ইউআইইউর ফার্মেসি বিভাগের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক পুরস্কারজয়ী তাহমিনা
‘অর্গানাইজেশন ফর উইমেন ইন সায়েন্স ফর দ্য ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড’, সংক্ষেপে ওডব্লিউএসডি। পেশাজীবনের প্রারম্ভে থাকা নারীবিজ্ঞানীদের ফেলোশিপ দেয় ইউনেসকোর অধীন এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। ২০২৪ সালে ওডব্লিউএসডি ফেলোশিপ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের তাহমিনা ফয়েজ। তিনি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) ফার্মেসি বিভাগের প্রধান।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর সম্ভাবনাময় নারী গবেষকদের অনুপ্রাণিত করতে ফেলোশিপ দেয় ওডব্লিউএসডি। গত বছর ১৩টি দেশের ১৫ জন নারী ফেলোশিপ পেয়েছিলেন, তাঁদেরই একজন তাহমিনা। তিনি মূলত হাইড্রোজেল প্রযুক্তির মাধ্যমে ত্বকের ক্ষত সারানোর উপায় নিয়ে গবেষণা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের এই স্নাতক জাপানের নাগোয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন। পোস্টডক্টোরাল গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনাতে। তাঁর গবেষণার প্রধান ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে মলিকুলার বায়োলজি ও ড্রাগ ডেলিভারি সিস্টেমে ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার।
অভিজ্ঞ এই গবেষকের হাত ধরেই ইউআইইউতে ফার্মেসি বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ২০২৩ সালে। একটি বিভাগ সাজানোর এই সুযোগ কীভাবে কাজে লাগাচ্ছেন তাহমিনা, কীভাবে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, এসব প্রসঙ্গেই তাঁর সঙ্গে কথা হলো। তাহমিনা বলেন, ‘অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় একদিকে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়, অন্যদিকে বিভাগের ল্যাব বা অবকাঠামো তৈরির প্রস্তুতি চলে। ইউআইইউ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ফার্মেসি কাউন্সিলের চাহিদা অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ ল্যাব ও সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করে তারপরই আমরা ভর্তি কার্যক্রম শুরু করি। এখন বিভিন্ন সেমিস্টারে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী আছে।’
ইউআইইউর এই সহযোগী অধ্যাপক জানালেন, তাঁদের বিভাগে ইনঅর্গানিক ও অর্গানিক ফার্মেসি ল্যাব, ফিজিওলজি ও ফার্মাকোলজি ল্যাব, মলিকুলার বায়োলজি ল্যাব, সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাব, অ্যানিমেল রিসার্চ ফ্যাসিলিটি ও মেডিসিনাল প্ল্যান্ট গার্ডেনসহ মোট ৮টি গবেষণাগার আছে। ৭২০ বর্গফুটের একেকটি গবেষণাগারে একসঙ্গে ২৫ জন শিক্ষার্থী কাজ করতে পারেন। তাঁদের কাজের জন্য আছে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক উপাদান। যেমন ফ্লোরোসেন্স মাইক্রোস্কোপ, হাই পারফরম্যান্স লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফি, পিসিআর মেশিন, জেল ডকুমেন্টেশন সিস্টেম ইত্যাদি। প্রতিটি ল্যাবে নিরাপত্তা ও মান বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
তাহমিনা বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গিয়ে বলতে পারে—এই যন্ত্র আমরা ব্যবহার করেছি, এ ধরনের ল্যাবে আমরা কাজ করেছি—সেই প্রস্তুতিটা আমরা এখানে দিতে চাই। আমরা চাই, ব্যবহারিক কোর্সের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষকদের সঙ্গে কাজ করে শেখার সুযোগ পায়। গবেষণার এই অভিজ্ঞতা তাদের পথকে সহজ করবে।’
তাহমিনা ও তাঁর সহকর্মীরা বর্তমানে ক্যাম্পাসের গবেষণাগারে নিজেদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সহায়তা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ (আইএআর) এবং ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ, ইনোভেশন, ইনকিউবেশন অ্যান্ড কমার্শিয়ালাইজেশন (আইআরআইআইসি)।
তাহমিনা ফয়েজ বলেন, ‘শুধু ফার্মেসিতেই নয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগেই গবেষণার একটা পরিবেশ আছে। এখানে সব সময় গবেষণাকে উৎসাহ দেওয়া হয়। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করি। আবার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করেও গবেষণা করি। কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে এক হয়ে এআই–সংক্রান্ত কয়েকটা গবেষণার প্রস্তাব যেমন জমা দেওয়া আছে। ফার্মেসি বিভাগ তো তুলনামূলক নতুন। আমি আশা করব, গবেষণার এই সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কিংবা নিজস্ব প্রকল্পে গবেষণার কাজ শুরু করবে। ওষুধশিল্পে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও আমাদের এমওইউর (সমঝোতা স্মারক) পরিকল্পনা আছে। ইন্টার্নশিপ বা গবেষণার ক্ষেত্রে হয়তো আগামী বছর থেকে আমরা একযোগে কাজ শুরু করতে পারব।’