নিজের একটা লাইব্রেরি

নিজের একটা লাইব্রেরির স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। বাড়িতেই এ রকম একটা লাইব্রেরি করতে চাইলে একটু বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে।

দিনযাপনে যেমন খাবার ছাড়া চলে না, তেমনি মনেরও তো খাবার দরকার হয়। মনের সেই খাবার হলো বই। ঘরের কোণে একচিলতে বই রাখার জায়গা হয়তো নিজে নিজেই করে ফেলতে পারেন। কিন্তু যদি করতে চান নিজস্ব লাইব্রেরি, তাহলে বাড়তি ভাবনার প্রয়োজন পড়বে।

ছবি: আনাস্তিশিয়া মায়া, পেকজেলসডটকম

আর করোনার এ সময়ে বই–ই তো বড় বন্ধু হয়ে উঠছে। ঘরে থাকার বাড়তি সময় বই ছাড়া ভীষণ প্রাণহীন।

ফারজানা’স ব্লিসের স্বত্বাধিকারী ফারজানা গাজী বলেন, আগে লাইব্রেরির জন্য আলাদা একটি ঘরই রাখা হতো। শহুরে জীবনে পরিসর এখন ছোট, কমে আসছে জায়গা। তারপরও অনেকের বাসায় এখন গেস্টরুম থাকে। কিন্তু বাসায় তো আর আগের মতো অতিথি আসেন না বা এলেও বেশি দিন থাকেন না। তাই সেটিকেই এখন স্টাডি ইউনিট (পড়ার ঘর) হিসেবে কাজে লাগানো হয়।

গেস্টরুমের একপাশে সিঙ্গেল বেড দিয়ে পুরো ঘরজুড়ে ফুলহাইট ক্যাবিনেটের মতো করে নেওয়া যায়। মাল্টিফাংশনাল বিষয়গুলো এখন বেশি পছন্দ সবার। কারণ, সবাইকে এখন নির্দিষ্ট স্পেসকে নানাভাবে কাজে লাগাতে হয়। তার মধ্যে পড়াশোনার জন্য খানিকটা জায়গা থাকলে সেটিকেই স্টোরেজের মতো বই রাখার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাঁদের অনেক বই, তাঁরা ফুলহাইট ক্যাবিনেটের মতো স্টোর করে বই রাখেন। আর বুকশেলফে হাতের নাগালে রাখেন সেসব বই, যেগুলো নিয়মিত পড়া হয় বা প্রয়োজন হয়।

ছবি: কটব্রো, পেকজেলসডটকম

ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ফারজানা গাজী যোগ বলেন, ‘লবিতেও আমরা বই রাখতে পারি। নিজের বাসার জায়গা বুঝে চতুর্ভুজ, ত্রিভুজ বা অন্য জ্যামিতিক আকারে শেলফ করে নিয়ে বই সাজাতে পারি। শোবার ঘর বা বসার ঘরের টিভি ইউনিটের পাশে বই রাখার ব্যবস্থা করতে পারি। খাটের মাথায় পেইন্টিং করে সেখানে শেলফ করে কিছু বই স্টোর করা যায়। কম উচ্চতার বসার স্টোরেজেও কিছু বই রাখতে পারেন।

শিশুদের পড়ার বইগুলো শিশুদের ঘরেই রেখে দেওয়ার পরামর্শ এই ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের। তিনি বলেন, শিশুর ঘরে বিভিন্নভাবে শেলফ তৈরি করে তার বইগুলো রাখা যায় বা তার রিডিং ইউনিটের সঙ্গে বই রাখার ব্যবস্থা করা যায়। অনেকে শিশুর ঘরে বাঙ্ক বেড রাখেন, তার নিচের একটা স্টোরেজেও বই রাখা যায়।

ছবি: হুসেন কামালউদ্দিন, পেকজেলসডটকম

নিজস্ব লাইব্রেরিতেও আলোর ব্যাপারে বাড়তি সচেতন হতে হবে। ফারজানা গাজী বলেন, লাইব্রেরিতে দিনের আলো আসার সুযোগ থাকলে খুব ভালো। তা না হলে আর্টিফিশিয়াল আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুই ধরনের আলোর ব্যবস্থা করা যায়। যখন পড়াশোনা বা কাজ করতে হবে, তখন উজ্জ্বল আলোর দরকার হবে। আর যখন বই নিয়ে একান্ত সময় কাটানোর কথা ভাববেন, তখন হালকা আলো হলেই বরং ভালো। আবার ওয়ার্ম লাইট থাকতে পারে। পাশের জনকে বিরক্ত না করেই বই পড়ার জন্য টেবিল ল্যাম্প জ্বালানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

নিজস্ব লাইব্রেরি ঠিকঠাক রাখার জন্য জরুরি বিষয়টি হলো পরিচ্ছন্নতা। ঘরে শুধু গাদা গাদা বই রাখলেই হবে না। সেগুলো যেমন নাড়াচাড়া করতে হবে, তেমনি নিয়মিত যত্নও নিতে হবে। পুরানা পল্টনের বই বিক্রেতা উৎপল রায় বলেন, বই ঠিকঠাক রাখতে বই নিয়মিত নাড়াচাড়া করার বিকল্প নেই। কাঠের শেলফে পোকা ধরে বেশি। তাই যত্নও বেশি দরকার হয়। স্টিলের শেলফে বই বেশি ভালো থাকে।

ছবি: হুসেন কামালউদ্দিন, পেকজেলসডটকম

পুরোনো এমন কিছু বই পাওয়া যায়, যা দুর্লভ। কিন্তু গুরুত্ব বিবেচনায় একটু পোকা ধরা হলেও অনেকে কিনে নেন। এসব বইকে বড় ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করলেন এই বিক্রেতা। তাঁর মতে, ওই বই কোনো কারণে ২৫-৩০ দিন নাড়াচাড়া করা না হলে পোকা ছড়িয়ে পড়ে অন্য বইতেও। এতে পুরো লাইব্রেরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
উৎপল রায় বলেন, মাঝেমধ্যে বইগুলো রোদে দিতে যেন না ভুলি। বইয়ের ফাঁকে ফাঁকে নিমপাতাও দিতে পারেন। শেলফে বই না আঁটলে অনেকেই মেঝেতে তা রাখেন। সে ক্ষেত্রে সেটা দেয়ালের সঙ্গে লাগিয়ে রাখবেন না। তাতে বইতে ছত্রাক সংক্রমিত হবে। আর দেয়ালের গা ঘেষে রাখলে বইয়ের পাশেও দাগ পড়ে যায়।

ব্যক্তিগত লাইব্রেরি খুবই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সেই লাইব্রেরির তাকে বই রাখাটাই শেষ কথা নয়, পড়ার পাশাপাশি খানিকটা সময় বরাদ্দ রাখতে হবে বইয়ের যত্ন–আত্তিতেও।