সন্তোষ রবিদাসের লড়াকু মা

সন্তোষ রবিদাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ফাঁড়ি কানিহাটি চা-বাগানে তাঁদের বাড়ি। বাগানটা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগরে। সম্প্রতি মা কমলি রবিদাসকে নিয়ে একটা লেখা লিখেছেন তিনি। তাঁর মায়ের লড়াইয়ের কথা পড়ে সবার মন কেঁদেছে। রবিদাসের চা–শ্রমিক মায়ের গল্প শুনলেন মুজিবুর রহমান

ছয় মাস বয়সী ছেলে আর স্ত্রীকে রেখে হঠাৎই মারা যান সত্যনারায়ণ রবিদাস। চা–শ্রমিক স্বামীকে হারিয়ে অকুল পাথারেই পড়েছিলেন কমলি রবিদাস। কীভাবে চলবেন, শিশুসন্তানকে কী খাওয়াবেন, নিজেই বা খাবেন কী—ভেবে আকূল হয়েছিলেন মা।

চা–বাগানের মানুষ তিনি। একটাই কাজ জানেন, চা–পাতা তোলা। বাগানে কাজ নিলেন। দৈনিক মজুরি ১৮ টাকা। এই সামান্য মজুরি দিয়েই ছেলের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। নিজে খেতেন চায়ে ভেজানো রুটি।

ছেলেকে নিয়ে কমলির অনেক স্বপ্ন। একদিন চা–বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন। সন্তোষ পড়াশোনায় ভালো। কিন্তু চা-বাগানের স্কুলটা তেমন ভালো না। ছেলের ইচ্ছে ভালো স্কুলে পড়া। সেই ইচ্ছে পূরণ করতে রবিদাসকে তাই ডানকান ব্রাদার্স ফাউন্ডেশনের লংলা স্কুলে ভর্তি করে দিলেন কমলি। সেখান থেকে ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেন সন্তোষ।

ছেলে সন্তোষ রবিদাসের সঙ্গে মা কমলি রবিদাস
ছবি: সংগৃহীত

ছেলে কলেজে ভর্তি হবে। অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু এত টাকা তো কমলি রবিদাসের নেই। চা–বাগানের অবস্থাসম্পন্ন পরিবার ও পড়শিদের কাছে সাহায্য চাইলেন। কিন্তু কেউ সাহায্য করল না। বাধ্য হয়ে চা–বাগানের কাজের ফাঁকে ফাঁকে মানুষের বাড়িতে কাজ করা শুরু করলেন। বালুঘাটেও দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেছেন। তাতেও যখন কুলাচ্ছিল না, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য হয়ে ঋণ নিলেন কমলি।

২০১৫ সালে শমশেরনগরের বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন সন্তোষ রবিদাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করতে যান সিলেটে। ছেলের পড়াশোনার অর্থ জোগান দিতে গিয়ে দ্বিগুণ হয় মায়ের লড়াই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে স্নাতকে ভর্তির সুযোগ পান সন্তোষ। এতদিনে মায়ের মুখে হাসি ফোটে।

সন্তোষ রবিদাস
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কিছুদিনের মধ্যে টিউশনি জোগাড় করেন সন্তোষ রবিদাস। নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই জোগাড় করেন। মাসে মাসে মাকে কিছু টাকাও পাঠান। এ বছর স্নাতকোত্তর করেছেন সন্তোষ রবিদাস।
চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন এখন। ছেলের সাফল্যে খুশি কমলি রবিদাস। এখন সুদিনের জন্য অপেক্ষা।

চা–শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলছিলেন, ‘চা–শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করা না গেলেও একটি সম্মানজনক হারে অন্তত বাড়ানো উচিত। সেই সঙ্গে চিকিৎসার সুব্যবস্থা রেখে চা–শ্রমিকদের সন্তানের লেখাপড়ার সুব্যবস্থা করে দিতে হবে। তবেই তো আমার সন্তোষ রবিদাসের মতো আরও অনেক শ্রমিক সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার
সুযোগ পাবে।’