বারান্দায় রোদ্দুর

বারান্দা শব্দটি কানে এলেই কিছুটা প্রশান্তি ছড়ায় মনে। ঋতুভেদে সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা বা রাত—প্রতিটি সময়ের সঙ্গে বারান্দার রয়েছে সুখস্মৃতি। শীতের রোদমাখা দুপুর, বসন্তের বিকেল, গ্রীষ্মের রাত অথবা বর্ষার মুষলধারা বৃষ্টির মুহূর্তগুলো প্রিয়জনের সঙ্গে বা একা উপভোগ করার সবচেয়ে একান্ত জায়গা এটি।

ছবি: আনস্প্ল্যাশ

আবার অনেকেই বলবে শহুরে জীবনের একটুখানি খোলা আকাশের সন্ধান পাওয়া যায় এই বারান্দায়। তাই তো মনের মতো ফ্ল্যাট খুঁজতে গিয়ে সবাই প্রথমেই প্রাধান্য দেন বাড়ির এই অংশের প্রতি। এমনকি অনেকের কাছে শোবার ঘরের চেয়ে বারান্দা যেন বেশি জরুরি। তাই হয়তো বলতে শোনা যায়, আর কিছু থাকুক না থাকুক, বাড়ির যেকোনো অংশে এক চিলতে বারান্দা থাকা চাই-ই চাই। কারণ, শখের বারান্দায় রাখা আরামকেদারায় পিঠ এলিয়ে কিছুটা সময় কাটানো যায় একেবারে নিজের মতো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বারান্দার কাঠামো এবং চেহারায় আমূল পরিবর্তন এসেছে।

পুরোনো দিনের বাড়িগুলোতে দেখা যেত কাঠের নকশা করা রেলিংয়ে ঘেরা লম্বা, বড় পরিসরে খোলামেলা বারান্দা, যা আজকাল আর চোখে পড়ে না খুব একটা। সে জায়গা দখল করেছে ব্যালকনি। কারণ, আধুনিক ফ্ল্যাটগুলোতে মনের মতো আয়তনে বারান্দা তৈরি করার স্বাধীনতা নেই। কারণ, বাড়ির আয়তনের সঙ্গে সঙ্গে ছোট হয়ে এসেছে বারান্দার পরিসরও। নামে এসেছে পরিবর্তন, সঙ্গে সাজসজ্জাতেও।

ছবি: আলপনা চৌধুরী

শহরে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের কর্মব্যস্ততা আর সময়ের অভাবে ব্যালকনিগুলো অনেকটাই অবহেলিত। কিন্তু লক্ষ করলে দেখা যাবে, সাধারণত বারান্দা বা ব্যালকনি বাড়ির সামনের দিকেই থাকে। সুতরাং, বাইরে থেকে দেখতে গেলে কিন্তু বারান্দা সবার আগে নজর আসে। তাই যত্ন নিয়ে মনের মতো সাজানো উচিত জায়গাটি। আবার অনেক কম সময়ের মধ্যেই জায়গাটির পুরো চেহারা পাল্টে ফেলা সম্ভব। শুধু পছন্দমতো আসবাব এবং এক্সেসরিজ নির্বাচন করা চাই।

বারান্দা সাজাতে প্রথমেই প্রয়োজন ছোট ছোট টবে রঙিন ফুল বা পাতারগাছ। পাতাবাহার, মানিপ্ল্যান্ট, ফরচুন ট্রি, বনসাই ইত্যাদি জায়গাটির শোভা বাড়াবে। আজকাল ঝোলানো টব বা পট পাওয়া যায়। এগুলোও দেখতে সুন্দর। যাঁরা মাটি বা প্লাস্টিকের টব পছন্দ করেন না, তাঁরা চিরাচরিত টবের পরিবর্তে সিরামিক, তামা, পিতল বা ক্লের তৈরি টব রাখতে পারেন। প্রাকৃতিক লুক আনতে চাইলে বারান্দার গ্রিল বা পিলার বরাবর লতানো গাছ দিয়েও সাজানো যায়। এতে বারান্দায় সবুজের পরিমাণও বাড়বে।

ছবি: পেকজেলসডটকম

ঝোলানো শোপিস বা উইন্ডচাইমসও রাখা যেতে পারে। বই, খবরের কাগজ বা ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যাস থাকলে রাখতে পারেন ছোট কাপবোর্ড। এতেও বারান্দার সৌন্দর্য বাড়বে। কাপবোর্ডের ওপরে ছোট ক্যান্ডেল বোল রাখলেও অনেক পরিপাটি লাগবে। বোলের ভেতর ছোট ছোট রঙিন পাথর, ফুল আর পানি রাখুন। সন্ধ্যাবেলা মোম জ্বালালে, বারান্দাময় একটা উষ্ণ আবহ তৈরি হয়। কাপবোর্ডের ওপর ফোটো ফ্রেমও মানায়।

বারান্দায় বসার ব্যবস্থা থকাতেই হবে। তবে তা হতে হবে আয়তন ও জায়গা বুঝে। যেমন ছোট বারান্দার ক্ষেত্রে কয়েকটা বেতের মোড়া বা কাঠের টুল রাখলেই যথেষ্ট। অনেকে গাছের গুঁড়ি রং করেও রাখে। জায়গায় বেশি থাকলে একটা ছোট সেন্টার টেবলও রাখা যেতে পারে। আর ব্যালকনি বড় হলে সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট হতে হবে সঠিক। নাহলে এলোমেলো দেখাবে। বেতের সোফা সবচেয়ে নান্দনিক। অবশ্য লোহা বা কাঠ পছন্দ হলে, এসবের আসবাবও রাখা যেতে পারে। সঙ্গে রাখুন মাঝারি আকারের কয়েকটা কুশন। একটু উজ্জ্বল বা আধুনিক কুশন কভার বাছাই করুন। এতে সহজেই ব্যালকনির আমেজে বেশ বড়সড় পরিবর্তন আসে। বড় ব্যালকনিতে রাখা যায় দোলনা। চাইলে এর বদলে আরামকেদারা বা সুইং চেয়ারও রাখা যায়।

ছবি: প্রথম আলো

ব্যালকনির সাজ নির্ভর করে রুচি এবং সময়ের ওপর। অর্থাৎ, আপনি কতটা সময় এবং কীভাবে বারান্দায় সময় কাটাবেন, সে অনুযায়ী আসবাব নির্বাচন করুন। যদি আপনি বারান্দায় বসে গান শুনতে বা বই পড়তে পছন্দ করেন। তবে সে ক্ষেত্রে দেয়ালজুড়ে কাঠের র‌্যাক বানিয়ে তাতে পছন্দের বই এবং মিউজিক সিস্টেমও রাখতে পারেন। অযথা ধুলার হাত থেকে বাঁচতে হলে র‌্যাকগুলো ঢেকে রাখাই ভালো। আবার বারান্দা খোলা হলে, রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচতে স্লাইডিং বা ফ্রেঞ্চ ডোরের ব্যবস্থাও রাখতে পারেন। আবার নান্দনিক উপস্থাপনায় বাঁশের ড্র-স্ট্রিং পর্দাও বেশ ভালো। তবে যেভাবেই সাজান না কেন, খেয়াল রাখতে হবে বারান্দা যেন খোলামেলাই থাকে। কোনোভাবেই একে আবদ্ধ করে রাখা উচিত হবে না।