বাইরে বৃষ্টি, বাড়ির ভেতরে সব ঠিক আছে তো?
বৃষ্টি না থাকলেও বর্ষাকালে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ছত্রাকের উপদ্রবও। খাবার, পোশাক, জুতা—সবকিছুরই বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেশি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
বাইরে কখনো ঝরঝর, কখনো টিপটিপ, কখনোবা রোদ। বর্ষায় আনন্দের পাশাপাশি ভোগান্তিও কম নয়। বৃষ্টি না থাকলেও বর্ষাকালে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ছত্রাকের উপদ্রবও। খাবার, পোশাক, জুতা—সবকিছুরই বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেশি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়েই পরামর্শ দিলেন আকিজ কলেজ অব হোম ইকোনমিকসের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমাইয়া হোসেন।
আসবাবের যত্ন
অনেক বাড়ির দেয়াল ও মেঝে এ সময় স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে। দেয়ালের এই আর্দ্রতা কাঠের আসবাবেরও নিজের দিকে টানার প্রবণতা আছে। এ জন্য আসবাবকে ছত্রাক থেকে বাঁচাতে দেয়াল থেকে কিছুটা দূরে রাখুন। দেয়াল ঘেঁষে রাখতে হলে আসবাবের পেছনে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখুন।
বৃষ্টির সময় ঘরের জানালা বন্ধ রাখার চেষ্টা করুন। কারণ, পানির ঝাপটা আসবাব ও দেয়াল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ফলাফল, আসবাবে ছত্রাকের বিস্তার। সম্ভব হলে জানালা থেকে একটু দূরে আসবাব সাজান। অসতর্কতার কারণে বৃষ্টির পানি লেগে গেলে দ্রুত শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।
কোনোভাবেই কাঠের আসবাবকে কড়া রোদে শুকাতে দেবেন না। এতে আসবাবে ফাটল দেখা দিতে পারে।
জুতা ও ব্যাগের যত্ন
বর্ষায় বৃষ্টির পানি ও কাদামাটি লেগে জুতায় ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। সেখান থেকে পায়ে দেখা দিতে পারে ছত্রাক, র্যাশসহ বিভিন্ন সমস্যা। জুতা যদি বৃষ্টিতে নাও ভেজে, তাহলেও জুতার বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। বিশেষ করে চামড়ার জুতায় এ সময় ফাঙ্গাস পড়ে। দু–এক দিন পরপরই নরম সুতি কাপড় দিয়ে জুতা মুছে রাখুন। জুতা আলমারিতে বন্ধ অবস্থায় না রেখে সম্ভব হলে খোলা জায়গায় রাখুন। এতে ফাঙ্গাস পড়ার আশঙ্কা কমে যাবে। জুতা ভিজে গেলে পেপার ভালো করে মুড়ে জুতার ভেতর ঢুকিয়ে রাখুন। দ্রুত শুকিয়ে যাবে।
ব্যাগও ফাঙ্গাস পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাগ খোলামেলা জায়গায় রাখুন। আলো–বাতাসে ফাঙ্গাস পড়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। তারপরও নিয়মিত শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।
খাবারের যত্ন
এ সময়ে আচার নিয়ে অনেকে চিন্তায় থাকেন। আচার সংরক্ষণের জন্য কাচের পাত্র ব্যবহার করুন। প্রতিদিন কিছু সময় আচারের কৌটা সূর্যের আলোয় রাখতে পারেন। তাহলে ফাঙ্গাস পড়ার আশঙ্কা থাকবে না।
সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে বর্ষার সময় আচারসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ফাঙ্গাস পড়ে যায়। শুকনো খাবার, যেমন শুকনা মরিচ, কালিজিরা ইত্যাদিতে আর্দ্রতা বা ভেজা ভাব এলে মাঝেমধ্যে কিছু সময়ের জন্য রোদে দিতে পারেন। এ ছাড়া শুকনা খাবারের পাত্রে এক টুকরা ড্রাই সল্ট রেখে দিলে আর্দ্র ভাব কমিয়ে খাবারকে ভালো রাখবে।
আলাদা আলাদা জারে মসলা রাখা ভালো। প্যাকেটে গুঁড়া মসলা সংরক্ষণ করলে তা আধখোলা রাখা উচিত নয়। প্রতিবার ব্যবহারের পর জার ভালোভাবে আটকে রাখতে হবে। কারণ বাতাস মসলার স্বাদ নষ্ট করে।
চালে পোকা ধরার আগেই তাতে কয়েকটি তেজপাতা ধুয়ে ভালো করে শুকিয়ে গরম করে রেখে দিন। এতে পোকা ধরার ভয় থাকে না। যদি আগেই পোকা ধরে গিয়ে থাকে, কিছু শুকনা নিমপাতা এবং শুকনা মরিচ চাল রাখার পাত্রে রেখে দিন। পোকা চলে যাবে। ময়দা ও বেসনের কৌটায় বড় এলাচি রেখে দিলে পোকা চলে যাবে। সুজি থেকে পোকামাকড় দূর করতে লবঙ্গ বা দারুচিনি রাখা যেতে পারে। আটা-ময়দার বাক্সে রাখা যেতে পারে তেজপাতা। এ ছাড়া মসলিনের কাপড়ে লবঙ্গ ও কালো গোলমরিচ বেঁধে আটার বাক্সে রাখতে পারেন।
বর্ষা এলেই লবণ গলে যায়। লবণের বয়ামে কয়েকটি চাল রেখে দিন। লবণ ঝরঝরে থাকবে। এ ছাড়া ধনেপাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে বয়ামের নিচে বিছিয়ে দিন। পাত্র অনুযায়ী সিকি ভাগ অংশ গুঁড়া দিয়ে তারপর লবণ রাখুন। লবণ গলবে না। কয়েকটি লবঙ্গ ছড়িয়ে দিতে পারেন লবণের পাত্রে। এটি দীর্ঘদিন ঝরঝরে রাখবে লবণ।
ক্যামেরার যত্ন
বর্ষা মৌসুমে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় ক্যামেরার লেন্সে ছত্রাকের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। এ জন্য ক্যামেরা বা লেন্স বাতাস ঢুকবে না, এমন বাক্সে সিলিকা জেলসহ রাখতে হবে। সিলিকা জেল বাতাসের আর্দ্রতা শোষণ করে ক্যামেরার যন্ত্রাংশকে ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে দূরে রাখে।
পোশাকের যত্ন
বর্ষাকালে কাপড়ে, বিশেষ করে সুতি কাপড়ে বৃষ্টির পানি লাগলে এবং তা দ্রুত শুকানো না হলে ছত্রাক পড়ার ভয় থাকে। এ জন্য বৃষ্টির দিনে বাইরে গেলে সুতি কাপড় না পরে জর্জেট বা সিনথেটিক কাপড় পরা উচিত। তবে সুতি কাপড়ে যদি বাইরে যেতেই হয় আর তা বৃষ্টিতে ভেজে, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পানিতে ডুবিয়ে ধুয়ে ভালোভাবে নিংড়ে শুকাতে হবে।
অনেক সময় বাইরে সরাসরি রোদে কাপড় শুকানোর সুযোগ থাকে না। এ জন্য ফ্যানের নিচে ভালো করে কাপড় শুকিয়ে নিতে হবে। না হলে স্যাঁতসেঁতে ভাব থেকে কাপড়ে ছত্রাক জন্মাবে।
এই ঋতুতে পোশাককে ছত্রাক থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে ইস্তিরি করে রাখা।
আলমারিতে টানা অনেক দিন কাপড় রেখে দিলে ছত্রাক পড়তে পারে। তাই মাঝেমধ্যে আলমারির কাপড় নাড়াচাড়া করবেন। পারলে আলমারির দরজা কিছুক্ষণ খুলে রাখুন।