বোনকে তাঁর ননদ খুব জ্বালায়, আইনিভাবে প্রতিকার সম্ভব?

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।

মিতি সানজানা
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: আমার ফুফাতো বোনের দুই ছেলে-মেয়ে। মেয়েটা পঞ্চম শ্রেণিতে আর ছেলেটা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। দুলাভাই একটি আধা সামরিক বাহিনীতে চাকরি করেন। একেক সময় একেক জায়গায় পোস্টিং। তাই স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারেন না। মাঝেমধ্যে ছুটিতে আসেন দুলাভাই। আমার ফুফাতো বোনের সঙ্গে থাকে তাঁর ননদ। বোনের সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করে সেই ননদ। দুলাভাই যখন থাকেন না, তখন আমার বোনকে খুব বিরক্ত করে। যেমন আমার বোনের মেয়ের জন্য স্কুলে যে টিফিন দেবে, তার মেয়েকেও সেই টিফিন দিতে হবে। বোনের মেয়েকে যদি কোনো খেলনা কিনে দেয়, তাহলে ননদের মেয়েকেও দিতে হবে। সব সময় সেটা সম্ভব না হলেও জোর করে কেনাতে বাধ্য করে। না দিতে চাইলে বোনের মেয়েরটা কেড়ে নেয়। এই বিষয়ে কী কোনো আইনি প্রতিকার পাওয়া সম্ভব?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার বোনের ননদ তাঁর সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করছেন, আমার কাছে তা মানসিক নির্যাতন বা অস্বাভাবিক কোনো আচরণ মনে হচ্ছে না। একসঙ্গে বসবাস করলে এ ধরনের ছোটখাটো মনোমালিন্য হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। শিশুরা একসঙ্গে খেলাধুলা করলে তাদের মধ্যে কান্নাকাটি এবং ঝগড়া–বিবাদ হওয়াটাও সাধারণ বিষয়। এটি শিশুর বেড়ে ওঠার একটি প্রক্রিয়া। এখানে অভিভাবকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ না করাই ভালো। আমার মনে হয় না এ ধরনের দৈনন্দিন ছোটখাটো বিষয় মানসিক নির্যাতন হিসেবে বাংলাদেশের আইনে পারিবারিক সহিংসতার আওতাভুক্ত হবে।

পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তি কতৃর্ক পরিবারের অপর কোনো নারী বা শিশু সদস্যের ওপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝাবে। এই আইন অনুযায়ী মৌখিক নির্যাতন, অপমান, অবজ্ঞা, ভয় দেখানো ইত্যাদি আচরণ পারিবারিক সহিংসতা হিসেবে গণ্য করা হবে। এ ছাড়া হয়রানি, ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ; অর্থাৎ স্বাভাবিক চলাচল, যোগাযোগ বা ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা মতামত প্রকাশে বাধা দেওয়া, কথা শোনানো, পুরুষতান্ত্রিক আচরণ দিয়ে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা, সন্দেহ করা এগুলোও সহিংসতার আওতাভুক্ত হবে।

জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ–১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ–১৯৮৯–এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সম–অধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ, পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ প্রণীত হয়েছে।

আরও পড়ুন

পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন–২০১০-এ প্রথমবারের মতো মানসিক নির্যাতনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা, ২০১৩ প্রণীত হয়েছে। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯তে বলা হয়েছে, মানসিকভাবে একজন নারীকে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত করলে তা পারিবারিক সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত হবে। একজন শিশু বা নারী, যিনি পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে পরিবারের অপর কোনো সদস্য কতৃর্ক পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন বা সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, তিনি দেশের আইন অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারবেন।

যেকোনো কিছু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মতো অভ্যাস পারিবারিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করে। এ ধরনের অভ্যাস পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করে। যেহেতু তিনি যৌথ পরিবারে বাস করেন, তাই পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং মানিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা থাকা জরুরি। আমি মনে করি, আপনার বোনের অভিযোগটি যথাযথ নয়। আইনের আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো বিষয় এটি নয়। তিনি পারিবারিকভাবে আলোচনা করেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।

ই–মেইল ঠিকানা: [email protected]

(সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা–১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA

আরও পড়ুন