অন্দর
অরণ্যের আড়ালে, সবুজ সমারোহে
বারান্দায় বা ঘরে গাছ রাখার মধ্য দিয়ে তৈরি করা যায় খানিকটা আড়াল। সঙ্গে সবুজের সমারোহ তো থাকবেই।
একটা বারান্দা। সবুজ বারান্দা। আয়েশি দুপুরে পা ছড়িয়ে বসে বই পড়ার বারান্দা। কিংবা মেঘলা বিকেলে চায়ের কাপ হাতে বসবার বারান্দা। বাতাসের ছন্দে দুলছে সবুজ লতারা। ঝোলানো উইন্ড চাইমেও লাগছে হাওয়ার দোলা। রং আর মিষ্টি শব্দে আবেশিত প্রহর যাপন। এই যান্ত্রিক নগরেই। স্বপ্নময় খানিকটা মুহূর্ত এলই না হয়।
যান্ত্রিক শহরে বাস করলেও অন্দরকে সবুজ করে তুলতে চাই আমরা। আমরা সবুজ ভালোবাসি। একান্ত সময়ে আবার ভালোবাসি অন্দরের আড়াল-আবডাল। সারা দিনের কাজ সেরে হয়তো ঘরের পর্দা সরিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে বসেছেন, পাশের বাড়ির প্রতিবেশীও তাঁর বারান্দায় তখন। আপনার ঘরের ভেতর কী হচ্ছে, সেটা তাঁর দৃষ্টিতে পড়তেই পারে। বিশেষ করে লাগোয়া বাড়ির শহরে এটা প্রতিদিনের ঘটনা। অস্বস্তি বোধ করতেই পারেন। হয়তো আপনি এই দৃষ্টি থেকে আড়াল চান, কিংবা আড়াল চান পাশের বাড়ির দৃশ্য থেকে। তাই টেনে দিলেন পর্দা। কিন্তু হাওয়া চলাচল আটকে যাওয়ায় গরমে আপনার আয়েশি সময়ের ‘বারোটা’ বেজে যেতে পারে ভরসন্ধ্যাতেই।
প্রগাঢ় প্রশান্তি চাই
প্রশান্তির এমন বিপর্যয় এড়াতে পারেন আপনি, অরণ্যের আড়াল নিয়ে। বারান্দাজুড়ে লম্বালম্বিভাবে ছড়িয়ে দিন সবুজ লতা। লতার পর্দায় আপনি থাকবেন আড়ালে। বারান্দার দৈর্ঘ্য বরাবর লম্বা একটা নল (স্ট্যান্ড) আড়াআড়িভাবে লাগিয়ে নিতে পারেন দেয়াল থেকে। সেই নলে ঝুলিয়ে দিন গুচ্ছ গুচ্ছ লতা। নলের পরিবর্তে শক্তপোক্ত দড়িতেও কাজ চলবে। বারান্দার গ্রিলেও বেশ কিছু গাছ ঝুলিয়ে দিতে পারেন, এগুলো লতানোও হতে পারে, হতে পারে অন্য কিছুও। সব মিলিয়ে আপনার ঘরটা আড়াল হলেই হলো। লতারাজির জগতে বসে বই পড়া, চা পানের মধুর সময়ও পাবেন খানিক আবডাল।
অন্দরের সবুজে ভিন্নতা
জানালার পর্দার ফাঁকে ফাঁকে লতানো গাছ ঝুলিয়ে দিতে পারেন। অন্য রকম দেখাবে।
অন্দরে রাখা লতানো গাছ যেমন বেয়ে উঠতে পারে সোজা লাঠিতে, তেমনি পারে ভিন্নতর আকৃতির কোনো কিছুতেও। ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ কিংবা প্রায় বৃত্তাকারে যদি বাইতে দেওয়া যায় অন্দরের লতারাজিকে—দারুণ দেখায়। এমন একাধিক ভিন্নতার সম্মিলন অন্দরে আনতে পারে নতুন মাত্রা।
হয়তো বসার ঘর আর খাবার ঘরের মধ্যে পর্দার আড়াল আছে আপনার অন্দরে, এর কাছাকাছি জায়গায় রাখা লতানো গাছের লতাগুলোকেই যোগ করতে পারেন অন্দরের বৈচিত্র্যে। পর্দাটির রঙের কাপড়ের চিকন দড়ি তৈরি করে নিন, যার নিচের অংশে থাকবে একটা ‘লুপ’। এই লুপে আটকে থাকবে গাছের লতা। তবে কোমলমতি লতাগুলোকে আঁটসাঁট করে বাঁধবেন না (একই পদ্ধতিতে বারান্দাতেও স্ট্যান্ড, নল বা টাঙানো দড়ি থেকে লতা ঝোলানো যায়)। পর্দা ঝোলানোর স্ট্যান্ডের সঙ্গে আটকে নিন এই দড়ি। আর পর্দাটি যদি কেবল গুটিয়েই রাখা হয়, তাহলে এই স্ট্যান্ড থেকে সুন্দর, ছোট্ট টব ঝুলিয়ে দিতে পারেন, রাখতে পারেন ছোট্ট উদ্ভিদ, যেগুলোতে পানির প্রয়োজন হয় খুব কম (অন্দরের মধ্যে রাখা এসব টবে বেশি পানি দেওয়ার প্রয়োজন হলে মাটি চুঁইয়ে পানি মেঝেতে পড়ার আশঙ্কা থাকে)।
টব চাই, টব?
কিনতে তো পাবেনই, তবে ছোট ছোট টব তৈরিও করতে পারেন নিজেই। শ্যাম্পু কিংবা কোমল পানীয়র বোতল, আইসক্রিমের বাক্স, তেলের ক্যান—এমন নানা পাত্রই কেটে নিতে পারেন লম্বালম্বি কিংবা আড়াআড়িভাবে। পানি নির্গমনের জন্য ছিদ্র করে নিন নিচের দিকে; ছিদ্র করুন ওপরের দিকেও, যাতে একটু শক্ত দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দিতে পারেন এই ‘টব’। শিকাজাতীয় কিছু দিয়ে ঝুলিয়ে দিতে পারলে অবশ্য ওপরের দিকে ছিদ্র না করলেও চলে।