আসবাব যখন ক্যানভাস

আসবাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হ্যান্ডপেইন্ট বা হাতে আঁকা নকশার চল। কৃতজ্ঞতা : রাফি আর্ট গ্যালারি
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

আসবাবে হাতে আঁকা নকশা বা হ্যান্ডপেইন্ট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইদানীং। রং–তুলির মাধ্যমে আসবাবে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে আলপনা, রিকশাচিত্র, পুতুল, শখের হাঁড়ির মতো লোকজ মোটিফের পাশাপাশি ফুল, লতাপাতা, পাখি ও মাছের নকশা। এমনকি নকশিকাঁথার মতো করে সুই–সুতার সেলাইয়ের নকশাও তুলে ধরা হচ্ছে।

আসবাবে ফোক পেইন্টের প্রতিই ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

আসবাবে পেইন্টিং বা হাতে আঁকা নকশার ধরনটি দেশে প্রথম জনপ্রিয় করে দেশীয় পণ্যের প্রতিষ্ঠান ‘যাত্রা’। আসবাবে রিকশাচিত্র নিয়ে কাজ শুরু করে তারা। ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে তখন। অনেক প্রতিষ্ঠানই এরপর এই মোটিফে আসবাব তৈরি করে। ইদানীং চারুকলার কিছু শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনলাইনে চালু করেছেন হাতে আঁকা নকশার আসবাবের প্রতিষ্ঠান।

প্রথম দিকে শুধু আয়না, জলচৌকি, ট্রের মতো নির্দিষ্ট কিছু ছোট আসবাব বা পণ্যে হ্যান্ডপেইন্ট করা হতো। ধীরে ধীরে ঘরের অন্যান্য আসবাব রাঙানোর প্রতিও আগ্রহী হয়ে ওঠে মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় সেন্টার টেবিল, ক্যাবিনেট, ছোটদের পড়ার টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, ল্যাপটপ টেবিল, জুতার তাক, আলমারিতে এখন হাতে আঁকা নকশা বা হ্যান্ডপেইন্ট করা হচ্ছে।

ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

আসবাবে এই দেশীয় শৈলীর ব্যবহার খুব পছন্দ করছেন ক্রেতারা। তাঁরা জানান, রাফি আর্ট গ্যালারির কর্ণধার রাজিব কাজী। পেইন্ট করা আসবাব নিয়ে কাজ করেন তাঁরা। ক্রেতাদের পছন্দানুযায়ী তৈরি করেন হাতে আঁকা নকশা বা হ্যান্ডপেইন্টের আসবাব। ‘বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে এটি একটি অনন্য উপায়’ বলে মনে করেন রাজিব কাজী। তিনি জানান, ইদানীং ফোক পেইন্টের প্রতিই ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ।  

‘যাত্রা মেলা’ তে থাকছে ফরমাশ দিয়ে হাতে আঁকা আসবাব তৈরির সুযোগ
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

এই আগ্রহে সাড়া দিয়ে নতুন এক উদ্যোগ নিয়েছে যাত্রা। ‘যাত্রা মেলা’ নামে এই উদ্যোগে থাকছে পছন্দমতো ফরমাশ দিয়ে হাতে আঁকা আসবাব তৈরির সুযোগ। কী নকশা করছেন, তার ওপর নির্ভর করবে খরচ। কে ক্র্যাফট, আড়ংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানেও পাওয়া যাচ্ছে হাতে আঁকা নকশার আসবাব।

আঁকার হাত ভালো হলে এনামেল পেইন্ট দিয়ে আসবাবে সরাসরি আঁকা শুরু করে দিতে পারেন
ছবি : নকশা

চাইলে নিজেও আসবাবকে ক্যানভাস বানিয়ে মনের মতো রঙে রাঙাতে পারেন। নিজেই আসবাব পেইন্টিং করতে চাইলে আগে শিরীষ কাগজ দিয়ে আসবাব ঘষে নিতে হবে। এতে করে আসবাবের উপরিভাগ হবে মসৃণ, পেইন্টিংও ফুটে উঠবে নিখুঁত। যেকোনো আসবাব রং করার আগে কালার কোটিং করে নেওয়া ভালো। আঁকার হাত ভালো হলে এনামেল পেইন্ট দিয়ে সরাসরি আঁকা শুরু করে দিতে পারেন। আর আঁকার হাত যদি হয় কাঁচা, তাহলে পেনসিল দিয়ে আসবাবে আগে থেকে নকশা করে নিন, এমন বুদ্ধিই দিলেন নওরিন জাহান। গয়নার ডিজাইনার হলেও তার বাসার অনেক আসবাবই নিজে হাতে পেইন্টিং করেছেন তিনি।

ব্যবহারে ব্যবহারে এসব আসবাবের নকশার রংগুলো উঠে যাবে না তো? আসবাবগুলো টেকসই হবে তো? অনেকের মনেই এসব প্রশ্ন। রাজিব কাজী জানান, আসবাবে পেইন্ট করার সময় রঙে এমন কিছু উপাদান মেশানো হয়, যার কারণে বছরের পর বছর ভালো থাকে আসবাব। আর রং টেকসই রাখতে নওরিন জাহানের পরামর্শ, আসবাব রং করার পর কড়া রোদে চার–পাঁচ দিন শুকিয়ে নিতে হবে। আর পেইন্টিংয়ের উজ্জ্বলতা যদি কোনো কারণে ম্লান হয়ে যায়, তাহলে ক্লিয়ার বার্নিশ স্প্রে বা ট্রান্সপারেন্ট স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।