কেন কিনবেন দেশি বাল্ব?

এলইডি বাল্ব সাধারণ বাল্বের তুলনায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। মডেল: তিথিছবি: সুমন ইউসুফ

অজপাড়াগাঁয়েও এখন হারিকেন–কুপি খুঁজে পাওয়া কঠিন। সেই জায়গা নিয়েছে বৈদ্যুতিক আলো। যে কারণে বৈদ্যুতিক বাতি বা বাল্বের চাহিদা এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আশি ও নব্বইয়ের দশকে টাংস্টেন ফিলামেন্টের বাল্ব জনপ্রিয় ছিল। পরে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এলইডি বাল্ব। এলইডি বাল্ব সাধারণ বাল্বের তুলনায় ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে অফিস ও পাবলিক প্লেসেও এখন ব্যবহার করা হচ্ছে এলইডি বাল্ব। পাশাপাশি টিউবলাইটের ব্যবহারও শহর ও গ্রামে চোখে পড়ে।

ফ্লুরোসেন্ট টিউবলাইট, কমপ্যাক্ট ফ্লুরোসেন্ট ল্যাম্প (সিএফএল), এলইডি (লাইট এমিটিং ডায়োড) বাল্ব ও এলইডি টিউবলাইট—বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এ ধরনের বাল্ব ও টিউবলাইট। নিজেদের পছন্দ ও প্রয়োজন বুঝে কিনছেন ক্রেতারা। রাজধানী ঢাকার বিজয় সরণির ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজার উম্মে কুলসুম বলেন, ‘বেশির ভাগ ক্রেতা নিজের বাড়ির জন্য বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী বাল্ব কেনার দিকে আগ্রহী।’ আরেকটি বিষয়েও ক্রেতাদের নজর থাকে, সেটা হলো স্থায়িত্ব। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা ও একটি পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা তানজিবা বৃষ্টি বলেন, ‘আমার বাসায় চারটি ঘরে সব মিলিয়ে আট থেকে নয়টি বাল্ব। দীর্ঘস্থায়ী ও সঠিক মাত্রার আলো পেতে এখন এলইডি ব্যবহার করছি। বাল্ব কেনার ক্ষেত্রে ওয়াট ও খরচের বিষয়টি মাথায় রাখি। রাস্তাঘাটে চলতি পথে কম দামে কিছু বাতি পাওয়া যায়, যা আসলে বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী নয়। কিছু বাল্বে যে ওয়াটের আলো দেওয়ার কথা, তা পাওয়া যায় না। অনেক বাল্বে আবার বিদ্যুৎ খরচ বেশি। অনেক বিল চলে আসে। শুনেছি, এসব বাতি চোখ ও পরিবেশের ক্ষতি করে। কেনার পর নানা রকম দুর্ঘটনার খবরও মেলে। বিক্রয়–পরবর্তী সেবা না থাকায় অনেক সময় পুরো টাকাও জলে যায়। তাই কেনার ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্ক থাকি।’

তাই যাচাই করে ভালো ব্র্যান্ড দেখেই বাল্ব কেনা জরুরি। রিপ্লেসমেন্টের সুবিধা থাকার
কারণে ক্রেতারা এখন তাই ব্র্যান্ডের বাতির দিকে ঝুঁকছেন বেশি।

বাল্বের বাজারের খোঁজখবর

সুপার ষ্টার, ক্লিক, ওয়ালটন, ফিলিপস, ট্রান্সটেক—বাজারে আছে নানা রকম ব্র্যান্ড। ঢাকার ইলেকট্রিক যন্ত্রের খুচরা বিক্রেতা আলমাছ হোসেন খান বলেন, বাজারে এখন নতুন নতুন প্রযুক্তির বাল্বও পাওয়া যায়। অনেক বাল্ব রিমোট দিয়ে অন-অফ করা যায়। স্মার্টফোন দিয়েও বাল্ব নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাটের জন্য যাঁরা বাল্ব কেনেন, তাঁরা এ ধরনের বাল্ব নিচ্ছেন।’

যাচাই করে ভালো ব্র্যান্ড দেখেই বাল্ব কেনা জরুরি। মডেল: তিথি
ছবি: সুমন ইউসুফ

৫ থেকে শুরু করে ২০ ওয়াট, আরএফএলের ক্লিক ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ধরনের বাল্ব বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। পিন সিস্টেমের ১২ ওয়াট বাল্বের দাম পড়বে ২৯৫ টাকা, ১৫ ওয়াটের প্যাঁচ সিস্টেমের দাম ৩৩৫ টাকা। ২০ ওয়াটের ক্লিক টিউবলাইটের দাম ৫৩০ টাকা। ২০ ওয়াটের ব্লেজ টিউবলাইটের দাম ৫০০ টাকা। ৫ ওয়াটের ক্লিক ডিসি এলইডি বাল্বের দাম ৩৫০ টাকা। ব্লেজ এলইডি পিন বাল্বের দাম ৯২০ টাকা। এই বাল্বে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত চার্জ থাকে। বিদ্যুৎ চলে গেলেও তাই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আলো পাওয়া যায়। ওয়ালটনের ৩ ওয়াটের পিএসএ-৩ডব্লিউবি২২ মডেলের বাল্বের দাম ১৬৫ টাকা, ৫ ওয়াটের ১৯৫ টাকা ও ১৮ ওয়াটের দাম ৩৮৫ টাকা। হ্যামকো ব্র্যান্ডের কাপতাই মডেলের ১৮ ওয়াটের এলইডি বাল্বের দাম ২০০ টাকা, ১৫ ওয়াটের দাম ১৬০ টাকা ও ৫ ওয়াটের দাম ৮০ টাকা। ট্রান্সটেকের ৯ ওয়াটের এলইডি বাল্বের দাম ২২০ টাকা, ৫ ওয়াটের ৫৮৫ টাকা ও ব্যাকআপ এলইডি বাল্বের দাম ৬৫৫ টাকা। ১৩ ওয়াটের পিন বাল্বের দাম ২৭৫ টাকা, ৩ ওয়াটের ১৪০ টাকা, ১৮ ওয়াটের ৩৩০ টাকা। সুপার ষ্টার ব্র্যান্ডের এলইডি বাল্বে ব্যবহৃত হয় এসএমডি চিপ, যা সঠিক মাত্রার আলো নিশ্চিত করে। সুপার ষ্টার এলইডি লাক্স বাল্বের দাম পড়বে ২০৫ থেকে ৫২৫ টাকা, এসি এলইডি বাল্বের দাম ২০৫ থেকে ৪১৭ টাকা।

দেশি ব্র্যান্ডের সুইচ কিনতে পারেন বাজারে ঘুরে
ছবি: প্রথম আলো

বাল্বের সঙ্গে লাগে সুইচ ও সুইচবোর্ড। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সুইচ ও সুইচবোর্ড পাওয়া যায়। সুপার ষ্টার ব্র্যান্ডের সুইচের দাম শুরু হয় ৯৫ টাকা থেকে। ওয়ালটনের বিভিন্ন সুইচের মধ্যে ডব্লিউএফএল১জিএস১ সিরিজের দাম ১৬২ টাকা, ডব্লিউপি১জিএস১ সুইচের দাম ১৭৫ টাকা।

দেশি ব্র্যান্ডের দখলে বাজার

সুইচ, সকেল, হোল্ডার, মাল্টি–প্ল্যাগ, সার্কিট ব্রেকার, নানা রকম লাইটিং পণ্যে দেশি প্রতিষ্ঠানের দখলে। মানসম্মত পণ্য তৈরি করায় বিদেশেও রপ্তানি করছে কেউ কেউ। তাই লাইট বা ইলেকট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ পণ্য দেশি ব্র্যান্ড থেকে কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

  • বাংলাদেশের ‘ইলেকট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ ও লাইটিং প্রোডাক্ট’ নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ‘মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে দেখা গেছে, এসব পণ্যে বর্তমানে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আছে।

  • এ গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ইলেকট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ (২৯ শতাংশ) ও লাইট (২৫.৫৯ শতাংশ)—দুই বিভাগেই শীর্ষে রয়েছে দেশি প্রতিষ্ঠান সুপার
    ষ্টার গ্রুপ।