পরিপাটি ট্রে

বাড়িতে অতিথি এলে খাবারের বিষয়টি তো গুরুত্ব পায় বটেই, সঙ্গে এর পরিবেশনটাও যাতে নান্দনিক হয়, সেদিকেও রাখতে হয় বিশেষ খেয়াল। খাবার টেবিল, খাবার রাখার পাত্র, পরিবেশনের ট্রে—সবকিছুতেই যেন নান্দনিকতার ছোঁয়া থাকে, সেদিকে সবাই বিশেষ নজর দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরিপাটি ট্রেতে খাবার পরিবেশনে বহিঃপ্রকাশ ঘটে বাড়ির লোকের আন্তরিকতা আর রুচির।

একসময় অভিজাত বাড়িতে খাবার পরিবেশন করা হতো রুপার ট্রেতে। সে ট্রের ওপর থাকত মখমলের কাপড়। রুপার ট্রেতে খাবার সাজিয়ে তা মসলিন বা ফিনফিনে পাতলা কাপড়ে ঢেকে খাবার আসত অতিথির সামনে। যাঁরা আরও শৌখিন ছিলেন, তাঁদের বাড়িতে থাকত শ্বেতপাথরে বানানো ট্রে। হাতির দাঁতের মূল্যবান ট্রে ব্যবহারেরও খবর পাওয়া যায় সেসব অভিজাত বাড়িতে।

গোছানো জীবনের অনুষঙ্গ ট্রে
ছবি: প্রথম আলো

রুপা, শ্বেতপাথর কিংবা হাতির দাঁতে বানানো ট্রে এখন দুর্মূল্য। মাঝখানে দীর্ঘদিন কাঁসার ট্রে ব্যবহারের ট্রেন্ড দেখা গেছে। দেখা গেছে ইস্পাত কিংবা অ্যালুমিনিয়ামের ট্রের ব্যবহার। বিভিন্ন ধাতুতে বানানো এসব নকশাদার ট্রেতে প্রকাশ পেত আভিজাত্য। এরপর মেলামাইন আর প্লাস্টিক একসময় জায়গা করে নেয় ট্রের বাজার।

এদিকে বাঁশ আর বেতের ব্যবহার তত দিনে গ্রাম ছাড়িয়ে শহরে প্রবেশ করেছে। নগরজীবনে এসব উপাদানে তৈরি ট্রে নিয়ে আসে আড়ং, সেখানে কখনো নারকেলের মালা, কখনো কাঠ আবার কোনোটায় পেইন্টিংয়ের ব্যবহার যোগ করে বৈচিত্র্য। কোনো কোনো ট্রে তৈরি হয় এমনভাবে, যেখানে আলাদা করে খাবার পরিবেশনের পাত্রের প্রয়োজন পড়ে না। বরং নকশা আর আকারের কারণে ট্রেটি যেন হয়ে ওঠে পরিবেশনের পাত্র।

চিত্রিত ট্রে এখনকার ট্রেন্ড
ছবি: প্রথম আলো

নগরজীবনে পটচিত্র আর রিকশা পেইন্টিংয়ের গল্প নিয়ে ট্রে বানানো শুরু করে যাত্রা। শুধু খাবার পরিবেশনের জন্যই নয়, এসব ট্রে যেন হয়ে উঠে লোকজ শিল্পের স্মারক। পাটের তৈরি ট্রেও এ সময়ে এসে পায় জনপ্রিয়তা। এ ছাড়া কাঠের ওপর খোদাইয়ের নকশার ট্রেও এখন চলছে বেশ। নিউমার্কেট, গুলশান–১–এর ডিসিসি মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের ‘অন্য কিছু’ দোকানটিতে পাবেন কাঠে খোদাই করে নকশা এঁকে তৈরি করা এসব ট্রে। খেজুরপাতা আর হোগলার পাতা দিয়েও তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ট্রে। পাবেন মোহাম্মদপুরের সোর্সে।

বৈচিত্র্যময় ট্রে কেনা যাবে বিভিন্ন দোকানে
ছবি: প্রথম আলো

গোলাকার, ত্রিভুজসহ বিভিন্ন আকৃতির ট্রে মিলবে এসব দোকানে। এদিকে ট্রেতে শুধু খাবার পরিবেশন করলেই চলবে না, পাশাপাশি কোন খাবারে কোন ট্রে ব্যবহার করবেন, সে বিষয়েও খেয়াল রাখার পরামর্শ দিলেন রন্ধনশিল্পী সিতারা ফিরদৌস। যেমন বিকেলের স্ন্যাক্স বা নাশতার পরিবেশনায় বেত বা বাঁশের ট্রে বেশি ভালো লাগবে। ভারী খাবার পরিবেশনায় বেছে নিতে পারেন কাঠের জমকালো নকশার ট্রে। ছোট ছোট পাত্রে খাবার পরিবেশনের জন্য বেছে নিতে নকশাদার ট্রে।

এটিও এক ধরেনর ট্রে
ছবি: প্রথম আলো

যখন বাজারজুড়ে এত বৈচিত্র্যময় নকশার ট্রের সমাহার ছিল না, তখন কিন্তু পারিবারিক বনেদিয়ানা বোঝাতে ট্রের ওপর হাতের কাজের কাপড় বিছিয়ে দিতেন অনেকে। আবার কারও বাড়িতে ট্রেতে করে খাবার পাঠানোর সময় খাবারের ওপর দিয়ে দেওয়া হতো রঙিন নকশার কাপড়। এখন অবশ্য তেমনটা না দেখা গেলেও ট্রেতে খাবার পরিবেশনার সময় অনেকেই কিছু নান্দনিক অনুষঙ্গ যোগ করে থাকেন। খাবার পরিবেশনের সময় ট্রেতে জুড়ে দেন মোম, পানিতে ফুল বা গাছ। এসব তো আছেই, তবে ট্রেতে খাবার পরিবেশনের সময় পরিবেশনার পাত্রগুলো যাতে ট্রের নকশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখাটা বিশেষ জরুরি বলে জানান রন্ধনবিদ সিতারা ফিরদৌস।