থাপক মেহেদি হাসান।

ঘরের মাপ অনুযায়ী এসি কেনা উচিত
ছবি: প্রথম আলো

এসি লাগানোর সময় ইনডোর ও আউটডোর অংশে কিছু বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক থাকা দরকার। ইনডোরে মানে ঘরের ভেতরের অংশে এসির অবস্থান হবে রুমের ছাদ থেকে কমপক্ষে ৩-৫ ইঞ্চি নিচে। তাতে রুমের বাতাস টেনে নেওয়া সহজ হবে এবং এসিও স্বাভাবিকভাবে কর্মক্ষম থাকবে। আউটডোরে মানে ঘরের বাইরের অংশ এমনভাবে স্থাপন করতে হবে, যেন দেয়াল থেকে এর পেছনের অংশে কমপক্ষে ৭ ইঞ্চি ফাঁকা জায়গা থাকে। এর সামনে কমপক্ষে ৫ ফুট জায়গা ফাঁকা থাকা দরকার। এই ফাঁকা জায়গা ১ ফুটে নেমে এলে এসি থেকে বের হওয়া গরম বাতাস উল্টো আবার ভেতরে যেতে শুরু করবে এবং দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিয়ে নিয়মিত সার্ভিসিং করানো প্রয়োজন। অন্তত ছয় মাস পরপর এসির সার্বিক অবস্থা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।

এসি ছাড়ার আগে সার্ভিসিং করিয়ে নিন
ছবি: নকশা

শীতের সময়টায় দীর্ঘদিন এসি চালু না থাকায় হঠাৎ করে চালু করতে গেলে তাৎক্ষণিক কোনো যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে কিংবা স্রেফ ভেতরে ময়লা জমেও বিপত্তি দেখা দিতে পারে। তাই দীর্ঘদিন পর এসি চালু করার সময় পেশাদার টেকনিশিয়ানের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। কোনোরূপ অসংগতি চোখে পড়লে টেকনিশিয়ান তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেসব অসংগতি কাটিয়ে উঠতে পারবে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

একটানা দীর্ঘ সময় এসি না চালিয়ে মাঝেমধ্যে বিরতি দেওয়া দরকার।

এসি থেকে কোনো বিরূপ গন্ধ বা শব্দ পাওয়া গেলে তৎক্ষণাৎ এসি বন্ধ করে পেশাদার টেকনিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা করে সমস্যার সমাধান খুঁজে নিতে হবে।

বৈদ্যুতিক সংযোগ, সকেট, ফিল্টার নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করে দেখুন ঠিক আছে কি না।

হাই ভোল্টেজ এড়াতে বাড়িতে সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করুন।

বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মতো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এসি বন্ধ রাখুন।

এসি লাগানোর সময়েই টেকনিশিয়ানের ফোন নম্বর সংগ্রহে রাখুন। কোনোরূপ অসংগতি চোখে পড়লে ও নিয়মিত সার্ভিসিং করানোর জন্য দ্রুত যোগাযোগ করতে পারবেন।