ফ্ল্যাটে এখন কোন ধরনের বেসিন ও কল চলছে?
দেখতে সুন্দর কিন্তু আদতে কাজের নয়—এমন সব বেসিন ও কল নিয়ে দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধায় পড়েন বাসিন্দারা। স্যানিটারির বাজার ঘুরে বেসিন ও কলের খোঁজ জানাচ্ছেন তাইয়্যেবা তাবাসসুম
আধুনিক ঘরবাড়িতে ব্যবহৃত ছোট-বড় জিনিসগুলোর ছোটখাটো পরিবর্তনেই বাড়ির চেহারা অনেকটা বদলে যায়। আধুনিক ফিচার ও স্টাইলের ওয়াশ বেসিন ও কল ফিটিংস সেই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে আলোচ্য। কারণ, বাড়ির এই জিনিসগুলোই ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশি।
আপনার ব্যক্তিত্ব ক্ল্যাসিক না আধুনিক, মিনিমালিস্টিক নাকি বোল্ড, এসব ছোটখাটো ফিটিংস বা উপাদান দিয়ে তা–ও বোঝা যায়। এমনকি স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতার জন্যও এই উপকরণ ব্যবহারের আগে যাচাই করে নেওয়া জরুরি।
বেসিনের বাজার
বাড়িতে সাধারণত খাবার ঘরের আশপাশে ও ওয়াশরুমে বসানো হয় বেসিন। তবে প্রয়োজন বা সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য অনেকে বাড়ির বাইরের আঙিনায়ও বেসিন ব্যবহার করেন। বেসিন বা কল ফিটিংস পছন্দ করার আগে প্রথমেই বাড়ি বা বাথরুমের থিমকে মাথায় রাখতে হবে। এখানে তাই কিছু বেসিনের বৈশিষ্ট্য জেনে নিন।
পেডেস্টাল ওয়াশ বেসিন: ঐতিহ্যবাহী নকশার বেসিনের মধ্যে এগুলো অন্যতম। এই বেসিনের সঙ্গে একটা লম্বা বা উঁচু স্তম্ভ থাকে, যেটা বেসিনের ড্রেনেজ পাইপটাকে লুকিয়ে রাখে, একই সঙ্গে মূল বেসিনকে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে। পেডেস্টাল বেসিনের গ্রহণযোগ্যতা সবখানেই থাকে; মডার্ন কিংবা ট্র্যাডিশনাল সব থিমেই এটি মানানসই।
ওয়াল হ্যাং বেসিন: বাসাবাড়িতে জায়গা নিয়ে যদি টানাটানি থাকে, তাহলে ওয়াল হ্যাং বেসিন সবচেয়ে ভালো অপশন। সাধারণত ডাইনিং রুমে বা ছোট বাথরুমে জায়গার স্বল্পতায় বড় পেডেস্টাল বেসিন সেট করা যায় না। এমন ক্ষেত্রে নানা ডিজাইনের ছোট সিংকের ওয়াল হ্যাং বেসিন খুবই উপযোগী। কিচেন গার্ডেন বা বারান্দায়ও এমন বেসিন ব্যবহার করেন কেউ কেউ।
ওয়াল মাউন্টেড বেসিন: আধুনিক অ্যাপার্টমেন্টে জায়গা একটা নির্দিষ্ট বর্গফুটে আটকে থাকে। অ্যাপার্টমেন্টে সীমিত জায়গা, মেঝের জায়গা বাঁচাতে, কখনোবা নকশা ঠিক রাখতে ওয়াল মাউন্টেড বেসিন ভালো বিকল্প। এই বেসিনগুলো যেকোনো উচ্চতায় সেট করা যায়। তাই পরিবারের ছোট সদস্যদের জন্য এটি খুবই উপযোগী। আলাদা বেদি বা স্তম্ভ না থাকায় পরিষ্কার করাও সহজ। এই বেসিনের পানি সরাসরি দেয়ালের ভেতর দিয়ে করা লাইনে পাস হয়ে যায়। ফলে বেসিনের নিচের মেঝেতে খোঁড়াখুঁড়ি বা আলাদা কোনো পাইপ রাখার দরকার পড়ে না।
কাউন্টারটপ ওয়াশ বেসিন: আজকাল আধুনিক ও বড় ওয়াশরুমগুলোতে কাউন্টারটপ ওয়াশ বেসিন বেশি ট্রেন্ডি। এ ধরনের বেসিনগুলোর আলাদা আভিজাত্য আছে। প্রথম দেখাতে এই বেসিনগুলোকে মনে হয় নিজেই একটা সাজানো আসবাব। বেশ বড় আর মজবুত হওয়ায় এই বেসিন টেকসইও হয় বেশ। বেসিনের নিচে কাউন্টার বা আলাদা কাঠামো থাকায় পানি ছিটকে ফ্লোরে পড়ার আশঙ্কা কম। এই বেসিনের নিচের অংশে আলমারির মতো তাক করে তোয়ালে বা হ্যান্ডওয়াশের মতো দরকারি জিনিস রাখা যায়।
বেসিনের উপকরণ
বেসিনে যেমন ভিন্নতা আছে, তেমনি বেসিন তৈরির উপকরণেও আছে ভিন্নতা।
কাচ: কাচের তৈরি বেসিনের সঙ্গে একটা কাউন্টারটপ থাকলে খুবই আকর্ষণীয় দেখাবে। কালারলেস, স্মোকড, স্বচ্ছ, অস্বচ্ছ —বিভিন্ন ধরনের কাচের বেসিন আছে। কাচের বেসিন শুধু কাউন্টার ড্রিল করে সহজেই বসানো যায়। দেয়ালে কোনো অতিরিক্ত খোঁড়াখুঁড়ির প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়া পরিষ্কার করাও সহজ।
পোরসেলিন: স্থায়ী, মজবুত ও ক্ল্যাসিক ধাঁচের বেসিন যদি চান; তবে আপনার জন্যই পোরসেলিন বেসিন। এ ধরনের উপকরণ থাকলে বেসিন একটু সাবধানে ব্যবহার করতে হয়। কেননা এতে পানির দাগ থেকে যায়, ধারালো কিছুতে সহজেই স্ক্র্যাচ পড়ে।
অ্যাক্রেলিক: এই বেসিনগুলো একটু চকচকে, তবে হালকা। শুধু অ্যাক্রেলিক উপাদানে তৈরি বেসিনগুলোতে একটুতেই স্ক্র্যাচ পড়ে যায়। তবে পলিমারের মিশেলে তৈরি হলে দাগ অত সহজে পড়ে না। অতিরিক্ত তাপেও অ্যাক্রেলিক উপাদানে তৈরি বেসিনগুলোর ক্ষতি হয়। তাই ওয়াশরুম সাজাতে বা লাক্সারি বাথ নিতে এমন বেসিনের ওপর মোমবাতি না জ্বালানোই ভালো। নেইলপলিশ রিমুভারও এমন বেসিনের জন্য ক্ষতিকর।
সিরামিক: সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও হালকা রঙের বেসিন যাঁদের চাই, তাঁদের জন্য সিরামিক সবচেয়ে ভালো অপশন। সিরামিকের বাড়তি যত্নেরও প্রয়োজন পড়ে না। এটা পরিবেশবান্ধব হিসেবেও স্বীকৃত। তবে এই বেসিন কিছুটা ভঙ্গুর হওয়ায় সাবধানে সেট করতে হবে।
স্টোন বা পাথর: যাঁরা গতানুগতিক নকশার বাইরে একটু অন্য ধাঁচের বেসিন পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য গ্রানাইট, স্লেট বা মার্বেল পাথরের বেসিন। এই বেসিনে থাকে নজরকাড়া সব ডিজাইন আর প্রাকৃতিক আবহ। এ ধরনের উপকরণে তৈরি বেসিন আবার বিলাসবহুল হিসেবেও সমাদৃত।
কপার: আজকাল অনেকেই কপারে তৈরি বেসিন পছন্দ করেন। সাধারণত গাঢ় ধূসর ও কালোরঙা হয় এই বেসিনগুলো। কপারের বেসিন বসানোও বিশেষ ঝামেলার নয়।
কলের কথা
ওয়াশরুমের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের আরেকটি অন্যতম উপাদান হলো কল ফিটিংস। কল বা ট্যাপগুলোও আজকাল বিভিন্ন ফিচার আর আধুনিকতার স্পর্শ পেয়েছে। কলের মতো ছোট একটা উপাদানও আপনার ওয়াশরুমের থিমকে করে তুলতে পারে বিশেষ। দেশে প্লাস্টিক ও ধাতব কল দেখা যায় বেশি। এর মধ্যে প্লাস্টিকের কল তুলনামূলক কম দামি ও কম টেকসই। তবে স্টাইলিশ অন্দরে ধাতব কলই বেশি প্রচলিত।
আধুনিক কলের বৈশিষ্ট্য ও ধরন
আধুনিক কলগুলোর মধ্যে ধাতব উপকরণই বেশি দেখা যায়। তবে সেটা চিকন বা মিনিমালিস্টিক ডিজাইনের হয়ে থাকে। এসবের অনেকটাই কাস্টমাইজ করা যায়, যাতে আপনার থিম বা পছন্দের ডেকোর ওয়াশরুমের সঙ্গে সেটার মিল থাকে।
অত্যাধুনিক গুণমানসম্পন্ন উপকরণে তৈরি কলে আজকাল পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায় খুবই গ্রাহকবান্ধব উপায়ে। লিকেজ বা ড্রিপের সমস্যাও হয় না।
পিভিডি কোটিং থাকায় এসব কল স্থায়ী হয় অনেক দিন, সেই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব হিসেবেও স্বীকৃত। পলিশড, গ্লসি বা ম্যাট ফিনিশড, সিলভার, কপারের কল পাওয়া যায় এখন।
অনেক কলে আজকাল ফিল্টার–সুবিধা থাকায় সাধারণ কলের তুলনায় পানি নিরাপদ। পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে পানির অপচয় হয় না, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণপদ্ধতি চালু থাকায় অতিরিক্ত কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরিত হয় না, বিদ্যুৎ বিলও আসে কম।
আধুনিক কলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে হ্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হয়। নোব মডেলের চেয়ে লেভেল বা হ্যান্ডেল সিস্টেম স্বাস্থ্যকর এবং বাড়ির ছোটদের জন্য খুব সুবিধাজনক।
বেসিন, বাথটাব, শাওয়ার কলের জন্য বিভিন্ন স্টাইলের কল যেমন বাথ ও শাওয়ার মিক্সার ট্যাপ, কাউন্টারটপ ট্যাপ, মনোব্লক, পিলার, ওয়াল মাউন্টেইন বা ফ্রিস্টাইল ট্যাপ আজকাল জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছে।
সূত্র: হোম ডেকোর ও হোম অ্যান্ড ডেকোর