নতুন সংসারে বসার ঘর সাজানোর সময় যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন

দুটি মানুষ এক হয়ে আমি-তুমি থেকে হয়ে ওঠেন আমরা। দুজনের রুচি, পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী সাজিয়ে তোলেন নিজেদের ছোট্ট সংসার। আর সাজানো-গোছানোয় বসার ঘরটা যেন তাঁদের জন্য এক টুকরা ক্যানভাস। বসার ঘরের দেয়ালে তাই ফ্রেম করে ঝুলিয়ে দিতে পারেন নিজেদের বিয়ের নানা মুহূর্ত! দুটি মানুষ দুটি পরিবার থেকে এসে নতুন পরিবার গড়ে তোলার শুরুটা নিজ নিজ পরিবারের ছবি রেখেও করতে পারেন। বসার ঘরে ঢুকতেই একটা পাশে থাকতে পারে স্বাগতবার্তার সঙ্গে নবদম্পতির নাম। আবার দুজনের মধ্যে কেউ যদি আঁকতে পছন্দ করেন বা হয়ে থাকেন শিল্পানুরাগী, তবে পেইন্টিংও রাখতে পারেন। ছাদ থেকে স্পটলাইট দিয়ে দেয়ালের ফটোফ্রেম হোক বা পেইন্টিং, হাইলাইট করে নেওয়া যায়। দেয়ালের রং বদলানোর উপায় থাকলে সেখানে স্টিকার বা স্টেনসিলে রাঙিয়ে নিতে পারেন।

বসার ঘর সাজানোর সময় চেয়ার বাছতে হবে বুঝেশুনে
ছবি: কবির হোসেন

বসার ঘর বা লিভিংরুম যেন ঘরের প্রাণকেন্দ্র। বন্ধু, পরিবার বা অতিথি—নবদম্পতির বসার ঘরেই হয় যত আড্ডা, আপ্যায়ন, হইহুল্লোড়। তাই বসার ঘরের আসবাব নির্ধারণে সবার কথাই মাথায় রাখার চেষ্টা করুন। বসার ঘরে বসার জন্য সোফা সবচেয়ে প্রচলিত আসবাব। শিপিং প্যালেট দিয়ে নিজেরাই বানিয়ে নিতে পারেন নিজেদের সোফা। সোফার উচ্চতা নির্ধারণে বয়োজ্যেষ্ঠদের কথা মাথায় রাখুন। বেশি নিচু সোফায় বয়স্করা বসতে পারেন না। ওঠার সময়ও কষ্ট হয়। আরামবোধও করেন না।

যদি চান এক্সেন্ট (ব্যতিক্রমী) সোফা বা চেয়ার সেট, তবে সে জন্য আছে পিন্টারেস্ট। পছন্দ অনুযায়ী একরঙা বা ফুলেল মোটিফের গজ কাপড় কিনে ঘরেই বানিয়ে নিতে পারেন নিজেদের কাস্টমাইজড এক্সেন্ট সোফা বা চেয়ার। বসার ঘরের আলাদা পরিচিতির জন্য একটা এক্সেন্ট সোফাই হতে পারে যথেষ্ট।

গতানুগতিক সোফার বাইরেও রাখতে পারেন কুশনের সোফা। ভাঁজ খুললেই যা হয়ে যেতে পারে বেড। অতিথির ঘুমানোর জন্য বাসায় আলাদা ঘর আর না থাকলেও তখন ক্ষতি নেই, বসার ঘরটাই হয়ে উঠবে বিকল্প। আবার বন্ধুদের আড্ডায় সেই ভাঁজখোলা সোফায় অনায়াসে বসতে পারবে বেশি মানুষ। মেঝেতেও অনেকে শতরঞ্জি বা কার্পেটের ওপর নকশিকাঁথার চাদরের সঙ্গে কুশন পেতে করে নেন বসার জায়গা।

বসার ঘরের একটি কোনা থাকতে পারে এমন
ছবি: নকশা

বসার ঘরে কুশনের কথা ভাবুন আলাদাভাবেই। বয়স্ক থেকে তরুণ, বসার সময় সবাই চায় একটা কুশন নিয়ে আরাম করে বসতে। কুশনকভার নির্ধারণ হোক তাই নিজেদের পুরো ঘরের অন্দরসজ্জার কথা মাথায় রেখেই।

সেন্টার টেবিলটাও হতে পারে বসার ঘরের প্রধান আকর্ষণ। এই যেমন দাদি–নানির পুরোনো কোন ট্রাংক থাকলে সেটাকেই রং করে, পা লাগিয়ে করে তুলতে পারেন টেবিল। আবার কাঠের গুঁড়ি দিয়েও অনেকে সেন্টার টেবিল গড়েন। তাই ভিন্ন কিছু করার কথা ভাবলে সেন্টার টেবিল নিয়েই চলতে পারে গবেষণা।

রঙিন চেয়ার দিয়ে সাজাতে পারেন বসার ঘর
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

আকারে বসার ঘরটা যদি হয় বেশ বড়, তবে তাতে রাখতে পারেন দোলনা। ঘরের ছাদ থেকে ঝোলানো কাঠের দোলনা যেমন বড় ঘর হলে রাখতে পারবেন, আবার ছোট ঘর হলে এক কোণে ম্যাক্রেমের বা বেতের দোলনাও রাখতে পারেন।

এবার বসার ঘরের আলোর প্রসঙ্গে আসা যাক। পরিবার মিলে আলোচনায় বা আড্ডায় এলইডি বা সাদা আলোই মানানসই। কিন্তু এই ধরুন হালকা ধাঁচের গান, একটু আলো, একটু আবছায়া, গল্প, আড্ডার সঙ্গে ওয়ার্ম লাইট বা হলুদ আলোটাই বেশ যায়। তাই দুই ধরনের আলোর ব্যবস্থাই রাখতে পারেন। বিভিন্ন আকারের ল্যাম্পশেড দিয়ে একই বসার ঘরে নিয়ে আসতে পারেন ভিন্ন ভিন্ন আবহ।

যেভাবেই সাজিয়ে তুলুন না কেন, নবদম্পতির বসার ঘরের সাজে যেন প্রাধান্য পায় দুজনেরই ইচ্ছা।

লেখক: স্থপতি