আমেরিকান ও ব্রিটিশ ইংলিশের মধ্যে এত পার্থক্য কেন?

ব্রিটিশ ও আমেরিকান অভিধানের মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

ছোটবেলায় ইংরেজি ‘কালার’ শব্দের বানান নিয়ে সমস্যায় পড়েননি, এমন মানুষ কমই আছে। ‘কালার’ শব্দে ‘ইউ’ আছে নাকি নেই, সেই প্রশ্নের উত্তর ছিল একেকজনের কাছে একেক রকম। কেউ বলতেন আছে, কেউ বলতেন নেই; কেউ আবার বলতেন, দুটোই ঠিক। একটি শব্দের দুই বানান কীভাবে ঠিক হয়, সেই প্রশ্নও ঘুরে বেড়াত অনেকের মনে। এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে সামুয়েল জনসন আর নোয়া ওয়েবস্টার নামক দুই অভিধানকারের কাছে।

আরও পড়ুন

বানানের ব্যাপারে শুরুতে ইংরেজি ছিল ভীষণ উদাসীন। দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতকের দিকে নিয়মিতই একটি শব্দের বানানের পরিবর্তন হতো। একই শব্দ একেক শতাব্দীতে একেকভাবে উচ্চারিত হচ্ছে, এমনটাও অহরহই হতো। বলতে গেলে যে বানানে সাধারণ মানুষ সহজে অর্থ বুঝতে পারত, সেই বানানই প্রচলিত হয়ে যেত লোকমুখে। নির্দিষ্ট কোনো শব্দভাণ্ডার ইংরেজিতে ছিল না। গড়ে তোলার দুই একটা চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু কোনোটাই পূর্ণাঙ্গ ছিল না।

সমস্যার সমাধান করতে এগিয়ে এলেন বিখ্যাত ইংরেজ মনীষী স্যামুয়েল জনসন। ১৭৪৬ সালে প্রথমবারের মতো ইংরেজি ভাষার শব্দভাণ্ডার তৈরির কাজে মনোযোগ দিলেন জনসন। ১৫০০ স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে প্রকাশকদের প্রতিশ্রুতি দিলেন, তিন বছরের মধ্যেই ইংরেজি ভাষার পূর্ণাঙ্গ শব্দভাণ্ডার গড়ে তুলবেন তিনি। যেখানে ফরাসি পণ্ডিতদের কাজটা করতে লেগেছিল ৪০ বছর। নিজের বিশাল লাইব্রেরি, ধার করে আনা বইপত্র, নথিপত্র ঘেঁটে ডিকশনারি তৈরিতে মনোযোগ দিলেন জনসন। অর্থসহ প্রতিটি শব্দের উচ্চারণ টুকে রাখা শুরু করলেন। যখন একই শব্দের দুটি রূপ পেতেন, নিজের বিবেচনায় ঠিক করতেন কোনটি হবে সঠিক বানান।

১৫০০ স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে ৩ বছরের মধ্যে অভিধান সম্পূর্ণ করার ঘোষণা দেন ইংরেজ মনীষী স্যামুয়েল জনসন
ছবি: টুইটার

তবে তিন বছর না, কাজটা শেষ করতে তার লেগে যায় প্রায় ৯ বছর। শেষে ১৭৫৫ সালে ইংরেজি শব্দভাণ্ডারের একটি খসড়া তৈরি করেন জনসন। যদিও তাঁর শব্দভাণ্ডার থেকে বাদ পড়েছিল অনেক শব্দ, ভুলও ছিল বৈকি; কিন্তু তৎকালীন রাজা ও বিভিন্ন মনীষীর মতামত ও সমর্থন জনসনের পক্ষে থাকায় সহজেই তা হয়ে উঠে সবচেয়ে প্রচলিত ইংরেজি অভিধান। কেউ কেউ আপত্তি করলেও ধোপে টেকেনি তাদের প্রতিবাদ। আস্তে আস্তে সবাই জনসনের ডিকশনারির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে শুরু করে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। একসময় এটাই হয়ে ওঠে ইংরেজি ভাষার প্রধান অভিধান।

সমস্যার সূচনা হয় উনিশ শতকের শুরুর দিকে, যখন আমেরিকান স্কলার নোয়াহ ওয়েবস্টার নিজের দেশের জন্য আরেকটি শব্দভাণ্ডার তৈরি করতে চাইলেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল মূলত দুটো। প্রথমত তিনি চাইছিলেন জনসনের ডিকশনারির থেকে আরও ভালো এবং সমৃদ্ধ একটি ডিকশনারি। আর আমেরিকানদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা একটা শব্দভাণ্ডার। একেবারে শূন্য থেকে শব্দভাণ্ডার তৈরির কাজ শুরু করেন ওয়েবস্টার।

নতুন অভিধানের কাজ শুরু করেন আমেরিকান মনীষী নোয়াহ ওয়েবস্টার
ছবি: টুইটার

১৮০৬ সালে প্রথম একটি খসড়া তৈরি করেন ওয়েবস্টার। আর দুই দশকেরও বেশি পরিশ্রমের শেষে ১৮২৮ সালে ৭০ হাজার শব্দ নিয়ে প্রকাশ পেল ওয়েবস্টারের ডিকশনারি। তারপর থেকেই আবার নতুন করে শুরু হয় বানান–বিভ্রাট। যেমন Colour থেকে Color, Customise থেকে Customize, Metre থেকে Meter; এরকম ছোট ছোট বহু পরিবর্তন নিয়ে আসেন ওয়েবস্টার। শুধু পরিবর্তন করেই থেমে থাকেননি, বরং প্রতিটি পরিবর্তনের পেছনের কারণ এবং নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করেছেন। ওয়েবস্টারের পরিবর্তনগুলো কিন্তু তার নিজের চাপিয়ে দেওয়া না, বরং আমেরিকায় প্রচলিত বানান থেকেই পরিবর্তনগুলো তুলে এনেছেন তিনি।

জনসন যেখানে আশেপাশের বই, নথি থেকে বানান নিয়ে শব্দভাণ্ডার তৈরি করেছেন, সেখানে ওয়েবস্টার প্রাধান্য দিয়েছেন সাধারণ মানুষের বলা এবং শোনার ওপর। চেয়েছেন বানানকে যতটা সহজ করে তোলা যায়। ওয়েবস্টারের ইচ্ছে ছিল এমন একটা শব্দভাণ্ডার তৈরি করা, যা শুধু শিক্ষিত স্কলারই না, সাধারণ মানুষদের কথাও ভাববে। তাঁর ইচ্ছে ছিল আমেরিকার জন্য আলাদা একটি স্বতন্ত্র শব্দভাণ্ডার তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া।

আঁতে ঘা লাগায় ওয়েবস্টারের ডিকশনারিকে মেনে নেয়নি ব্রিটিশরা। তাঁদের কাছে এখনো সমাদৃত অক্সফোর্ড ডিকশনারি। ব্রিটিশশাসিত দেশগুলোতে এখনো ব্রিটিশ অক্সফোর্ড ডিকশনারিই মান্য। বেশ কিছু দেশ অবশ্য আস্তে আস্তে আমেরিকান ইংলিশের দিকেও ঝুঁকছে।

সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই প্রায় দুই শতক ধরে নিয়মিত সংশোধন করা হচ্ছে ওয়েবস্টার ডিকশনারি। বর্তমানে প্রচলিত ম্যারিয়াম-ওয়েবস্টার ডিকশনারি ওয়েবস্টারের স্বপ্নেরই বাস্তব প্রতিফলন।