ইমোশনাল অ্যাবিউজের মাধ্যমে শিশুর যে ক্ষতি করেন বড়রা

শিশুর মানসিক বিকাশে বাধা হতে পারে মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতনমডেল: ভুবন ও বর্ণ। ছবি: কবির হোসেন

ছোট একটি বাক্য একজন মানুষকে ভেতর থেকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। লাঠি বা পাথর মানুষের হাড় ভেঙে ফেলতে পারে; কিন্তু কথা দিয়ে মানুষের মনোবল ভেঙে ফেলা সম্ভব। আর কারও আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেওয়া শারীরিক আঘাতের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এ ধরনের মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতন (ইমোশনাল অ্যাবিউজ) শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় ব্যাঘাত ঘটায়।

সাধারণত একজন ব্যক্তি আরেকজনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা থেকে ইমোশনাল অ্যাবিউজ করে। অনেক পরিবারে বড়দের দ্বারা এমন আচরণের শিকার হয় শিশুরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতন শারীরিক নির্যাতনের মতোই ভয়াবহ। ছোটবেলার এসব মানসিক নির্যাতন শিশুর বিকাশে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের প্রভাবই ফেলতে পারে।

শাসন যখন মানসিক নির্যাতন

শিশুকে হেয় করে কথা বললে নিজের শক্তি আবিষ্কারের বদলে সারাক্ষণ সে হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকে
প্রতীকী ছবি: কবির হোসেন

সন্তান বড় করতে গিয়ে মা–বাবারা অনেক ধরনের নিয়ম বেঁধে দেন। অনেক অভিভাবক মনে করেন, এতে শিশুদের ভালো হবে। কঠোর ভালোবাসা এসব বেঁধে দেওয়া নিয়মের অন্যতম। কিন্তু এ পদ্ধতিটি শিশুদের ভালো তো করেই না, বরং তার মধ্যে হীনম্মন্যতা, ভয় এবং নিজের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি করে। অনেক সময় দেখা যায়, মা–বাবা তাঁদের সন্তানকে নিয়মিত কারও সঙ্গে তুলনা করছেন। সন্তানকে অযোগ্য কিংবা কিছুই পারে না বলে বারবার তিরস্কার করলে শিশুটির মধ্যে একধরনের বিশ্বাস গড়ে ওঠে যে আসলেই সে কিছু পারে না, তাকে দিয়ে কিছুই হবে না। নিজের শক্তি আবিষ্কারের বদলে সারাক্ষণ সে হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকে। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো অনেক অভিভাবক এ ধরনের নির্যাতনকে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য মনে করেন। নিজের অস্বাভাবিক আচরণকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে অনেকে শিশুর সামনে ব্যাখ্যা হাজির করেন। অভিভাবকেরা আবার যখন ‘আমি তোমার ভালোর জন্যই করছি’ বলে নিজের কাজকে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, সেটা শিশুর ওপর চাপ তৈরি করে। আবেগজনিত নির্যাতন একটি শিশুকে তার সুস্থ ও স্বাভাবিক ব্যবহার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে।

আরও পড়ুন

মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতনের দীর্ঘ প্রভাব

মানুষ স্বভাবতই নেতিবাচক অভিজ্ঞতাকে মনে রাখে বেশি। শৈশবে পাওয়া মৌখিক আঘাতে বড়বেলায়ও ভুগতে পারে শিশু। দীর্ঘদিন ধরে একই কথা শোনার ফলে শিশুদের মনে কথাগুলো পাকাপাকিভাবে গেঁথে যায়। একটি এমআরআই পরীক্ষায় পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মা–বাবার অবমাননাকর বা নির্যাতনমূলক কথাবার্তা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশপ্রক্রিয়াই বদলে দিতে পারে। তারা এই নেতিবাচক কথাগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করে এবং ভুলভাবে মানিয়ে নেওয়ার কৌশল রপ্ত করে। ফলে নিজের অজান্তেই তারা অন্যদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন প্রয়োগ করে। যারা শৈশবে মানসিক বা আবেগজনিত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও তাঁরা উদ্বেগ, হতাশা, আত্মসম্মানের ঘাটতিতে ভোগেন। একই সঙ্গে এমন মানুষেরা স্বাস্থ্যকর ও স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে দ্বিধায় ভোগেন।

সূত্র: ফিজিওলজি টুডে

আরও পড়ুন