ইনডোর প্ল্যান্টে দূষণমুক্ত ঘরের বাতাস

মানি প্ল্যান্ট দূষণরোধী

‘একটুখানি সবুজ খুঁজি, একটু সবুজ হাওয়া/ এই শহরে একটু সবুজ, অনেক বেশি পাওয়া/ খুঁজে বেড়াই সবুজ পাড়া, খুঁজি সবুজ বন/ কে আমাকে ফিরিয়ে দেবে, সেই সে সবুজ মন।’ ইট-কাঠ-পাথরের এই শহরে সবুজ খুঁজতে খুঁজতে যে কেউ ক্লান্ত হয়ে হাঁপিয়ে পড়াটা খুব স্বাভাবিক। তার চেয়ে বরং অন্দরমহলটাকে একটু সবুজ করে নেওয়া যেতে পারে। এতে বাড়ির পরিবেশটা হবে আরও সুন্দর ও বসবাসের উপযোগী। কিছু কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট ঘরের বাতাসকে রাখে দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন।

ড্রাকাইনা বা জ্যানেট ক্রেগ

ড্রাকাইনা বা জ্যানেট ক্রেগ

কম আলো‚ কম জল—সব পরিবেশের সঙ্গে এই গাছ নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। এই গাছ ঘরের বাতাস থাকা বেনজেন, ফরমালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন ও জাইলিন দূর করে। তবে এই গাছ ঘরের কুকুর বা বিড়ালের জন্য বিষাক্ত।

পিস লিলি

পিস লিলি আকারে ছোট কিন্তু বাতাস পরিষ্কার করার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা এর রয়েছে। পিস লিলি বাতাসে উপস্থিত রাসায়নিক এবং টক্সিন নিমেষে শুষে নিতে পারে। খুব সহজেই জন্মে এই গাছ, গ্রীষ্মকালে ফুলও হয়। এই গাছে আবার খুব সুন্দর সাদা ফুলের মতো পাতাও হয়। গাছটি ছায়াযুক্ত স্থান ও কম ভেজা মাটিতে রাখলে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। পিস লিলি বাতাসে মিশে থাকা ট্রাইক্লোরোথাইলিন, অ্যামোনিয়া, বেনজেন এবং ফরমালডিহাইডজাতীয় টক্সিন শুষে ঘরের বাতাসকে দ্রুতই পরিষ্কার করে দেয়।

পিস লিলি
unknown

মানিপ্ল্যান্ট

পাথস বা মানিপ্ল্যান্ট অল্প যত্নেও বেশ ভালো থাকে। গাছের মাটি শুকিয়ে গেলে সামান্য পানি দিতে হয় আর বারান্দার গ্রিলের সঙ্গে গাছ বাইয়ে দিতে হয়। এই গাছের পাতা দেখতে অনেকটা হৃৎপিণ্ডের মতো। কম আলো এবং ঠান্ডা সহ্য করার অসাধারণ ক্ষমতা আছে এই গাছের। পথোস ফরমালডিহাইড এবং কার্বন মনোক্সাইড থেকে বাতাসকে মুক্ত করে। তাই নিশ্চিন্তে ঘরে রাখতেই পারেন ঝোপযুক্ত গাছটি। বায়ুদূষণকারী গ্যাসের সঙ্গে কাঠের আসবাবে ব্যবহৃত আঠা থেকে তৈরি দূষণ এই গাছ শোষণ করে নেয়। তবে মনে রাখতে হবে এই গাছের পাতা বিষাক্ত।

ফিগ

সিগারেটের কারণে যে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়, তার বিরুদ্ধে কাজ করার এক অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে এই গাছের। কাজেই যাঁরা ঘরে ধূমপান করেন, তাঁদের ঘরের বাতাস দূষণমুক্ত করার জন্য এই গাছটি রাখতে পারেন। এটি কার্বন ড্রাই–অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ দূর করে থাকে।

স্পাইডার প্ল্যান্ট

স্পাইডার প্ল্যান্ট

সাদা আর সবুজের সংমিশ্রণের এই গাছটির পাতাগুলো চারদিকে ছড়িয়ে থাকে বলে এটিকে স্পাইডার প্ল্যান্ট বলা হয়ে থাকে। ছোট–বড় প্রায় সব নার্সারিতেই এই গাছ বেশ সহজলভ্য। নিয়মিত পানি দিলে আর বারান্দায় রাখলেই এই গাছ সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে। স্পাইডার প্ল্যান্ট বিষাক্ত গ্যাস শোষণ করে নিতে পারে। এই গাছ প্রচুর পরিমাণে কার্বন মনোক্সাইড শোষণ করতে পারে বলে রান্না ঘরে এই গাছ রাখলে ভালো। একটা স্পাইডার প্ল্যান্ট প্রায় ২০০ বর্গমিটার জায়গার বাতাস পরিশুদ্ধ করে তুলতে পারে। মোটামুটি উজ্জ্বল ও সরাসরি আলোর বিপরীতে এই গাছ ভালো বাড়তে পারে।

স্নেক প্ল্যান্ট

এই গাছ ঘরে জমে থাকা টক্সিন পরিষ্কার ও অক্সিজেন সরবরাহ করে। রাতেও এরা ঘরের মধ্যে অক্সিজেন ছাড়ে। এ গাছ সহজে মরে না। বিশেষ আলো বা জলেরও প্রয়োজন পড়ে না। অল্প আলোতেও বেঁচে থাকতে পারে। ঘরের ভেতরের বাতাসে থাকা বেনজেন, ফরমালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন ও জাইলিন নামক বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাসকে দূর করে স্নেক প্ল্যান্ট। নাসার বিজ্ঞানীরা এই গাছকে ‘টপ এয়ার পিউরিফাইং প্ল্যান্ট’–এর স্বীকৃতি দিয়েছে।

স্নেক প্ল্যান্ট

গার্ডেন মাম

গার্ডেন মাম বাতাস পরিষ্কার করার জন্য অন্যতম সেরা একটি গাছ। এই গাছ ঘরের ভেতরের বাতাস থেকে প্রচুর পরিমাণ অ্যামোনিয়া, বেনজেন, জাইলিন, ফরমালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন দূর করে থাকে। গাছটি স্বল্প পরিচর্চায়ই ঘরের টবে লাগানো যায়।

বস্টন ফার্ন

বস্টন ফার্ন

বস্টন ফার্ন ঠান্ডা ভেজা আর্দ্র স্থানে জন্মাতে পারে। এই গাছের জন্য সূর্যালোকের প্রয়োজন নেই। গাছটি বাড়িকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এনজেন, জাস্টিন ও ফরমালডিহাইডের মতো বায়ুদূষণকারী গ্যাস শোষণ করার সঙ্গে সঙ্গে এই গাছ প্রচুর জলীয় বাষ্প বাতাসে ছাড়ে। তাই গরমকালে এই গাছ পরিবেশকে ঠান্ডা রাখে।